স্মারক নং- না.প: ০৯/২০১৭-১৩০
০৮ আশ্বিন ১৪২৪/২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭
বরাবর
মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম)
মাননীয় মন্ত্রী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
বিষয়ঃ শরণার্থীদের জন্য জরুরী সেবা প্রদানে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি
মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়,
গত ৯ ভাদ্র ১৪২৪/ ২৪ অগাস্ট ২০১৭ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানে সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণ ও নির্যাতনের কারণে সারে চার লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। এযাবত প্রায় ৪ লক্ষ ২২ হাজার নিপীড়িত, অসহায় ও নিরাশ্রয় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ সরকারকে নারীপক্ষ’র পক্ষ থেকে অশেষ সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন এবং কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং এলাকায় আড়াই হাজার একর জমিতে রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন আশ্রয় শিবির নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহন করার জন্য আমরা সরকারকে জানাই বিশেষ ধন্যবাদ।
এই বিশাল সংখ্যক শরণার্থীদের প্রায় ৮০ ভাগই হলো নারী ও শিশু যারা যৌন সহিংসতা এবং মানবপাচারের অতিরিক্ত ঝুঁকিতে রয়েছে। গত ১৭-১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে নারীপক্ষ’র প্রতিনিধি উখিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মোট পাঁচটি আশ্রয় শিবির ও এলাকা পরিদর্শন করে। শরণার্থীদের সাথে কথা বলে ও পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী জানা যায় যে, বেশির ভাগ রোহিঙ্গা পরিবারের সাথে কোনো প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ সদস্য নাই। এছাড়া তাঁদের অসহায়ত্বের সুযোগে পাচারসহ বিভিন্ন ধরণের সহিংসতার আশংকা রয়েছে।
উখিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত রোহিঙ্গা শরণার্থিদের জন্য যে স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা রয়েছে, তা বিশাল জনসংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল এবং রাতে জরুরী স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের ব্যবস্থা নাই। আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যে, আনুমানিক প্রায় ৫০,০০০ গর্ভবতী নারী আগামী চার মাসের মধ্যে সন্তান প্রসব করবেন।
এমন মানবেতর পরিস্থিতে নারীর শারীরিক ও মানসিকসহ সার্বিক নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও স্বস্তি নিশ্চিত করতে নারীপক্ষ জোড়ালো ভাবে নিম্নোক্ত দাবি পেশ করছেঃ
১. আশ্রয় শিবিরগুলোতে ২৪ ঘণ্টা পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীসহ সার্বক্ষনিক জরুরী স্বাস্থ্যসেবা প্রদান। সেখানে কর্মরত সরকারী ও বেসরকারী চিকিৎসা দলগুলোকে রাতে থাকার ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করণ।
২. গর্ভবতী ও প্রসূতি নারী এবং নবজাতক শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ ও পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা দেয়াকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান।
৩. নারীদের নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় শিবিরে পুলিশি পাহারা জোরদার, বিশেষ করে নারী পুলিশ মোতায়েন।
৪. যেহেতু মিয়ানমার থেকে আগত শরণার্থীর ৮০ ভাগই নারী ও শিশু সেহেতু ত্রাণকার্যে অধিক সংখ্যক নারী কর্মী অন্তর্ভুক্ত করণ।
৫. আশ্রয় শিবিরগুলোতে নারী ও শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য বিপর্যয় মোকাবেলায় মনোস্তাত্বিক-সামাজিক কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা গ্রহণ।
নারীকে পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে অধিকারসম্পন্ন নাগরিক ও মর্যাদাসম্পন্ন মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ১৯৮৩ সাল থেকে নারীপক্ষ কাজ করে আসছে। বর্তমানে দেশের ৩৯টি জেলায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
আমাদের বিশ্বাস উল্লেখ্য বিষয়গুলো আপনি অনুধাবন করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আপনার আন্তরিকতায় শরণার্থীদের জন্য জরুরী ত্রাণ কর্মসূচী সুসম্পন্ন হবে।
ধন্যবাদ সহ,
রেহানা সামদানী
সভাপতি, নারীপক্ষ
সদয় অবগতির জন্য-
– মোঃ রিয়াজ আহমেদ, মহাপরিচালক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, মহাখালী, ঢাকা।
– জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার