Select Page
২০২২-১১-০৫
এক্লাম্পশিয়া সম্পর্কে সচেতন হউন, প্রসূতিমৃত্যু রোধ করুন

বাংলাদেশে প্রসূতি মৃত্যুর হার অধিক এবং তা উদ্বেগজনক। প্রতি ঘণ্টায় ২ জন নারী সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। প্রসূতি মৃত্যুর এই অধিক হারের জন্য যে পাঁচটি প্রধান কারণ রয়েছে তার মধ্যে এক্লাম্পশিয়া অন্যতম। বাংলাদেশে মোট প্রসূতি মৃত্যুর ১১% ঘটে এক্লাম্পশিয়ার কারণে অর্থাৎ প্রতি এক হাজার প্রসূতি মৃত্যুর মধ্যে এক্লাম্পশিয়ায় মারা যান ১১০ জন নারী। তবে সময়মত প্রসূতির স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা গেলে অত্যন্ত উদ্বেগজনক এই সংখ্যাটিকে শূন্যের কাছাকাছি নামিয়ে আনা সম্ভব।

গর্ভধারণ ও প্রসব সব সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ। গর্ভধারণের শুরু থেকে প্রসবের পরের ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত সাবধান ও সচেতন থাকলে প্রসূতি মৃত্যু এবং শিশু মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। তাই অধিক প্রসূতি মৃত্যু হারের এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবেলায় এক্লাম্পশিয়া সম্পর্কে জানা ও বোঝা সবার জন্য জরুরী। তবেই আমরা আমাদের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও প্রসূতি মৃত্যু প্রতি এক লাখে ১৪৩ জন এ নামিয়ে আনার ‘‘সহস্রাব্দের লক্ষ্যমাত্রা’’ অর্জন করতে পারব।

প্রি-এক্লাম্পশিয়া ও এক্লাম্পশিয়া

প্রি-এক্লাম্পশিয়া এক্লাম্পশিয়া
·      গর্ভকালীন সময়ে উচ্চ রক্তচাপ
·      প্রস্রাবে আমিষের (প্রোটিন) পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
·      পায়ে পানি আসা (ইডিমা)এই তিনটির যেকোন দু’টি বর্তমান থাকলে সেই অবস্থাকে প্রি-এক্লাম্পশিয়া বলা হয়
গর্ভকালের শেষ পর্যায়ে, প্রসবের সময় অথবা প্রসবের পরের ছয় সপ্তাহের মধ্যে প্রি-এক্লাম্পশিয়ার লক্ষণগুলির সাথে খিঁচুনী দেখা দিলে তাকে এক্লাম্পশিয়া বলা হয়।

প্রি-এক্লাম্পশিয়া ও এক্লাম্পশিয়া কিভাবে সনাক্ত করা যায়?
সাধারণত স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসক দিয়ে গর্ভকালীন সময়ে কমপক্ষে ৪ বার অর্থাৎ প্রথম তিন মাসে একবার, দ্বিতীয় তিন মাসে একবার ও শেষ তিন মাসে দুইবার পরীক্ষা করালে প্রি-এক্লাম্পশিয়া বা এক্লাম্পশিয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়।

এক্লাম্পশিয়া কেন হয়?
এক্লাম্পশিয়া কেন হয় বা কি কারণে হয় তা বৈজ্ঞানিকরা এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারেননি। তবে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো এক্লাম্পশিয়ার রোগীদের সাথে খুবই সম্পর্কযুক্ত বিধায় তা জানা জরুরী। যেমন―

  • উচ্চ রক্তচাপ
  • বহুমুত্র (ডায়বেটিস)
  • গর্ভে একের অধিক সন্তান
  • মা বা বোনের প্রি-এক্লাম্পশিয়া ও এক্লাম্পশিয়া হবার ঘটনা অর্থাৎ বংশগত প্রবণতা
  • প্রথমবার গর্ভধারণ
  • অল্প বয়সে গর্ভধারণ
  • অধিক বয়সে গর্ভধারণ (৩৫ বছরের উপরে)
  • অপুষ্টি (দরিদ্র নারীদের মধ্যে এর প্রবণতা বেশি)
  • মানসিক চাপ বা অত্যধিক দুশ্চিন্তা

