Select Page
২০২২-১১-০৫
স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা

স্তন ক্যান্সার

নারীদেহের নানা রকম ক্যান্সার এর মধ্যে এটি একটি মারাত্মক ক্যান্সার। আমাদের দেহের উপরিভাগের সামনের অংশে স্তনদ্বয় অবস্থিত। স্তনের ক্যান্সারকেই আমরা স্তন ক্যান্সার বলি। ক্যান্সার কথা শুনলেই মনে আতঙ্ক জাগে। কিন্তু যখন দেখি যে স্তন ক্যান্সারই হচ্ছে সারা বিশ্বে মহিলাদের মৃত্যুর দ্বিতীয় অন্যতম কারণ, তখন মনে হয় এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন হওয়া মানে স্তন সম্পর্কে সচেতন হওয়া।

আমরা কি কখনো ভালভাবে আমাদের স্তনগুলিকে দেখেছি? এটা তো আমাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতই অঙ্গ বিশেষ। খুব সহজেই গোসল করা বা কাপড় পরার সময় আমরা আমাদের স্তনদ্বয়কে ভালভাবে লক্ষ্য করতে পারে। আমরা নিজেদের স্তনের গঠন ও গড়ন সম্পর্কে পরিচিত হতে পারে।

স্বাভাবিক অবস্থায় স্তন নরম ও দলাহীন হয়। তবে মাসিকের পূর্বের দিনগুলিতে স্তন কিছুটা সংবেদনশীল অনুভূত হয় অর্থাৎ টন টনে ভাব বা শক্ত ভাব অথবা ফোলা ফোলা ভাব হয়। স্তনের মাঝে বিভিন্ন পরিবর্তনের হাজারো কারণ থাকতে পারে। বেশীরভাগ পরিবর্তনই ক্ষতিকারক নয়, তবে সবগুলিরই পরীক্ষা করা উচিৎ; কারণ, এর যে কোন একটাই হতে পারে স্তন ক্যান্সারের প্রথম লক্ষণ। স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে আমরা নিজেরাই নিজেদের স্তন পরীক্ষা করে দেখতে পারি।

কিভাবে নিজেদের নিজে পরীক্ষা করব (Self examination):

১. গোসলের সময় – গোসলের সময় স্তন পরীক্ষা করুন। ভিজা চামড়ার উপর দিয়ে ধীরে ধীরে হাত দিন। আঙ্গুল চিত্রের মত চেপ্টা করে স্তনের উপর দিয়ে এদিকে ওদিকে চালনা করুন। বাম দিকের স্তন পরীক্ষা করার জন্য ডান হাত এবং ডান দিকের স্তন পরীক্ষা করার জন্য বাম হাত ব্যবহার করুন। দেখুন কোন lump বা দলা অথবা শক্ত গিট্টুর মত কিছু সনাক্ত হয় কিনা।

২. আয়নার সামনে – আয়নার সামনে দঁড়িয়ে নিজের স্তনকে লক্ষ্য করুন। প্রথমে হাত দু’পাশে থাকবে, তারপর হাত দু’টো সোজা করে মাথার উপরে তুলুন। এবার সতর্কভাবে লক্ষ্য করুন স্তনের আকার-এর কোন পরিবর্তন চোখে পড়ে কিনা। দেখুন স্তনবৃত্ত বা অন্য কোন অংশ ফুলে গেছে কিনা কিংবা কোন অংশ লালচে ভাব বা গোল পড়া আছে কিনা।
এবারে কোমরে হাত দিন এবং কোমরে চাপ দিন। এখন ডাক এবং বাম স্তনকে ভাল করে দেখুন। যদিও খুব কম মহিলারাই দুটি স্তন দেখতে একই রকম হয়, তবুও প্রতিনিয়ত এই পরীক্ষার সাধ্যমে আপনি বুঝে যাবেন আপনার জন্য কোনটা স্বাভাবিক।

৩. মাটিতে শুয়ে- মাটিতে চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। আপনার ডান স্তন পরীক্ষা করার জন্য ডান দিকে ঘাঁড়ের নীচে একটা বালিশ অথবা ভাঁজ করা পাপড় দিন। এরপর ডান হাত মাথার পিছনে রাখুন। এবার বাম হাতের আঙ্গুলগুলি চেপ্টা করে ডান স্তনের উপর রাখুন। ঘরির কাঁটার গতি অনুসরণ করে আপনার হাত ঘুরাতে শুরু করুন। সবচেয়ে উপরের জায়গাটাকে ১২টা করে চক্রাকারে তাহ ১টার দিকে নিয়ে আসুন। মনে রাখতে হবে স্তনের নীচের অংশ কিছুটা শক্তমনে হতে পারে। এটা স্বাভাবিক। সম্পূর্ণ ঘুরে আসার পর স্তন বৃন্তের (nipple) দিকে এগিয়ে যাবেন। এক ইঞ্চি অগ্রসর হবার পর একইভাবে পুনরায় স্তনকে পরীক্ষা করুন।

সবশেষে স্তন বৃন্তকে পাশের চিত্রের মত করে বৃদ্ধাঙ্গুল ও তর্জনী আঙ্গুলের মধ্যে ধরে চাপ দিতে হবে। লক্ষ্য করুন কোন রকমের নিঃসরণ হচ্ছে কিনা, সেটা রক্ত জাতীয় বা স্বচ্ছ যেমনই হোক, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রতিবার মাসিক শেষ হবার ২/৩ দিন পর নিজেকে নিজে পরীক্ষা করা আমাদের সবারই একান্ত কর্তব্য। যাদের মাসিক বন্ধ হযে গেছে তারা মাসের যে কোন একটা নির্দিষ্ট দিন বেছে নিয়ে প্রতি মাসে নিজেকে নিজে পরীক্ষা করবেন। তবে সবারই যে স্তন ক্যান্সার হবার সম্ভবনা সমান তা নয়। যাদের এই ক্যান্সারের ঝুকিঁ বেশী, তারা হলেন:

১) যাদের বয়স ৪০ এর উর্ধ্বে।
২) যাদের Menopause বা মাসিক বন্ধ হতে দেরি হচ্ছে।
৩) যারা নিঃসন্তান।
৪) যাদের ইতোমধ্যে স্তনে দলা বা লাম্প আছে (Fibrocystic disease)
৫) যারা এষ্ট্রোজেন জাতীয় হরমোন ব্যবহার করেন। এখানে বলতে হয় যে, কোন কোন জন্ম নিয়ন্ত্রণ বাড়িতে এই হরমোন আছে। সেজন্য বড়ি কেনার সময় প্যাকেটের উপরে এই হরমোন আছে কিনা তা দেখে কিনতে হবে।
৬) যাদের স্তনের ও বুকের অনেক এক্সরে করা হয়েছে।
৭) যাদের পরিবারের মধ্যে কোন নিকট আত্মীয় যেমন-মা, বোন, এদের কারো স্তন ক্যান্সার হয়েছে; তা’হলে তাদের এই ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা রয়ে যায়। যদিও তার শতকরা হার নগন্য।
৮) যারা সন্তান প্রসব কারার পর বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াননি।

প্রকৃত পক্ষে স্তন ক্যান্সার কেন হয় তা সঠিক কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আমাদের জানা নেই। তবে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে নবজাককে বুকের দুধ খাওয়ালে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

স্তন ক্যান্সার হবার ঝুঁকি থাকুক বা নাই থাকুক, নিজেকে নিজে পরীক্ষা কারার মাধ্যমে আমরা স্তনের বিভিন্ন সমস্যা সনাক্ত করতে পারি। আসলে স্তন ক্যান্সার ছাড়াও স্তনের অন্যান্য বিভিন্ন রোগ হতে পারে। সেগুলি হয়তো স্তন ক্যান্সারেরই পূর্ব লক্ষণ, যেমন:

১) স্তনের কোন অংশে কোন দলা বা চাকা অনুভূত হওয়া-হতে পারে তা ব্যথাহীন।
২) স্তনে ব্যথা বা ভারী বোধ হোয়া অথবা ফুলে যাওয়া এক্ষেত্রে বলতে হয় যে, মাসিক পূর্বের দিনগুলিতে সাধারণতঃ স্তন কিছুটা সংবেদনশীল থাকে ও দলাদলা অনুভূত হয়।
৩) স্তন বৃন্ত থেকে কোন রস বের হওয়া।

এখানে নির্দিষ্টকৃত লক্ষণগুলো ছাড়াও পূর্বে আলোচিত কোন পরিবর্তন চোখে পড়লে দেরি না করে ডাক্তার দেখাতে হবে। যদি ক্যান্সারের কোন সম্ভাবনা থেকে থাকে তা যত তাড়াতাড়ি সনাক্ত হয় তার চিকিৎসা তত সহজতর।

Pin It on Pinterest

Share This