ধর্ষণ উত্তর ডাক্তারী পরীক্ষা স্থানীয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণ
নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ১৯৮১ সালে ল্যাটিন আমেরিকার নারীদের একটি সম্মেলনে ২৫ নভেম্বরকে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৩ সালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব মানবাধিকার সম্মেলনে এ দিবসটি স্বীকৃতি পায়। বাংলাদেশে নারীপক্ষ ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে এই দিবস পালন করে আসছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘‘ধর্ষণ উত্তর ডাক্তারী পরীক্ষা স্থানীয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণ”।
নারীর প্রতি সহিংসতার একটি নিষ্ঠুর ধরণ হচ্ছে ধর্ষণ। ধর্ষণের শিকার নারীর মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়। অভিযোগ প্রমাণের জন্য মেডিকো-লিগ্যাল পরীক্ষা বা ডাক্তারী পরীক্ষার সনদপত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য। ধর্ষণের শিকার নারীর শারীরিক, প্যাথলজী, রেডিওলজী এবং রাসায়নিক পরীক্ষাকে মেডিকো-লিগ্যাল পরীক্ষা বুঝায়। অথচ অসচেতনতা, সমাজের নেতিবাচক মনোভাব, সংকোচ ও দ্বিধাদ্ব›দ্ব নির্যাতনের শিকার নারী অথবা তার পরিবারকে অভিযোগ দায়ের ও মেডিকো-লিগ্যাল পরীক্ষার ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত করে। এজন্য ধর্ষণের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির ডাক্তারী পরীক্ষা করানো সম্ভব হয় না, যা কিনা বাঞ্ছনীয়। তদুপরি রয়েছে হাসপাতালের দুরত্ব, যানবাহন সমস্যা, আদালতের আদেশপত্র সংগ্রহসহ আরও অন্যান্য সীমাবদ্ধতা। এভাবেই অনেক ঘটনায় মেডিকো-লিগ্যাল পরীক্ষা হচ্ছে না বা হলেও আলামত পাওয়া যাচ্ছে না, যা মামলা প্রমাণে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
সরকার নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে ও নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় নারীদের উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় উপযুক্ত রূপে সম্পৃক্ত করতে বদ্ধ পরিকর। এরই ধারাবাহিকতায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন সংশোধন আইন ২০০৩ আইনের ৩২ নং ধারায় নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুর মেডিকোলিগ্যাল পরীক্ষা সংক্রান্ত বিধান কার্যকর করার নির্দেশনা দেয়া রয়েছে।
২০০২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জারীকৃত নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে।
* পুলিশের রেফারেন্স ছাড়াই ধর্ষণের শিকার নারী ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাৎক্ষণিকভাবে মেডিকেল সুবিধাসহ অন্যান্য পরীক্ষা করবেন।
* থানা কমপ্লেক্সসহ যে কোন সরকারী সংস্থাপনায় এই পরীক্ষা করানো যাবে ও প্রতিটি হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ধর্ষণের শিকার নারীকে সার্বক্ষণিক সুবিধা দেয়া হবে এবং
* যার পরীক্ষা করা হবে তাকেও মেডিকেল সার্টিফিকেটের কপি দিতে হবে।
এখন পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র তথ্যগুলো জানেন না। তাই এই দিবসে নারী সমাজের দাবী ঃ
* অবিলম্বে সরকারী সার্কুলার (পরিপত্র) সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
* যে ফরমটিতে ডাক্তার মেডিকোলিগ্যাল পরীক্ষার প্রতিবেদন তৈরী করেন সেই ফরমটি অতিসত্ত¡র ছাপানোর ব্যবস্থা করে তা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
* সরকারকে তার অঙ্গীকার পালনের লক্ষ্যে ডাক্তারী পরীক্ষা নিশ্চিতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে হবে।
* ডাক্তারী পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সরকারীভাবে গৃহীত এই পদক্ষেপ নারী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফসল। এই প্রচেষ্টাকে সফল করতে হলে সরকারের পাশাপাশি জনগণ ও সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিকতা, সহযোগিতা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সম্মিলিত উদ্যোগই সরকারী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে নির্যাতনের শিকার নারীর ভোগান্তি দূর করতে পারে ।
আগামী ২৫ নভেম্বর ২০০৪ নারী নির্যাতন প্রতিবাদ দিবস উপলক্ষ্যে একটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। দল-মত-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এই সমাবেশে উপস্থিত হয়ে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আপনার অঙ্গীকার ব্যক্ত করুন।
অনুষ্ঠানসূচি :
তারিখ স্থান সময় কর্মসূচি
২৪/১১/০৪ প্রেসক্লাব ৩.০০-৪.০০টা সংবাদ সম্মেলন
২৫/১১/০৪
মানিক মিয়া এভিনিউ
মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে রাসেল স্কয়ার হয়ে ধানমন্ডি (৮নং ব্রীজ) দিয়ে মুক্তমঞ্চে সমাবেশ ৩.৩০টায়
৪.০০ টায় জমায়েত
মিছিল শুরু হবে রাসেল স্কয়ার হয়ে মুক্তমঞ্চে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
২৫/১১/০৪ মুক্তমঞ্চ সমাবেশ
দুর্বার নেটওয়ার্ক কর্মসূচি, নারীপক্ষ