এক্লাম্পশিয়ায় আক্রান্ত পারুলের ঘটনা

পটুয়াখালী জেলার বহালগাছিয়া গ্রামের মেয়ে পারুল বেগম (১৫)। বিয়ের দেড় বছরের মধ্যে পারুল প্রথম গর্ভধারণ করে এবং প্রসবকালে মারা যায়। মৃত্যুর এক মাস আগে পারুল একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে গাইনী ও প্রসূতি চিকিৎসককে দেখিয়েছিলেন। চিকিৎসকের মতে, গর্ভাবস্থায় পারুলের প্রি-এক্লাম্পশিয়া ছিল এবং এ কারণে প্রসবের নির্ধারিত সময়ের এক মাস আগেই তাকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু টাকার অভাবে পারুল সে সময় ভর্তি হতে পারেন নি। মৃত্যুর এক মাস আগে থেকে পারুলের মাথা ব্যথা ও মাথা ঘোরা ছিল এবং বমি হতো। ২৭ এপ্রিল ২০১১ তারিখে তার প্রসব ব্যথা ওঠে, সেইসাথে বমি ও মাঝে মাঝে প্রবল খিঁচুনী শুরু হয়। পারুল অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। ঐদিন রাত ৩:৩০টায় স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে একটি সন্তান হয়। প্রসবের পর পারুলের রক্তক্ষরণ শুরু হয় ও খিঁচুনীও হতে থাকে। চিকিৎসা সত্ত্বেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসক তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করলেও টাকার অভাবে বরিশালে নেয়া হয় নাই। পরদিন ২৮ এপ্রিল ২০১১ সে মারা যায়। চিকিৎসক ও নার্সদের মতে, পারুল প্রসবের আগেই এক্লাম্পশিয়ায় আক্রান্ত হয় এবং সময়মতো হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ায় তারা পারুলকে বাঁচাতে পারেন নি।

প্রি-এক্লাম্পশিয়ায় আক্রান্ত মিনার ঘটনা

ঢাকা নগরীতে বসবাস করেন মিনা (২৭)। গর্ভকালীন ৮ মাস সময়ে মিনার প্রসব ব্যথা শুরু হয়। তার প্রচুর ঘাম আর অস্থিরতা দেখে তার ছোট বোন (যে পূর্বেই মা হয়েছেন) দ্রুত তাকে পাশের ক্লিনিকে নিয়ে আসেন। কিছুক্ষণ পরে তার খিঁচুনী ওঠে। সে অজ্ঞান হয়ে গেলে এ্যাম্বুলেন্সে করে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে অপারেশন করে একটি মৃত সন্তান বের করা হয় ও যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়। গর্ভকালীন সময়ে যে এক্লাম্পশিয়া হয় তা মিনা জানতেন না তবে তার ছোট বোন জানতেন। তিনি মিনাকে নিজের যত্ন নিতে, খাবার খেতে, চেক-আপ করাতে বললেও মিনা নিজের অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে তা পালন করেন নি। তবুও তার জীবন রক্ষা পায় ছোট বোনের সচেতনতার কারণে।

এক্লাম্পশিয়ায় আক্রান্ত সোমার ঘটনা

মানিকগঞ্জ জেলার হলকান্দি গ্রামের মেয়ে সোমা (২০)। গর্ভকালীন ৮ মাস পর্যন্ত তিনি কোন চিকিৎসক দেখান নি। তবে পরে উথলী উপজেলা স্বাস্থ্য কম্‌প্লেক্সে যান। ৩০ অক্টোবর ২০০৮ রাত ১১টার দিকে সোমার শরীর ঘামতে থাকে, তিনি বমি করেন এবং এক পর্যায়ে জ্ঞান হারান। তার দাঁতে দাঁত লেগে যায়, মুখ বাঁকা হয়ে যায় ও তিনি হাত-পা ছুড়তে থাকেন। সোমার পরিবার ফকির এনে পানি পড়া খাওয়ায়। ইতিমধ্যে মুখ ও কান দিয়ে একটু একটু রক্ত বের হতে থাকে। এরপর সোমাকে উথলী উপজেলা স্বাস্থ্য কম্‌প্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু গাড়ির ব্যবস্থা না থাকায় সদরে পৌঁছাতে দেরী হয়। হাসপাতালে তাকে দ্রুত চিকিৎসা দেয়া হয় ও অপারেশন করে সন্তান বের করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, আর ৫ মিনিট দেরী হলে তাকে বাঁচানো যেতো না। সোমার বাবার মতে, অপারেশন করার পরও তার খিঁচুনী ছিল। এরপর আস্তে আস্তে সোমা স্বাভাবিক হয়।

