পদার্থ ও রসায়ন বিজ্ঞানী। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী।
মূল নাম : Marie Sklodowska Curie
১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ৭ নভেম্বর, পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারসো (Warsaw)-তে জন্ম গ্রহণ করেন। জন্মের পর তাঁর নাম রাখা হয়েছিল ‘মারি স্ক্লোদোওয়াস্কা’ (Marie Sklodowska)। তাঁর পিতা ছিলেন ওলাদিস্লাও স্ক্লোদোওয়াস্কি (Władysław Skłodowski ) ছিলেন পদার্থবিজ্ঞান আর গণিতের অধ্যাপক। তাঁর মা ব্রনিসভা (Bronisława) ছিলেন স্কুল-শিক্ষক এবং পিয়ানোবাদক। পিতামাতার পাঁচ সন্তানের ভিতর তিনি ছিলেন সবার ছোট। তৎকালীন পোল্যান্ড ছিল রাশিয়ার অধীন। রুশদের বৈরী আচরণে তাঁর বাবা মা চাকরি হারান। মা শুরু করেন মেয়েদের বোর্ডিং।
কিন্তু আর্থিক অনটনের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার কারণে তাঁর বড় বোন সোফিয়াকে টাইফাস রোগে মৃত্যুবরণ করে। এর দুই বৎসর পরে তাঁর মা যক্ষ্মায় মারা যান।
মেরি দশ বৎসর বয়সে J. Sikorska-র বোর্ডিং হাউসে এ্যাটেন্ডেট হিসাবে যোগদান করেন। পরে একটি মেয়েদের জিমনেশিয়ায় এ্যাটেন্ডেট হিসাবে কাজ করেন কিছুদিন। ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুন তিনি গ্র্যাজুয়েট হন। এরপর কয়েক বৎসর তিনি পিতৃকুলের আত্মীয়দের সাথে গ্রামের বাড়িতে কাটান। পরে তাঁর পিতার সাথে ওয়ারস-তে কিছুদিন অতিবাহিত করেন। সে সময় পরাধীন পোল্যান্ডে মেয়েদের উচ্চশিক্ষা ছিল নিষিদ্ধ। এই কারণে তিনি এবং তাঁর ব্রনিসোভা― ওয়ার্স-এর একটি অস্বীকৃত এবং গোপন বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে পরিচিত Flying University-এ ভর্তি হন।
তাঁর বোন ব্রনিসোভা প্যারিসে ডাক্তারি পড়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু আর্থিক অসুবিধার কারণে, প্রথমে এই সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে যায়। এরপর ব্রনিসোভা আর মেরি চুক্তি করেন যে, বড় বোন যখন পড়াশোনা করবেন, তখন তিনি খরচ চালাবেন। আর বড়বোনের পড়াশুনা শেষ হলে, তাঁর পড়শোনার খরচ বড় বোন চালাবেন।
ব্রনিসোভার দুবছরের প্যারিসে মেডিক্যাল পড়াশুনার খরচ চালানোর জন্য, মেরি ওয়ারস-এর একটি বাড়িতে (তাঁর পিতার সূত্রে পরিচিত একটি পরিবার) শিক্ষক-পরিচারিকার কাজ নেন। এই সময় তিনি এই পরিবারের একটি ছেলে কাজিমিয়েরজ জোরাওয়াস্কি ( Kazimierz Żorawski)-এর প্রেমে পড়েন। পরে পারিবারিক বাধায় এদের আর বিয়ে হয় নি।
১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে ব্রনিসোভার কাজিমিয়ের্জ ড্লুস্কি (Kazimierz Dłuski) নামক একজন ডাক্তার, রাজনৈতিক কর্মীকে বিবাহ করেন। এই সময় ব্রনিসোভা মেরিকে প্যারিসে এসে উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণের প্রস্তাব দেন। প্যারিসে লেখাপড়া চালানোর মতো খরচ জোগার করার জন্য তাঁকে দেড় বছর অপেক্ষা করেন। এরপর তিনি প্যারিসে যান। এই সময় তাঁর পিতার পুনরায় ভালো অবস্থায় আসে এবং তিনি লেখাপড়ার জন্য মেরিকে আর্থিক সাহায্য করা শুরু করেন।
১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে তিনি প্যারিসে ব্রনিসোভার কাছে যান। এখানকার সোর্বন (Sorbonne) বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি উচ্চতর পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান ও গণিতশাস্ত্র নিয়ে লেখাপড়া করেন। এই সময় সন্ধ্যাবেলা তিনি শিক্ষকতা করতেন এবং নিজের খরচ নিজে চালানোর চেষ্টা করতেন। পারতপক্ষে তিনি তাঁর পিতা বা বোনের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিতেন না।
১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে কৃত্বিত্বের সাথে ডিগ্রি লাভ করেন এবং অধ্যাপক গ্যাব্রিয়েল লোপম্যান-এর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ল্যাব্রেটরিতে কাজ করার সুযোগ পান। একই সাথে তিনি সোর্বন বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় ডিগ্রি লাভ করেন।
