প্রকল্প অবহিতকরণ সভা
নারীপক্ষ, ব্লাস্ট ও ক্রিশ্চিয়ান এইড এর মিলিত উদ্যোগ “সজাগ” এর আয়োজনে ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪২৭/৩০ নভেম্বর ২০২০ “কোভিড-১৯ এ আর্থিক সংকট মোকাবিলা: শ্রমিকের শ্রম অধিকার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের জবাবদিহিতা” প্রকল্পের অবহিতকরণ জুম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন রওশন আরা, প্রকল্প পরিচালক, নারীপক্ষ। সজাগ সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন ফারহানা আফরোজ,ক্রিশ্চিয়ান এইড এবং প্রকল্প সম্পর্কে অবহিত করেন মাহীন সুলতান, দলনেতা, সজাগ কোয়ালিশন। সভাটি সঞ্চালনা করেন সারা হোসেন,অনানারী নির্বাহী পরিচালক ব্লাস্ট।
প্রকল্প অবহিতকরণ সভার উদ্দেশ্য: প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম সম্পর্কে সবাইকে জানানো এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে অংশগ্রহণকারীদের পরামর্শ ও সহযোগিতার প্রত্যাশা।
অংশগ্রহণকারী: বিজিএমইএ, সিপিডি, ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিনিধি, যে সব এনজিও শ্রমিকের অধিকারও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে যেমন -ফেযার ওয়ার ফাউন্ডেশন, কর্মজীবি নারী, বিলস, ফুলকী, সবুজের অভিযান, আওয়াজ ফাউন্ডেশন, কেয়ার বাংলাদেশ, ইউএন ওমেন এর প্রতিনিধি, রেনেশাঁ গ্রুপ এর প্রতিনিধি, মিলেনিয়াম টেক্সটাইল (সাউদার্ন) লি:, এমজি নীচ স্টীচ লি:, মোহাম্মাদী নীট স্টার লি: এর প্রতিনিধি এবং কোয়ালিশন সংগঠনের প্রতিনিধিসহ ৪২জন অংশগ্রহণ করেন।
এক নজরে মুক্ত আলোচনা থেকে প্রাপ্ত পরামর্শসমূহ:
* করোনা পরিস্থিতিতে কত শ্রমিক চাকুরী হারিয়েছে তার একটা ডাটা বেইজ করা দরকার;
* বাংলাদেশ শ্রম আইনে এই রকম মহামরী পরিস্থিতিতে কোন ধারা আছে কিনা তা দেখার জন্য তিনি সুপারিশ করেন;
* মহামারী/দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় মালিক, সরকার এর পাশাপাশি বায়ার/ব্রান্ডকেও দায়-দায়িত্ব পালনে সম্পৃক্ত করা;
* ইপিজেড এ যে সব শ্রমিকরা কাজ করেন তাদের দায়-দায়িত্ব কে নিবে সে বিষয়টা ভাবা দরকার;
* বাংলাদেশে ব্রান্ডের একটা ফোরাম আছে তাদের সম্পৃক্ত করলে এই কাজের ভালো হবে;
* আরএমজি সেক্টরে কাজ করার ক্ষেত্রে বিজিএমইএ এর অবহিতকরণের মাধ্যমে যৌথভাবে করা এবং গবেষাণা থেকে প্রাপ্ত তাদের সাথে শেয়ার করে তারা ব্রান্ড এর সাথে দেন দরবার করতে পারবে বলে বিজিএমইএ এর প্রতিনিধি জানান;
* কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য অনেক কারখানা স্ব উদ্যোগে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কারখানাগুলো সর্বোত্তম চর্চা (বেস্ট প্রাক্টিস) তুলে নিয়ে আসার জন্য বিজিএমইএ এর (হানিফুর রহমান ) এবং রেনেশাঁ গ্রুপের সৈয়দা শাইলা আশরাফি এর সাথে যোগাযোগের এর আহ্বান জানান;
* রপ্তানীর সাথে সম্পৃক্ত ছোট-বড় সব কারখানা এবং যে সব বারখানা সাব কন্ট্রাক্টে কাজ করে কিংবা স্থানীয় মার্কেটের জন্য পন্য উৎপাদন করে তারাও যেন দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে প্রণোদান প্যাকেজ পায় সে বিষয়ে কাজ করা;
* আইএলও সি ১৯০ রেটিফাইন করার জন্য ক্যাম্পেইন করা;
* সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য কোন আইনগত প্রক্রিয়ায় আসা যায় কিনা সে বিষয়ে চিন্তা করা;