এক্লাম্পশিয়া সাধারণ খিঁচুনী বা ধনুষ্টংকার নয়, তাই টিটি ইঞ্জেকশন দিয়ে ধনুষ্টংকার প্রতিরোধ করা গেলেও এক্লাম্পশিয়া প্রতিরোধ করা যায় না।
এক্লাম্পশিয়া প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় বর্তমানে ম্যাগনিজিয়াম সালফেট ইঞ্জেকশন ব্যবহার করা হয় যা সহজে ও সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়।

এক্লাম্পশিয়া কিভাবে রোধ করা যায়?
এক্লাম্পশিয়া রোধে নিম্নোক্ত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করতে হবে―
গর্ভকালীন সময়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করানো

  • প্রশিক্ষিত ব্যক্তি (প্রশিক্ষিত দাই, এসবিএ, এফডাব্লিউভি, এফডাব্লিউএ বা চিকিৎসক) দ্বারা প্রসব করানো
  • গর্ভকালীন ও প্রসবোত্তর পুষ্টি, বিশ্রাম ও মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করা
  • গর্ভধারণের পূর্বে, গর্ভকালীন ও প্রসবোত্তর সময়ে উচ্চ রক্তচাপ ও বহুমূত্র রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা
  • খিঁচুনী দেখা দেয়ার সাথে সাথে কোন বিলম্ব না করে রোগীকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা
  • খিঁচুনী দেখা দেয়ার সাথে সাথে রোগীকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিশ্চিত করা যেমন, এক্লাম্পশিয়ার চিকিৎসা পাওয়া যায় কাছাকাছি এমন হাসপাতালের সন্ধান রাখা এবং যানবাহন ও টাকার ব্যবস্থা রাখা
  • প্রি-এক্লাম্পশিয়া ও এক্লাম্পশিয়ার লক্ষণগুলো জানা এবং বোঝা ও যথাসময়ে চিকিৎসা নেয়া

প্রি-এক্লাম্পশিয়া ও এক্লাম্পশিয়া রোধে প্রসূতিকে ঘিরে কার কি করণীয়

প্রসূতি নিজে : যে কোন সমস্যায় সংকোচ না করে স্বামী বা পরিবারের সদস্যদের জানাবেন যাতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যায়। বাড়ির সবচেয়ে কাছের সেবা কেন্দ্রে গিয়ে নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করাবেন। গর্ভবতী কার্ড সংগ্রহ করবেন এবং সযত্নে রাখবেন।

প্রসূতির স্বামী ও পরিবার : পরিবারের সবাইকে গর্ভবতীর বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে, স্বামীকে স্ত্রীর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য সময়মত খাওয়া ও বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে। প্রসবপূর্ব, প্রসবকালীন ও প্রসবোত্তর ঝুঁকি এড়াতে প্রি-এক্লাম্পশিয়া ও এক্লাম্পশিয়ার চিকিৎসা পাওয়া যায় এমন সেবা কেন্দ্রের খোঁজ এবং যানবাহন ও অর্থের ব্যবস্থা রাখবেন।

ইউনিয়ন পরিষদ : পরিষদের সদস্যরা এলাকার প্রসূতি ও শিশু মৃত্যু রোধে বিশেষ করে এক্লাম্পশিয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ রোগ রোধে এক্লাম্পশিয়া বিষয়ে প্রচার প্রচারণার ব্যবস্থা করবেন। ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গর্ভবতী নারীরা নিয়মিত ও সঠিক সেবা পাচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করবেন। কোন প্রসূতির মৃত্যু হলে মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করে এবং ভবিষ্যতে যাতে এ কারণে আর কোন প্রসূতির মৃত্যু না ঘটে তার ব্যবস্থা নেবেন। এক্লাম্পশিয়া আক্রান্ত রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার জন্য স্থানীয়ভাবে যানবাহন ও তহবিল গঠনের ব্যবস্থা করবেন।