এরপর তিনি প্যারিসের Society for the Encouragement of National Industry পরিচালিত একটি গবেষণামূলক কাজ শুরু করেন। এই কাজটি ছিল বিভিন্ন ইস্পাতের চৌম্বক গুণাগুণ পরীক্ষা করা।
এই গবেষণার সূত্রে তাঁর সাথে পরিচয় ঘটে পিয়ের কুরি’র (Pierre Curie)। উভয়ই ছিলেন প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের অনুরাগী। এই সময় পিয়ের কুরি School of Physics and Chemistry-এর প্রশিক্ষক ছিলেন। মেরি গবেষণার জন্য একটি বড় গবেষণাগার খুঁজছিলেন। পিয়ের মেরির জন্য কোনো বিশাল গবেষণাগারের ব্যবস্থা করতে না পারলেও, একটি গবেষণাগারে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। কাজের ভিতর দিয়ে উভয়ের ভিতর ঘনিষ্ঠতা তীব্রতর হয়ে উঠলে, পিয়ের তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু মেরি দেশে ফিরে যাবেন এবং দেশের জন্য কিছু করবেন বলে- এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর পিয়ের তাঁর সাথে পোল্যান্ডে যাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু তারপরেও তাঁর পরিবারের কথা ভেবে তিনি এই বিয়েতে মত দেন নি। এর ভিতরে ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দের গ্রীষ্মের ছুটিতে মেরি ওয়ারসতে যান। সেখানে ক্রাকোউ বিশ্ববিদ্যালয়ে (Kraków University) যোগ দেয়ার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু শুধু মেয়ে হওয়ার কারণে তিনি সেখানে সুযোগ পান নি। এই সময় প্যারিস থেকে পিয়ের এক চিঠিতে তাঁকে প্যারিসে ফিরে আসার আবেদন করেন এবং পিএচডি করার অনুরোধ করেন। এরপর তিনি প্যারিসে ফিরে আসেন। এই সময় পিয়ের চৌম্বকত্ব নিয়ে গবেষণা অব্যাহত রাখেন এবং ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি তাঁর স্কুলে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। মেরি এই বৎসরেই পোল্যান্ড থেকে ফিরে আসেন এবং ২৬ জুলাই সিভিল ইউনিয়ন কোর্টে উভয়ের বিবাহ হয়।
১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে উইলহেল্ম রন্টেগন এক্সরে আবিষ্কার করেন। কিন্তু কিভাবে এই রশ্মি সৃষ্টি হয়, তার কৌশল তখনও অনাবিষ্কৃত ছিল। ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে হেনরি বেকিয়েরেল ইউরেনিয়াম লবণের বিকরিত রশ্মি আবিষ্কার করেন এবং দেখেন যে, এই রশ্মি পুনর্বিন্যাসিত হয়ে এক্সরে সৃষ্টি করে। তিনি দেখান যে এই বিকীরণ অণুপ্রভার মতো নয়। ইউরেনিয়াম লবণ থেকে আগত এই রশ্মির রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য তিনি গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তাঁর পিএইচডি’র জন্য এই বিষয়টি নির্বাচন করেন। এই কাজে তিনি তাঁর স্বামী এবং তাঁর ভায়ের আবিস্কৃত ইলেক্ট্রোমিটার ব্যবহার করেন। গবেষণার দ্বারা তিনি একটি কল্প-প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এই প্রস্তাবে তিনি বলেন, ইউরেনিয়াম লবণের ভিতরে অণুসমূহের পারস্পরিক সংঘাতের কারণে এই অজ্ঞাত রশ্মির সৃষ্টি হয় না, বরং কোনো বিশেষ পরমাণুর ভিতর থেকে এই রশ্মি সৃষ্টি হয়। আর এই পরমাণুটি যে ইউরেনিয়ামের তাও নিশ্চিত করেন।
এই গবেষণা চলাকালেই, ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর প্রথম কন্যা আইরিনের জন্ম হয়। এই সময় তিনি প্যারিসের মূল ধারার শিক্ষা পদ্ধতিরে বাইরের শিক্ষাপদ্ধতি হিসাবে প্রচলিত École normale supérieure -তে শিক্ষকতা শুরু করেন। মেরি এবং তাঁর স্বামী কোনো বিশেষভাবে নির্মিত গবেষণাগারে কাজ করতেন না। তাঁরা চিকিৎসা-বিদ্যালয়ের সাধারণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাটা-ছেঁড়ার জন্য ব্যবহৃত কক্ষ ব্যবহার করতেন। এই ঘর জলনিরোধক ব্যবস্থা ছিল না এবং পর্যাপ্ত আলো-বাতাসও চলাচল করতো না। এছাড়া তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রভাবে শরীরে কি ধরণের সাংঘাতিক ক্ষতি হতে পারে, সে সম্পর্কে মেরি এবং তাঁর স্বামীর কোনো ধারণা ছিল না। এই কারণে, তাঁরা শরীরে তেজস্ক্রিয় প্রতিরোধকও ব্যবহার করতেন না। তাঁর গবেষণার জন্য স্কুলের কোনো অর্থ বরাদ্দ ছিল না। তাঁর গবেষণার খরচ যোগান দিত কয়েকটি খনির কোম্পানি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
