Select Page
২০২২-১১-০৮
নারীর স্বাস্থ্য ও অধিকার সংক্রান্ত এ্যাডভোকেসি পার্টনারশীপ (WHRAP)  প্রকল্প

নারীকে পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে  অধিকারসম্পন্ন নাগরিক ও মর্যাদাসম্পন্ন  মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ১৯৮৩ সাল থেকে নারীপক্ষ কাজ করে আসছে। নারীপক্ষ যে সকল ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করে তার মধ্যে ‘নারীর স্বাস্থ্য ও প্রজনন অধিকার’ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।  নারীর স্বাস্থ্য ও প্রজনন অধিকার আন্দোলনের আওতায় বাংলাদেশে অধিক প্রসূতি মৃত্যুর হার ক্রমশ সর্বনিমণ পর্যায়ে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকারের স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় নারীর প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে “নারীর স্বাস্থ্য ও অধিকার সংক্রান্ত এ্যাডভোকেসি পার্টনারশীপ (WHRAP)”  প্রকল্পের প্রথম অধ্যায় এপ্রিল ২০০৩- জুন  ২০০৬, দ্বিতীয় অধ্যায় জুন ২০০৬-সেপ্টেম্বর ২০১০ এবং তৃতীয় অধ্যায় এর প্রস্তুতিতে  অর্ন্তবতীকালীন পর্ব অক্টোবর ২০১০-জুন ২০১১  শেষ হয়েছে।  জুলাই ২০১১-জুন ২০১৪ পর্যন্ত তৃতীয় অধ্যায় এর জন্য ডেনমার্ক সরকারের আর্থিক অনুদানপ্রাপ্ত Danish Family Planing Association (DFPA) এর মাধ্যমে  দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশে এই প্রকল্প পরিচালিত হবে। মালয়েশিয়াস্থ নারী সংগঠন Asian Pacific Resource and Research Centre for Women (ARROW) এই প্রকল্পের সমন্বয়ক।

নারীপক্ষ  এ প্রকল্পের আওতায়  বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল বিভাগের ৫টি জেলার স্থানীয় সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমে সরকারী স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র ও হাসপাতালসমূহ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং সেবার মান উন্নয়নে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে দেনদরবার ও এ্যাডভোকেসী করছে। কাজটি সমন্বয়  করছে দক্ষিণাঞ্চলের  বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ‘‘সংকল্প ট্রাস্ট’’, যার  প্রধান কার্যালয় বরগুনা জেলায় তবে প্রকল্প এলাকার সকল জেলায় সংকল্প ট্রাষ্ট এর আঞ্চলিক কার্যালয় আছে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রত্যন্ত  গ্রামাঞ্চলে বসবাসরত নারীদের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা এবং  জরুরী  প্রসূতিসেবা প্রদান নিশ্চিত করতে সরকারি স্বাস্থ্যসেবার জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ।

নারীর স্বাস্থ্য ও প্রজনন অধিকার বিষয়ে এ্যাডভোকেসী করা এবং স্বাস্থ্য অধিকার সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা। এই কাজের সাথে ‘‘জনগণের স্বাস্থ্য আন্দোলন (পিপলস্ হেলথ্ মুভমেন্ট- পিএইচএম)- বাংলাদেশ’’ ও ‘‘দুর্বার নেটওয়ার্ক’’ এর সদস্যদের যুক্ত করা হয়েছে।  বর্তমান সময়ে কর্ম এলাকার ৪টি জেলায় (বরিশাল, বরগুনা, ঝালকাঠী ও পটুয়াখালী) ‘‘নারীস্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জোট’’ গঠিত হয়েছে।

প্রকল্পের স্থানীয় সহযোগী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে প্রকল্প এলাকার যে সকল সরকারী স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও তথ্য সংগ্রহ করা হয়, সেগুলো হলো–

বিভাগীয় পর্যায়ে- বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এর প্রসূতি বিভাগ
২টি জেলা সদর হাসপাতাল (পটুয়াখালী ও বরগুনা)
২টি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র (পটুয়াখালী ও বরগুনা)
১১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (পাথরঘাটা, আমতলী, বাউফল, বেতাগী, দশমিনা, মির্জাগঞ্জ, রাজাপুর, বামনা, কাউখালী, কাঠালিয়া ও বানারী পাড়া)
৬৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র

জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন সমূহের হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটি ও ইউনিয়ন পরিষদের স্বাস্থ্য বিষয়ক স্থায়ী কমিটি গঠন ও সভা নিয়মিত করার মাধ্যমে উক্ত কমিটি যাতে সংশ্লিষ্ট সরকারী স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানসমূহের সেবাদানকারীদের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা ও সেবার মান উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখে সে জন্য বিশেষ তৎপরতা চালিয়ে আসছে।

উদেশ্যসমূহঃ

স্থানীয় পর্যায়ে মানসম্মত স্বাস্থ্য ও প্রজনন সেবার জন্য চাহিদা বৃদ্ধি
জাতীয় নীতিমালা ও কর্মসূচীগুলিতে নারীর স্বাস্থ্য ও প্রজনন অধিকার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনার  জন্য স্থানীয় ও  জাতীয় পর্যায়ে এ্যাডভোকেসি করা এবং এতে সুশীল/নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি
নারীর স্বাস্থ্য ও প্রজনন অধিকার নেটওয়ার্কের দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং স্থানীয় সংগঠনের  ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালীকরণ

প্রকল্প এলাকা

ক্রমিক নং জেলা উপজেলা
বরিশাল বরিশাল সদর, বানারী পাড়া
পটুয়াখালী পটুয়াখালী সদর, দশমিনা, বাউফল, মির্জাগঞ্জ
বরগুনা বরগুনা সদর, আমতলী, বেতাগী, পাথরঘাটা, বামনা
ঝালকাঠি কাঠালিয়া, রাজাপুর
পিরোজপুর কাউখালী

মূলকার্যক্রম:

কার্যক্রম লক্ষ্য প্রত্যাশিত ফলাফল
সরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলিতে সেবার মান উন্নত করার জন্য স্থানীয় সরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা প্রকল্পটির দ্বিতীয় অধ্যায়ের সময়ের তুলনায় তৃতীয় অধ্যায়ে ৫টি জেলার ১৪টি উপজেলার ৬৪টি ইউনিয়নের সেবাপ্রার্থী নারীর সংখ্যাতে ২৫% বৃদ্ধি ·     বরিশাল বিভাগের ৫টি জেলার স্থানীয় জনগণের নারীর স্বাস্থ্য ও প্রজনন অধিকার সেবার চাহিদা বৃদ্ধি পাবে

·     স্থানীয় জনগণ বিশেষ করে নারীরা সরকারী স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান থেকে মানসম্মত সেবা দাবী করতে পারবে

স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ’র সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করা প্রকল্প এলাকার ১৪টি উপজেলা, ২টি জেলা ও ৬৪টি ইউনিয়নের সরকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ’র সাথে প্রতিমাসে একবার যোগাযোগ
  • সরকারী হাসপাতালের সার্বিক ব্যবস্থাপনা উন্নত হবে,
  • সেবাদানকারীদের জবাবদিহিতা  নিশ্চিত হবে,
  • নারীর স্বাস্থ্য ও প্রজনন অধিকার সর্ম্পকে সেবাদানকারীরা সচেতন হবেন এবং মান সম্মত সেবা প্রদানে উৎসাহিত হবেন
পর্যবেক্ষণ ও এ্যাডভোকেসী করার জন্য স্থানীয় সহযোগী সংগঠনের দক্ষতা বৃদ্ধির করা

 

বিভিন্ন কর্মশালা/প্রশিক্ষণ মাধ্যমে ১৬টি স্থানীয় সহযোগী সংগঠনদের ৩২জন প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রশিক্ষণ/কর্মশালার মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নত করতে স্থানীয় সহযোগী সংগঠনসমূহ প্রশাসনের সাথে দেন দরবার করতে পারবে  এবং সেবার মান উন্নত হবে, নারীদের হাসপাতালে প্রবেশাধিকার/অভিগম্যতা বাড়বে
সহযোগী সংগঠনের সদস্যরা ইউনিয়ন পরিষদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাগুলি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবে

কমিটির সদস্যদের নারীর স্বাস্থ্য ও প্রজনন অধিকার সর্ম্পকে সংবেদনশীল করার জন্য কর্মশালা করা হবে

  • ৬৪টি ইউনিয়ন পরিষদের দ্বি-মাসিক সভা ও ১৪টি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির মাসিক সভায় (সরকারী পরিপত্র অনুযায়ী) স্থানীয় সহযোগী সংগঠনের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবে
  • কমিটির সদস্যদের সাথে নারীর স্বাস্থ্য ও প্রজনন অধিকার বিষয়ক তিনটি কর্মশালা করা
  • স্থানীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে এবং সভায় কমিটির সদস্যরা নারী স্বাস্থ্য অধিকার বিষয়ক এজেন্ডা দিবে ও ফলোআপ করবে
  • স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের কিছু সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে
  • কমিটির সদস্যরা নারীর স্বাস্থ্য ও প্রজনন অধিকার বিষয়ে অধিক সংবেদনশীল হবে এবং তা রক্ষার্থে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে
প্রসূতি মৃত্যুর কেস স্টাডি সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, প্রতিবেদন তৈরী ও বিস্তৃতিকরণ

 

প্রকল্প এলাকা থেকে ২০ টি প্রসূতি মৃত্যুর কেস স্টাডি সংগ্রহ এবং এর প্রতিবেদন তৈরী করে স্থানীয় ও জাতীয় নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে তুলে ধরা
  • প্রসূতি মৃত্যুর কারণ বের হয়ে আসবে
  • সরকার সকল সত্মরের সরকারী হাসপাতালে প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা ও প্রসূতি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে বাধা, প্রতিবন্ধকতা দুর করতে সচেষ্ট হবে

 

স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নারীর স্বাস্থ্য ও প্রজনন অধিকার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কমিটিগুলিতে অন্তরভূক্ত হওয়ার জন্য লবিং ·     ১৬টি স্থানীয় সহযোগী সংগঠনের মধ্যে অন্তত ১৩টি সংগঠন হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হিসাবে অন্তর্ভূক্ত 

·     নারীর স্বাস্থ্য ও প্রজনন বিষয়ে স্থানীয় সহযোগী সংগঠন কার্যক্রম সর্ম্পকে সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যদের অবহিতকরণ এবং এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করণ

·     স্থানীয় সহযোগী সংগঠন  কমিটির সদস্য হয়ে বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো তুলে ধরবে এবং সেগুলো সমাধানে সুপারিশ দেবে

·     কমিটির সদস্যরা মানসম্মত সেবা প্রদানে সেবাদানকারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে

 

 

জাতীয় পর্যায়ের নীতিনির্ধারক, স্বাস্থ্য প্রশাসন, প্রকল্প এলাকার সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সাথে সর্ম্পক তৈরী  এবং যোগাযোগ স্থাপন   ·     স্থানীয় সমস্যাগুলো তুলে ধরার  জন্য নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে প্রতি তিনমাসে একবার যোগাযোগ

·     প্রকল্পের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন প্রদান

·     নিয়মিত যোগাযোগ ও সর্ম্পক স্থাপন হবে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক

·     সমস্যাগুলো সমাধানে নীতি নির্ধারকগণ উদ্যোগ গ্রহণ করবে

 

জেলা ভিত্তিক নারী স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জোট গঠন ও শক্তিশালীকরণ বরগুনা, পটুয়াখালী ও বরিশাল জেলায় নারী স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জোট গঠিত আছে এবং পিরোজপুর ও ঝালকাঠী জেলায় আরো দুইটি গঠন করা হবে। জোটের সদস্যদের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত হবে এবং সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা তৈরী হবে

কর্মদল
রীনা সেনগুপ্তা
রীনা সেনগুপ্তা
লুৎফুন্নাহার আজাদ
লক্ষ্মীরাণী দে 

Pin It on Pinterest

Share This