Select Page
২০২০-১১-২৫
২৫ নভেম্বর, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস- ২০২০

ধর্ষণের বিরুদ্ধে ক্রোধ

শিশু থেকে বৃদ্ধ সকল বয়সের নারী প্রতিনিয়ত ধর্ষণ, যৌন আক্রমণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ঘরে, বাইরে, রাস্তাঘাটে, যানবাহনে, কর্মক্ষেত্রে, দুর্যোগে-দুর্বিপাকে, যুদ্ধে, এমন কি আনন্দানুষ্ঠানেও নারী সর্বদা আক্রমণের ঝুঁকিতে।

নারীর উপর সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ১৯৮১ সালে ল্যাটিন আমেরিকান নারী সম্মেলন ২৫ নভেম্বরকে ‘নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস’ ঘোষণা করে। ১৯৯৩ সালে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব মানবাধিকার সম্মেলনে এ দিবসটি জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায় এবং তখন থেকে বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালন করা হয়। নারীপক্ষ ১৯৯৭ সাল থেকে কখনো এককভাবে, কখনো বন্ধু সংগঠনের সাথে এবং দেশব্যাপী নারী সংগঠনসমূহের নেটওয়ার্ক ‘দুর্বার’ এর মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোন একটি প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালন করে আসছে। নারীপক্ষ এবছর “ধর্ষণের বিরুদ্ধে ক্রোধ” প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রজন্মান্তরে নারীবাদী মৈত্রীর মাধ্যমে দিবসটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে এবং যথারীতি দুর্বার নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে উদ্যাপন করছে।

বিশ^ব্যাপী কোভিড- ১৯ অতিমারীর বিধ্বংসী প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি, জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক যোগাযোগ বিপর্যস্ত। এরই সাথে বেড়ে চলেছে ঘরে-বাইরে নারীর উপর সহিংসতা। কোভিড-১৯ সংক্রমণের শুরু থেকে পুলিশসহ দেশের প্রায় প্রত্যেকটা বাহিনীর সদস্যরা দৃশ্যমান থাকলেও নারীর উপর সহিংসতার ধরন ও মাত্রা বেড়েই চলেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারী থেকে অক্টোবর ২০২০ এর মধ্যে পুরুষরা ১৩৪৯ জন নারীকে ধর্ষণ, ৪৬ জন নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা এবং ২৭১ জন নারীকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করেছে। ধর্ষণের শিকার হওয়ার কারণে ১২ জন নারী আত্মহত্যা করেছে। নারীর উপর যৌন সহিংসতা সর্বদাই ছিল, তবে এইসকল ঘটনায় নৃশংসতা এবং ক্ষমতাসীনদের সম্পৃক্ততা পূর্বের অভিজ্ঞতা অতিক্রম করেছে।

নারীর শরীরের উপর সহিংসতা এবং এর বিচার না পাওয়া আমাদের ক্রোধোন্মত্ত করেছে। সরকার, বিচারবিভাগ, আইনসভা, পুলিশবাহিনী, আমাদের অভিভাবক, আমাদের বাবা-মা এবং আমাদের শিক্ষকদের আমরা বলতে চাই, এই সহিংসতার জন্য আপনারা সবাই দায়ী।

আমরা শুধূমাত্র পুরুষদ্বারা নারীর উপর সহিংসতার প্রতিবাদ করছি না; আমরা ঐ সংস্কৃতি ও চর্চারও প্রতিবাদ করছি, যা এই সহিংসতার জন্ম দেয়, লালন করে এবং এর প্রসার ঘটায়। ‘নারীর শরীর তার এবং তার পরিবারের সম্মান/সম্ভ্রম ধারণ করে’ আমরা এই প্রচলিত ধ্যান-ধারণার প্রতিবাদ করছি। ‘নারীর দেহে পুরুষের সর্বময় অধিকার’ -এমন স্বত্বের বিরুদ্ধে আমরা লড়ছি।
অপরাধীকে রেহাই ও নিরাপত্তা দেয়া, অপরাধীকে শাস্তি দেয়ার পরিবর্তে ভুক্তভোগীকে দোষারোপ করা, নির্যাতনকারীকে বিচারের মুখোমুখি না করে নারীকে তার আচরণ বদলাতে বাধ্য করার জন্য আমরা আমাদের পরিবার, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং আমাদের সরকার -এর উপর ক্ষুব্ধ। আমরা ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের দাবি এবং মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে যে আইনটি পাশ করা হলো তা সমর্থন করি না। ধর্ষণ প্রতিরোধ বা হ্রাসের সাথে শাস্তির কঠোরতার কোন সম্পর্ক নেই। তাছাড়া মৃত্যুদন্ড মৌলিক মানবাধিকার পরিপন্থি।

সহিংসতামুক্ত নারীর জীবন নিশ্চিত করতে আমাদের সম্মিলিতভাবে লড়াই করতে হবে। দেশের প্রত্যেকের কাছে আহŸান, আমাদের এই লড়াইয়ে যোগ দিন এবং আপনার মা, বাবা, ভাই, বোন, আত্মীয়, প্রতিবেশী, বন্ধু, সহকর্মী, সহপাঠীকে এই লড়াইয়ে যুক্ত করুন।

আপনিও আমাদের সাথে একাত্ম হোন।

নারীপক্ষ এবং দুর্বার নেটওয়ার্ক

Pin It on Pinterest

Share This