মেরি ইউরেনিয়ামের আকরিক পিচব্লেন্ড (pitchblende) এবং ক্যালোকোলাইট (chalcolite) নিয়ে গবেষণা করতেন। তিনি গবেষণার সময় লক্ষ্য করেছিলেন, পিচব্লেন্ড ইউরেনিয়ামের চেয়ে চারগুণ বেশি এবং ক্যালোকোলাইট-এর চেয়ে দুই গুণ তেজস্ক্রিয়তা প্রদর্শন করে থাকে। এই ফলাফল থেকে তিনি দ্বিতীয় বারের মতো নতুন একটি তথ্য উপস্থাপন করেন। এই নতুন তথ্যে তিনি বলেন, পিচব্লেন্ড এবং ক্যালোকোলাইট-এর ভিতরে এমন নতুন কোনো উপাদান আছে, যা ইউরেনিয়ামের চেয়ে বেশি তেজস্ক্রিয়। ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে তেজস্ক্রিয়তা প্রদানকারী পদার্থের তালিকা তৈরির চেষ্টা করেন। এই গবেষণায় তিনি থোরিয়ামের তেজোস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে, তাঁর কাজের সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হন তাঁর স্বামী পিয়ের কুরি। এরপর পিচব্লেন্ড নিয়ে কুরি দম্পতি গবেষণা শুরু করেন। ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে কুরি দম্পতি একটি নতুন মৌলিক পদার্থের কথা বলেন। এবং এর নাম দেন পোলোনিয়াম। ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে দ্বিতীয় মৌলিক পদার্থ আবিষ্কারের ঘোষণা দেন। এই নতুন উপকরণটির নাম দেন রেডিয়াম।
১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে মেরি École normale supérieure -এর ফ্যাকাল্টি সদস্য হন। এই সময় পিয়ের সোরবন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি সদস্য হন। এরপর উভয়ই তাঁদের গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন।
১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে এক টন পিচব্লেন্ড থেকে, এক গ্রামের ১/১০ ভাগ ওজনের রেডিয়াম ক্লোরাইড উদ্ধার করেন। এই বৎসরে তাঁর পিতার মৃত্যু হয় এবং এই সময়ে তিনি পোল্যান্ডে পিতার শেষকৃত্যে যোগাদান করেন।
১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, হেনরি বেকুয়েরেল-এর তত্ত্বাবধানে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। এর কিছুদিন পর, স্বামীসহ লণ্ডনে তেজস্ক্রিয় পদার্থের উপর বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেরি এই সভায় বক্তৃতা দিতে পারেন নি, নারী হওয়ার কারণে। এই বৎসরেই পিয়ের কুরি, মেরি কুরি এবং হেনরি বেকুয়েলকে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার প্রদান করে।
১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে এঁর দ্বিতীয় সন্তান ইভা কুরির জন্ম হয়। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ এপ্রিল সড়ক দুর্ঘটনায় পিয়ের কুরি মৃত্যুবরণ করেন। স্বামীর অকাল মৃত্যুতে তিনি ভেঙে পড়েন। পিয়েরের মৃত্যুর কিছুদিন পর, ১৩ মে, সাবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিয়ের-এর জন্য নির্ধারিত অধ্যাপকের চেয়ার মেরিকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মেরি এই চেয়ার গ্রহণ করেন এবং তাঁর এবং তাঁর স্বপ্নের গবেষণাগার তৈরির উদ্যোগ নেন। কিন্তু তিনি এই গবেষণাগার তৈরির কাজ শেষ করতে পারেন নি। এই সময় প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাস্তুর ইনস্টিটিউট মেরির জন্য তেজস্ক্রিয়তার গবেষণার জন্য রেডিয়াম ইন্সটিটিউট তৈরি করে। মেরিকে এই ইন্সটিটউটের প্রধান করা হয়।
১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিশুদ্ধ রেডিয়াম জনসমক্ষে উপস্থাপন করতে সক্ষম হন।