উপজেলা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটি : জরুরী প্রসূতি সেবা ব্যবস্থা আছে সেই সকল হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ সকল সেবা কেন্দ্রে যাতে এক্লাম্পশিয়া রোগীর ব্যবস্থাপনা প্রটোকল ব্যবহার হয় তা নিশ্চিত করবেন।

জেলা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটি : জেলা হাসপাতালে জরুরী প্রসূতির সম্পূর্ণ সেবা, রক্তপরিসঞ্চালন ব্যবস্থা ও আই.সি.ইউ সেবা নিশ্চিত করতে জেলা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটি যথাযথ উদ্যোগ নেবে।

স্থানীয় বেসরকারি সংগঠনের করণীয় : হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেবেন। এলাকায় কোন প্রসূতি মৃত্যু ও নবজাতকের মৃত্যু হলে এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসনকে সাথে নিয়ে উক্ত মৃত্যুর কারণ জানবেন ও মৃত্যু এড়ানোর জন্য করণীয় বিষয়ে সকলকে সচেতন করবেন।

নীতিনির্ধারকগণ
বাংলাদেশ সরকার প্রসূতি মৃত্যু কমিয়ে ‘‘সহস্রাব্দের লক্ষ্যমাত্রা’’ অর্জনে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ লক্ষ্যে সরকার বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নিলেও এর বাস্তবায়নের অভাবে প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে অসংখ্য নারী ও শিশু। প্রি-এক্লাম্পশিয়া ও এক্লাম্পশিয়া সম্পর্কে সীমিত জ্ঞান এবং যথার্থ সেবা ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনার অভাবেই প্রসূতি মৃত্যু ও শিশু মৃত্যু ঘটছে। পদাধিকার বলে মাননীয় সংসদ সদস্যগণ জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। তাঁরা সক্রিয় হলে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব।

প্রি-এক্লাম্পশিয়া ও এক্লাম্পশিয়ার জন্য প্রসূতি মৃত্যুর আধিক্য একটি পারিবারিক, সামাজিক তথা রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা। প্রতিদিন কমপক্ষে ৪৮ জন প্রসূতি মারা যাচ্ছে যা কোন পত্রিকা বা টেলিভিশনের খবর হয় না। অথচ সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জন, মারামারিতে ২ জন, দুর্ঘটনা বা সহিংসতায় নিহত হবার সংবাদ পত্রিকার শিরোনাম, টেলিভিশনের ব্রেকিং নিউজ হয়। সাধারণত ১৮-৩০ বছর বয়সের মধ্যে প্রসূতিরা মারা যাচ্ছে। এ মৃত্যু রোধ করতে হবে। নারীরা সহ সমাজের প্রতিটি নাগরিক সচেতনভাবে দেশের প্রসূতি মৃত্যুর হার হ্রাসে ভূমিকা রাখবেন; সকলের অংশগ্রহণ ও তৎপরতায় সেবা ব্যবস্থার সমন্বয়, পরিবীক্ষণ ও চিকিৎসার মান উন্নয়নসহ প্রসূতির জন্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি হবে এবং দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা সদর হাসপাতালে প্রি-এক্লাম্পশিয়া ও এক্লাম্পশিয়া কার্যক্রম ত্বরান্বিত হবে, প্রসূতি মৃত্যু রোধ হবে- এই আমাদের কাম্য।

প্রি-এক্লাম্পশিয়া ও এক্লাম্পশিয়ার রোগী সনাক্ত করুন
যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করে প্রসূতি মৃত্যু রোধ করুন

নারীপক্ষ
নারীকে পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে অধিকারসম্পন্ন নাগরিক ও মর্যাদাসম্পন্ন মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ১৯৮৩ সাল থেকে নারীপক্ষ কাজ করে আসছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে প্রতিটি মঙ্গলবার সদস্যরা সভায় বসছেন। এই সভা নারীর নিজস্ব কথা বলার একটি জায়গা এবং নারীপক্ষ’র সকল তৎপরতা ও আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল।