* বাংলাদেশে ব্রান্ডদের একটা ফোরাম আছে। এই ফোরামকে যদি সম্পৃক্ত করা যায় তাহলে ভালো হবে;
* ভালো চর্চাগুলো সংগ্রহ করা এবং এই চর্চাগুলো যেন অব্যাহত থাকে সে জন্য কল-কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, শ্রম মন্ত্রনালয় থেকে প্রকৃত/ যথার্থ মনিটরিং কর;া
* সামাজিক নিরাপত্তা স্কীম নিয়ে কাজ করা খুব দরকার;
* বিজিএমইএ-এর সাথে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি)শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে খুব নিবিড়ভাবে কাজ করছে। তাই আইবিসি এর সাথে মাঝে মাঝে প্রকল্পের ফাইন্ডিংস শেয়ার করা দরকার।
“পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকের স্বার্থ ও অধিকার’ বিষয়ক আলোচনা ও করণীয় চিহ্নিতকরণ সভা”
পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের অধিকার ত্বরান্বিতকরণ প্রকল্পের আয়োজনে ১২কার্তিক ১৪২৭/২৮ অক্টোবর ২০২০“পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকের স্বার্থ ও অধিকার’ বিষয়ক আলোচনা ও করণীয় চিহ্নিতকরণ সভা” অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন রীনাসেনগুপ্তা, কর্মদল সদস্য, নারীপক্ষ ও প্রকল্প সর্ম্পকে ধারণা প্রদান করেন মাহীন সুলতান, সমন্বয়কারী , নারী শ্রমিকের অধিকার ও আন্দোলক কর্মসূচি।
বাংলাদেশ পোশাক শিল্পে শ্রমিকের নিরাপত্তা ও অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনগুলো কাজ করে আসছে। বাংলাদেশে প্রায় ৬০০টি ট্রেড ইউনিয়ন আছে। পোশাক শিল্প কারখানায় প্রায় ৬৫% নারী শ্রমিক কাজ করলেও নিরাপত্তা ও অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে নারীর স্বার্থগুলো প্রায়:শই উপেক্ষিত থাকে। গর্ভধারণ, প্রজনন স্বাস্থ্য, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি, সন্তান লালন পালনের অনিশ্চিয়তা ইত্যাদির কারণে অনেক দক্ষ নারী শ্রমিক চাকুরী ছেড়ে গৃহে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এমতাবস্থায় নারী শ্রমিকের স্বার্থ ও অধিকার বিষয়ে নারী ট্রেড ইউনিয়ন নেত্রীদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে শ্রমিক আন্দোলনকে নারী আন্দোলন এর সাথে যুক্ত করার লক্ষ্যে নারীপক্ষ “পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের অধিকার তরান্বিতকরণ (অফাধহপরহম ঃযব ৎরমযঃং ড়ভ ড়িসবহ মধৎসবহঃ ড়িৎশবৎং)” প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নারী ট্রেড ইউনিয়ন নেত্রীদের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মশালা, নারী ট্রেড ইউনিয়ন নেত্রীদের সাথে কাজের সম্পর্ক উন্নয়ন এবং তা বজায় রাখার জন্য নারীপক্ষ’ সক্ষমতা জোরদার করার জন্য কর্মশালা এবং এ্যাডভোকেসী ইস্যূ তৈরি করা হবে।
সভার উদ্দেশ্য :
* ট্রেড ইউনিয়নের নারী নেত্রী এবং পুরুষ নেতাগণ যারা নারী শ্রমিকের স্বার্থ আদায়ে সোচ্চার ভূমিকা রাখেন তাদের সাথে প্রতিনিয়ত মতবিনিময় করা, তাদের উপদেশ গ্রহণ এবং কৌশলে আমাদের কথা বলা। ট্রেড ইউনিয়নের নারী নেত্রীদের সাথে যুক্ত থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা;
* ট্রেড ইউনিয়নের বিভিন্ন কর্মসূচিতে, নারী স্বার্থ আদায়ে নিজেদের যুক্ত করা।
