Select Page
২০০৪-০৩-০৮
আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০০৪

ঘোষণাপত্র

”সর্বস্তরে সর্বক্ষেত্রে নারীর কাজের মূল্যায়ন”

৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। আমরা ঐতিহাসিকভাবে এই দিনটিকে যুক্ত করে থাকি বিশ্বব্যাপী নারী অধিকার আন্দোলনের বিভিন্ন সংগ্রামী অধ্যায়ের সাথে। ১৮৫৭ সালে ৮ই মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে সেলাই কারখানার নারী শ্রমিকরা বিপদজনক ও অমানবিক কর্ম পরিবেশ, স্বল্প মজুরী ও দৈনিক ১২ ঘন্টা শ্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল বের করে। তাদের সেই শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর পুলিশ হামলা চালায়। তিন বছর পর ১৮৬০ সালের ৮ই মার্চ নারী শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের দাবী আদায়ের লক্ষ্যে নিজস্ব ইউনিয়ন গঠনে সমর্থ হয়।

এই সকল ঘটনা ধারার সম্মিলনের মধ্য দিয়েই নারীদের বিভিন্নমুখী প্রতিবাদী ভূমিকার প্রতি আন্তর্জাতিক সংহতি প্রকাশ, সমর্থন দান ও সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরীর প্রতীক হিসাবে একটি দিনকে চিহ্নিত করার উপলব্ধি জাগে। অতঃপর ১৯১০ সালে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলনে জার্মান সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী ক্লারা জেটকিনের প্রস্তাব অনুসারে ৮ই মার্চকে বিশ্ব নারী দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়।

নারী আন্দোলনের এই প্রতিবাদী ধারাকে তুলে ধরে বাংলাদেশে এই দিনটি পালনের লক্ষ্যে ১৯৯১ সালে বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্যাপন কমিটি’ গঠিত হয়। বিগত ১৪ বছর ধরে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে এই কমিটি নারী আন্দোলনের বিভিন্ন দাবী তুলে ধরে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ”সর্বস্তরে সর্বক্ষেত্রে নারীর কাজের মূল্যায়ন”।

সন্তান ধারণ ও জন্মদানের ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে নারীর উপর চাপান হয়েছে পরিবার ও সংসারের সকল দায়িত্ব। হাজার বছর ধরে এই সকল দায়িত্ব নারী একাই পালন করে আসছে। ঘরের কাজের মূল্য থাকা সত্ত্বেও এই কাজের নেই কোন স্বীকৃতি, নেই যথার্থ মূল্যায়ন। ঘরের বাইরে পুরুষের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশায় জড়িত আজকের নারী কর্মক্ষেত্রে নানা বাধা বিপত্তি মোকাবেলা করার সাথে সাথে গৃহিনীর সকল দায়িত্বও পালন করছে। এতে করে পুরুষের তুলনায় নারীকে অধিক দায়িত্ব ও কাজের বোঝা বহন করতে হচ্ছে।

নারী তার অধিকাংশ কাজেরই কোন আর্থিক মূল্য পায় না। এমনকি যখন নারীর কাজের আর্থিক মূল্য দেয়া হয়, তখনও জাতীয় পরিসংখ্যানে নারীর অবদানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না অথবা বাদ দেওয়া হয়। নারীর পারিশ্রমিকহীন গৃহস্থালী কাজ বিশ্বের মোট অর্থনৈতিক উৎপাদনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের সমান বলে বিবেচনা করা হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কৃষিকাজ এবং সংসারের কাজের মজুরি-শ্রম হিসেবে বিবেচনা করলে দেখা যায় যে নারীর কাজের সময় পুরুষের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশী। আবার নারীর অর্থনেতিক অবদানকে উপেক্ষা করার পেছনে কারণ হল এই যে, তারা মূলত অনানুষ্ঠানিক (ইনফরমাল) খাতের অন্তর্ভুক্ত, যেখানে পদ্ধতিগতভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হয় না। সম্পদ বরাদ্দের ক্ষেত্রেও নারীকে ক্রামগত উপেক্ষা করা হয়। নিছক ক্ষমতাহীন ব্যবস্থাপক হিসেবে সংসারে নারীর অবস্থান জেন্ডার বৈষম্যের কুফলকে আরও তীব্র করেছে। শিক্ষা, অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তি, সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ ও প্রজনন স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রাপ্তির সুযোগ এসব ক্ষেত্রে নারীর সীমিত সুযোগের তাৎক্ষণিক কুফল বা ক্ষতি মারাত্মক।

পরিবারে ও সমাজে নারীর অধ:স্তন অবস্থা পরিবর্তন করতে হলে নারীর সকল কাজের সঠিক মূল্যায়ন ও হিসাব আবশ্যক। সেই সাথে প্রয়োজন নারী-পুরুষের চিরাচরিত শ্রম বিভাজনের রীতি ভেঙ্গে ঘরের কাজে পুরুষের অংশগ্রহণ।

নারী আজ তার মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে ঘরে-বাইরে সর্বস্তরে সর্বক্ষেত্রে নিজেকে যোগ্য প্রমান করেছে। সন্তান জন্মদান ও লালন পালন এবং প্রতিদিনের পারিবারিক কাজের বাইরেও যে তার একটা পরিচয় আছে সেটা আজ প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু হাজার বছরের কুপমন্ডুকতা ও সংকীর্ণ মানসিকতায় আবদ্ধ এই সমাজ ও সংস্কৃতি নারীর কাজের সঠিক মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ। সেই সাথে ব্যর্থ বুদ্ধিজীবি সমাজ, রাজনীতি এবং রাষ্ট্র।

নারী পুরুষের কাজের মজুরীতে বৈষম্য, নারীর উপর অতিরিক্ত কাজের বোঝা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অনুপস্থিতি, কর্মক্ষেত্রে নারীর কাজের অনুপযোগী পরিবেশ, নিরাপত্তাহীনতা এবং সর্বোপরি প্রতিটি স্তরের সকল ক্ষেত্রে চরম অসহযোগিতা নারীর পূর্ণ বিকাশের পথে অন্তরায়। আজ সময় এসেছে পরিবারে, সমাজে ও জাতীয় অর্থনীতিতে নারীর কাজের যথার্থ মূল্যায়ন ও যথাযথ হিসাব নিশ্চিত করা। তাই এ বছর নারী দিবসে আমাদের দাবি:
১. জাতীয় অর্থনীতিতে নারীর গৃহকাজের স্বীকৃতি ও হিসাব নিশ্চিত করতে হবে।
২. সকল কাজের সকল পেশায় নারীর প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৩. যৌন নির্যাতন-নিপীড়নমুক্ত কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
৪. নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. নারীর প্রয়োজন অনুযায়ী শিশু যত্ন কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।
৬. সমান কাজে সমান পারিশ্রমিক নিশ্চিত করতে হবে।
৭. প্রতিবন্ধী নারীদের উপযোগী কাজ ও কাজের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

নারীপক্ষ
 র‌্যাংগস নীলু স্কোয়ার (৫ম তলা), সড়ক- ৫/এ, বাড়ী- ৭৫, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯, বাংলাদেশ।
জিপিও বক্স-৭২৩, ঢাকা-১০০০, ফোন : ৮৮০-২-৮১১৯৯১৭, ৮১৫৩৯৬৭, ফ্যাক্স : ৮৮০-২-৮১১৬১৪৮
ই-মেইল : naripokkho@gmail.com, ওয়েব : www.naripokkho.org.bd

Pin It on Pinterest

Share This