নারীর সমঅধিকার ও সমমর্যাদা অর্জনের জন্য নেয়া হয়েছে বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট ও ভিন্নমুখী কর্মসূচি, যেমন: নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে রাষ্ট্রীয় কর্মকা- পরিবীক্ষণ, স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, নারী নির্যাতন বিষয়ক গবেষণা, নির্বাচন পূর্বে প্রার্থীদের সঙ্গে নারীর জন্য করণীয় বিষয়ে সংলাপ ইত্যাদি। তাছাড়া রয়েছে নিয়মিত আলোচনা সভা ও নারীর প্রতি বৈষম্য, অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও নারী অধিকার সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা প্রভাবিতকরণ। নারী আন্দোলনের একটি শক্তিশালী স্বতন্ত্র মঞ্চ তৈরির জন্য দেশব্যাপী গড়ে তোলা হয়েছে নারী সংগঠনসমূহের নেটওয়ার্ক ‘দুর্বার’।

নারীপক্ষ পরিচালিত হয় মূলত সদস্যদের স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে। বেশির ভাগ সাংগঠনিক কর্মকা-র ব্যয় নির্বাহ হয় এই স্বেচ্ছাশ্রমের বিনিময়ে উপার্জিত আয়ের মাধ্যমে। তবে আন্দোলনকে শক্তিশালী ও বেগবান করতে বিভিন্ন পরীক্ষামূলক প্রকল্প নেয়া হয় যা বাসত্মবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে নেয়া হয়।

নারীপক্ষ’র বর্তমান প্রধান কর্মক্ষেত্রসমূহঃ
১. নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ ও নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা
২. নারীর স্বাস্থ্য ও প্রজনন অধিকার
৩. সংস্কৃতি ও গণমাধ্যমে নারীর অবস্থান
৪. পরিবেশ ও উন্নয়নে নারীর অবস্থান
৫. নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন
৬. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি

নারীপক্ষ নারীর স্বাস্থ্য ও প্রজনন অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্য বহুমুখি কর্মসূচি পরিচালনা করছে। বাংলাদেশে অধিক প্রসূতি-মৃত্যুহার ক্রমশ সর্বনিম্ন পর্যায়ে কমিয়ে আনতে সরকারের স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় নারীর অভিগম্যতা ও অধিকার নিশ্চিত করণে এপ্রিল ২০০৩ থেকে ‘নারীর স্বাস্থ্য ও অধিকার সংক্রান্ত এ্যাডভোকেসী পার্টনারশীপ (WHRAP)’ প্রকল্প পরিচালনা করে আসছে। নারীপক্ষ এ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৫টি জেলা- বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা ও পটুয়াখালীর ৮০টি সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ১৬টি সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং সেবার মান উন্নয়নে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে লবিইং ও এ্যাডভোকেসী করছে। এই প্রকল্পের আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে ডেনিস ফ্যামিলি প্ল্যানিং এসোসিয়েশন (DEPA) এর মাধ্যমে ডেনমার্ক সরকার। দক্ষিণ এশিয়ার ৪টি দেশে পরিচালিত এই প্রকল্প সমন্বয় করছে মালয়েশিয়া ভিত্তিক নারী সংগঠন এশিয়ান প্যাসিফিক রিসোর্স এন্ড রিসার্চ সেন্টার ফর উইমেন (ARROW)।

নারীপক্ষ’র আর একটি প্রকল্প ‘যৌন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার-এর বর্তমান অবস্থা বিষয়ক আঞ্চলিক প্রতিবেদন’ এর জন্য বাংলাদেশে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এক্লাম্পশিয়া চিকিৎসার সহজলভ্যতা ও জরুরী প্রসূতি সেবা গ্রহণের বর্তমান বাস্তবতা ও প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে একটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা তৈরী এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তা তুলে ধরা। আঞ্চলিক প্রতিবেদন তৈরীর কাজটি সমন্বয় করছে ARROW।

Pin It on Pinterest

Share This