অংশগ্রহণকারী: সভায় ৬জন নারী ট্রেড ইউনিয়ন নেত্রী, ৩জন পুরুষ ট্রেড ইউনিয়ন নেতা, ২জন দুর্বার নেটওয়ার্ক নেত্রী এবং নারীপক্ষ’র সদস্য ও কর্মকর্তা ১২জনসহ মোট মোট ২৩জন অংশগ্রহণ করেন।
এক নজরে মুক্ত আলোচনা থেকে প্রাপ্ত পরামর্শসমূহ:
* আইএলও সি ১৯০ রেটিফাই করার জন্য কাজ করা (বিভিন্ন সংগঠন, সুশীল সমাজ এর সাথে ছোট ছোট সভার আয়োজন, র্যালী, পোস্টার, মিছিল ইত্যাদি কর্মসূচির মাধ্যমে ক্যাম্পেইন করে জনমত সৃষ্টি করা);
* নারীর উপর সহিংসতা রোধ এই ইস্যূতে কাজ করা যায়;
* ছাঁটায়কৃত শ্রমিকদের আইনী সহায়তা প্রদান করা;
* নারী শ্রমিকদের মজুরী, ছাঁটাই, মাতৃত্বকালীর ছুটি ও সুবিধাদি বিষয়ে কাজ করা যেতে পারে;
* নারী শ্রমিকদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য কাজ করা দরকার;
* শ্রম আইন সম্পর্কে নারী শ্রমিকদের সচেতন করার জন্য প্রশিক্ষণ এর আয়োজন করা;
* যৌন হয়রানি মুক্ত কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলার জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী অভিযোগ কমিটি যেন প্রতিটি কারখানায় গঠিত হয় তার জন্য কাজ করা এবং প্রয়োজনে কমিটি কিভাবে গঠন করতে হবে সেক্ষত্রে সহায়তা করা;
* নারী শ্রমিকদের চাকুরির নিশ্চয়তা নাই, তাদের বেতন এর উপর কোন নিয়ন্ত্রন নাই এই জায়গায় তাদের সচেতন করার জন্য কাজ করা যেতে পারে;
* নারীশ্রমিকদের পদোন্নতির জন্য দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে;
* রাস্তা ঘাটে চলার সময় যৌন হয়রানি রোধ করার জন্য শিল্পাঞ্চল পুলিশ, স্থানীয় লোকজন নিয়ে এলাকা ভিত্তিক কমিটি গঠনের জন্য কাজ করা দরকার;
* নারীর প্রতি সহিংতার প্রতিবাদ করার জন্য সব সেক্টর মিলে একটা প্লাটফরম তৈরি করা দরকার। এই প্লাফরম এর মাধ্যমে নির্যাতন/ হয়রানির শিকার নারীর সুষ্ঠু ও নায্য বিচার পাওয়া এবং তার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে চর্চা বন্ধের জন্যকাজ করা দরকার;
* ট্রেড ইউনিয়ন নেত্রীরা যেন কাজ করতে না পারে সে জন্য মালিক পক্ষ মিথ্যা মামলা, সন্ত্রাসী হামলা বিভিন্নভাবে হয়রানি করে সে ক্ষেত্রে বাধাগুলো মোকাবিলার কৌশল কি হতে পারে তা নিয়ে কাজ করা যেতে পারে;
* পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিক ৮৫% থেকে কমে বর্তমানে ৬৫% এসেছে। এর একটি বড় কারণ অনেক কারখানায় অটোমেশিন চালু হয়েছে এবং নারীশ্রমিকদের প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ কম। তাই তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির জায়গায় কাজ করা দরকার;
* ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা যেন শ্রমিকদের সাথে সামাজিক সংলাপ করতে পারে সেই বিষয় নিশ্চিত করতে কাজ করা;
* পেশাগত রোগের কারণে ৩০/৩৫ বছর বয়সে শ্রমিকদের কাজ ছেড়ে খালি হাতে চলে যেতে হয়। তাই নারী শ্রমিকরা যেন শোভন কর্মপরিবেশে কাজ করতে পারে সেই জায়গায় কাজ করা দরকার;
* কারখানায় নারী অধিকার রক্ষার জন্য একটি নারী কমিটি গঠন করা যেতে পারে;
* কর্ম এলাকা পরবর্তীতে বাড়ানো দরকার;
* শ্রম আইন বিরোধী কোন কাজ যেন না করা হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। শ্রম আইনে নারী শ্রমিকের যে অধিকার আছে সেগুলো মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।