১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে রসায়ন বিজ্ঞানে দ্বিতীয়বার নোবেল পুরস্কার পান। এই পুরস্কার লাভের পর তিনি কিডনির অসুখে হাসপাতালে ভর্তি হন। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে তিনি, জনসমক্ষে আসা কমিয়ে দেন। এই সময় তাঁর পদার্থবিজ্ঞানী বন্ধু, Hertha Ayrton-এর সাথে সময় কাটান। প্রায় ১৪ মাস পরে তিনি তাঁর গবেষণাগারে যোগদান করেন। এই সময় ‘ওয়ারস সায়েন্টিফিক সমিতি’ তাঁদের নতুন গবেষণাগারে ডিরেক্টর পদ গ্রহণের আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু রেডিয়াম ইন্সটিটিউট গবেষণাগার উন্নয়নের জন্য এই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। তবে ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পোল্যান্ড ভ্রমণে আসেন। ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে রেডিয়াম ইন্সটিটিউটের গবেষণাগার তৈরি শেষ হয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে, যুদ্ধক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য তাঁর ডাক পড়ে। তিনি নতুন করে যুদ্ধের উপযোগী এক্সরে যন্ত্রের উন্নয়ন করেন। একই সাথে চলমান রেডিওগ্রাফি পদ্ধতিরও উন্নয়ন করেন। অচিরেই তিনি রেডক্রস রেডিওলোজি পরিসেবা’র ডিরেক্টর হন। ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে তিনি ফ্রান্সে প্রথম রেডিওলোজি কেন্দ্র স্থাপন করেন। এই সময় তাঁকে সাহায্য করেছেন তাঁর ১৭ বৎসরের কন্য আইরিন কুরি।
যুদ্ধের সময় ফরাসি সেনাবাহিনীকে সাহায্য করার জন্য, তিনি তাঁর নোবেল প্রাইজ মেডেল বিক্রয়ের উদ্যোগ করেন। কিন্তু ফরাসি জাতীয় ব্যাংক এই বিক্রয়কে অনুমোদন করে নাই। এই কারণে তিনি নোবেল পুরস্কারের টাকা দিয়ে ওয়ার বন্ড কেনেন। যুদ্ধের পর Radiology in War নামক বই রচনা করেন। বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে।
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর নামে একটি বৃত্তি চালু করে। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে রেডিয়াম গবেষণার জন্য অর্থ সংগ্রহের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওয়ারেন জি হার্ডিং তাঁকে হোয়াইট হাউসে সম্বধর্না দেন।
১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি French Academy of Medicine-এর ফেলো নির্বাচিত হন। এরপর তিনি ব্রাজিল, বেলজিয়াম, স্পেন, এবং চেকোশ্লোভাকিয়া ভ্রমণ করেন। এই বৎসর গঠিত হয় International Commission for Intellectual Cooperation of the League of Nations। এই সংগঠনের তিনি সদস্যপদ লাভ করেন।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পিয়ের-এর জীবনীগ্রন্থ রচনা করেন। এই গ্রন্থের নাম ছিল-Pierre Curie।
১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে ওয়ারস রেডিয়াম ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠার সময় তিনি পোল্যান্ডে যান।
দীর্ঘদিন তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিয়ে কাজ করার কারণে, তাঁর দেহের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছিল। এই কারণে তিনি নানারকম শারীরীক অসুবিধায় ভুগতে থাকেন। সে সময়ে তেজস্ক্রিয়তাজনীত চিকিৎসার তেমন সুব্যবস্থাও ছিল না। জীবনের শেষ দিকে তাঁকে শারীরীক যন্ত্রণার ভিতর দিয়ে কাটাতে হয়েছ। এরই সূত্রে ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জুলাইতে ফ্রান্সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ও সম্মাননা
১. Nobel Prize পদার্থবিজ্ঞান (১৯০৩), পিয়ের কুরি হেনরি বেকুয়েল-সহ।
২. Davy Medal (১৯০৩), পিয়ের কুরি -সহ।
৩. Matteucci Medal (১৯০৪), পিয়ের কুরি -সহ।
৪. Elliott Cresson Medal (১৯০৯)
৫. Nobel Prize রসায়নবিজ্ঞান, (১৯১১)।
৬. Franklin Medal of the American Philosophical Society (১৯২১)।
তাঁর এবং তাঁর স্বামীর সম্মানার্থে তেজস্ক্রিয়তার একক কুরি রাখা হয়েছে। তবে বর্তমানে এই এককটি আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতির অন্তর্গত নয়। এর প্রতীক Ci।
1 Ci = 3.7 × 1010 decays per second.