Select Page
২০২২-১১-০৮
নারীবাদী অংশগ্রহণমূলক গবেষণা

Asia Pacific Forum on Women, Law and Development (APWLD) তাদের ‘Feminist Participatory Action Research’ (নারীবাদী অংশগ্রহণমূলক গবেষণা) এর জন্য মোট ১০টি দেশে প্রস্তাব পাঠায়। বাংলাদেশ থেকে নারীপক্ষকে APWLD তাদের ‘Feminist Participatory Action Research’ (নারীবাদী অংশগ্রহণমূলক গবেষণা) পরিচালনা করার জন্য সহযোগী সংগঠন হিসাবে নির্বাচন করে। সেই আহবানে সাড়া দিয়ে নারীপক্ষ ঢাকার কালশীতে অবস্থিত কুর্মিটোলা ক্যা¤প (কেটিসি) এর তরুন নারীর জীবন অভিজ্ঞতা নিয়ে গবেষণা ও বাস্তবতার আলোকে বিশ্লেষণ করার লক্ষ্যে “নারীবাদী অংশগ্রহণমূলক গবেষণা প্রকল্প আগস্ট ২০১৫ থেকে বাস্তবায়ন শুরু করে। এই গবেষণা প্রকল্পটি শুধুমাত্র ঢাকার কালশীতে অবস্থিত কুর্মিটোলা ক্যাম্প (কেটিসি) তে পরিচালিত হচ্ছে যেখানে মূলত উর্দুভাষীরা বসবাস করেন। এখানে প্রায় সাড়ে ছয়শত পরিবার বাস করছেন। প্রাপ্ত বয়স্ক প্রায় সকলের বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে।

নারীপক্ষ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিভিন্ন প্রান্তিক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করেছে। তবে বাংলাদেশে ভাষাগতভাবে সংখ্যালঘু গোষ্ঠী যেমন উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর সাথে নারীপক্ষ কখনও কাজ করেনি। এর পরিপ্রক্ষিতে নারীপক্ষ উর্দুভাষী নারীদের সাথে কাজ করা শুরু করে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। নারীপক্ষ খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে, কালশীর উর্দুভাষী ক্যা¤পগুলোতে নগণ্য সংখ্যক এনজিও কাজ করছে। সেই কারণে, নারীপক্ষ কালশীতে অবস্থিত কুর্মিটোলা ক্যাম্প (কেটিসি) কে প্রকল্প এলাকা হিসাবে নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশের প্রান্তিক গোষ্ঠীর নারীদের উপর সামাজিক প্রভাব চিহ্নিত করে তার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন নীতি এবং আইন পর্যালোচনা করাই ছিল এই প্রকল্পের লক্ষ্য। যেহেতু কালশীতে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী বহুদিন ধরে একত্রিত হয়ে একই ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। প্রায় সকল নারীর জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেও নাগরিক সুযোগ সুবিধা গুলো স¤পর্কে তাদের ন্যূনতম ধারণা নেই। বিশেষ করে তরুন নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নির্যাতন বিষয়ে সচেতনতা নাই বললেই চলে। তাই, ক্যাম্পের নারীদের সাথে কাজ করার লক্ষ্যে নারীপক্ষ “নারীবাদী অংশগ্রহণমূলক গবেষণা” প্রকল্প বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেয়।

বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়নে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। সরকারী পর্যায়ে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন কমিটিতে এক তৃতীয়াংশ নারী সদস্য থাকার নীতি গ্রহণ করেছে। ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ আয়োজিত মিলিনিয়াম সামিটে জাতিসংঘ সদস্যভূক্ত সকল দেশ সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (Millennium Development Goals) ঘোষনায় স্বাক্ষর করে এবং বাংলাদেশ সরকার লিঙ্গ সমতা উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়ন সংশ্লিষ্ট তৃতীয় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে জাতীয় সংসদে নারীদের অংশগ্রহনের লক্ষ্যমাত্রা ১৯.৭১ থেকে ৩৩ এ উর্ত্তিণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতকরণ এবং নারীর ক্ষতায়নের উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ উন্নয়ন সাধন করছে। সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নেও টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে। বাংলাদেশ CEDAW, Beijing Platform for Action, এমডিজি এবং এসডিজি এর লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ দিন দিন বাড়ছে। নারীর ক্ষমতায়ন দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করছে। সরকারের এতো উদ্যোগ গ্রহনের পরেও দেখা যাচ্ছে নারীরা পারিবারিক, সামাজিক অনেক সীমাবদ্ধতার কারণে বেশিরভাগ সময়ে এই সকল সুযোগ গ্রহণ করতে পারছে না। নারীর জনপ্রতিনিধিত্ব তৈরী ও সিদ্ধান্ত গ্রহনে অংশগ্রহণ বাড়ানোর লক্ষ্যে নারীপক্ষ “নারীবাদী অংশগ্রহণমূলক গবেষণা” প্রকল্প বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেয়। সরকার গৃহীত দারিদ্র বিমোচন কৌশলপত্র এবং রূপকল্প ২০২১ অর্জনের লক্ষ্যে এই প্রকল্পটি অবদান রাখবে।

লক্ষ্য: তরুন নারীর জীবন অভিজ্ঞতা নিয়ে গবেষণা, বাস্তবতার আলোকে বিশ্লেষণ করা

উদেশ্যসমূহ:
* ঢাকায় বসবাসরত পিছিয়ে পড়া উর্দুভাষী তরুন নারীর জীবন অভিজ্ঞতা নিয়ে গবেষণা, বাস্তবতার আলোকে বিশ্লেষণ করা
* তাদের জীবন মান উন্নয়ণের সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করণ
* সীমাবদ্ধতা বিশ্লেষণ করে এডভোকেসী কৌশল চিহ্নিত করণ
* উর্দুভাষী তরুন নারীর জন্য সঠিক ও ন্যায় সংগত উন্নয়ণের জন্য সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করণ

কার্যক্রমঃ

ক) গবেষণা কার্যক্রমঃ

১। জরিপঃ কেটিসি ক্যাম্পে বসবাসরত উর্দুভাষী মোট ১০০ জনের উপর জরীপ করা হয়, যার মধ্যে ৬০ জন নারী ও ৪০ জন পুরুষ ছিলেন। যাদের কাছ থেকে মূলত জানা হয় ক্যাম্পের জীবনমানের অবস্থা, নারীর অবস্থা কেমন এবং নারীদের কি কি সমস্যা রয়েছে ।

২। সাক্ষাৎকারঃ কেটিসি ক্যাম্পে বসবাসরত উর্দুভাষী ১৩ জন নারীর সাক্ষাতকার নেওয়া হয়। তারা নারী হিসাবে নিজেদের সমস্যার কথা খুলে বলেছেন। তারা ক্যাম্পে বসবাসের অভিজ্ঞতা ও সমস্যাগুলোর কথা বলেছেন।

ফলাফলঃ জরিপ ও সাক্ষাতকারের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি কেটিসি ক্যাম্পের উর্দুভাষী নারীরা দারিদ্রতা, অশিক্ষা, কর্মসংস্থানের অভাবে ভুগছেন। এছাড়াও নারীদের জীবনে রয়েছে নানাবিধ সমস্যা। বাল্য বিবাহ, নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি, যৌতুক ইত্যাদি সমস্যা নারীর জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। বর্তমানে গবেষণার ফলাফল নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন তৈরীর করা হচ্ছে।

খ) সভা আয়োজনঃ
উর্দুভাষী নারী, স্থানীয় চেয়ারম্যান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত আসনের মহিলা ওয়ার্ড কমিশনার মেহেরুন্নেসা এবং ক্যাম্পের স্থানীয়দের দ্বারা গঠিত কমিটিসমূহের সদস্যবৃন্দের সাথে স্থানীয় পর্যায়ে কয়েকটি সভা করা হয়েছে। যেসব সভায় গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে। আলোচনা সভায় উর্দুভাষী নারীরা মন খুলে নিজেদের সমস্যার কথা বলেছেন ও কিভাবে নিজেরা মিলে সমস্যার মোকাবিলা করা যায় তাও আলোচনা করেছেন।

গ) উঠান বৈঠকঃ
নারীর অধিকার ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সরকার প্রণীত আইনগুলো স¤পর্কে ধারণা প্রদানের জন্য প্রকল্প এলাকার নারীদের নিয়ে ১৫ টি উঠান বৈঠক করা হয়েছে।

Pin It on Pinterest

Share This