Select Page
২০২২-১১-০৭
নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন ক্ষেত্র নির্মাণ

নারীপক্ষ মূলত ছয়টি ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করে তার মধ্যে নারীর স্বাস্থ্য ও প্রজনন অধিকার বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার আন্দোলনের আওতায় বাংলাদেশে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্য নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রভাব চিহ্নিত করে তার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন নীতি এবং আইন পর্যালোচনা করতে নারীপক্ষ মালয়েশিয়াস্থ নারী সংগঠন Asian Pacific Resource and Research Centre for Women (ARROW) এর আর্থিক সহায়তায় জুলাই ২০১৪ থেকে ‘নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন ক্ষেত্র নির্মাণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

কঠিন ধর্মীয় অনুশাসন, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিধিনিষেধের কারণে বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীদের নিজেদের সাধারণ স্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার বিষয়ে যথাযথ তথ্য পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এই নীরবতা তাদের জীবনে বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলছে। সমাজ নিয়ন্ত্রিত নীতি এবং বিশ্বাস নারীর ভূমিকা এবং অবস্থানকে বৈষম্যমূলক করে তুলেছে। একজন বিবাহিত নারী স্বামীর সাহায্য ছাড়া প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ক সেবা নিতে পারছে না এবং অবিবাহিত নারীরা প্রজননস্বাস্থ্য সেবার বাইরে থেকে যাচ্ছে। অথচ: প্রজননস্বাস্থ্য সেবা, গর্ভকালীণ সেবা ও নিরাপদ প্রসব এবং প্রসব পরবর্তী সেবা পাওয়া একজন নারীর মৌলিক অধিকার কিন্তু বাংলাদেশের অনেক নারী নিজে ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা এখনো এই স্বাস্থ্য অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়। এসব ক্ষেত্রে নারীরা বেশীর ভাগ সময় স্বামী, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী, মা-বাবা অথবা পরিবার প্রধানের ইচ্ছা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এছাড়া প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়টি একটি গোপন বিষয়- এই মনোভাবের কারণে ছেলেমেয়েরা যথাসময়ে এই বিষয়ে সঠিক তথ্য এবং জ্ঞান পায় না; যার ফলে নারীর প্রজননস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে এবং অসংখ্য গর্ভবতী ও প্রসূতি নারী অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। সঠিক জ্ঞান এবং সচেতনতার অভাবে অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারনের ঘটনাও ঘটে চলেছে অনবরত।

কিশোর-কিশোরীদের নিজেদের শরীর এবং তার পরিবর্তন বিষয়ে জানা বিশেষ প্রয়োজন। প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষা কারীকুলামে কতটুকু উল্লেখ আছে এবং সেখানে ধর্মীয় ও সামাজিক বিধিনিষেধের প্রভাব কতখানি রয়েছে তা পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ্যাডভোকেসী করার লক্ষ্যে নারীপক্ষ ‘নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন ক্ষেত্র নির্মাণ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

উদেশ্যসমূহ:
* মাধ্যমিক শিক্ষা কারিকুলামে প্রজননস্বাস্থ্য ও অধিকার বিষয়ে চাহিদা নিরূপন
* মাধ্যমিক শিক্ষা কারীকুলামে প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার বিষয়ে যা অর্ন্তভুক্ত করা প্রয়োজন সেগুলো চিহ্নিতকরণ
* মাধ্যমিক শিক্ষা কারিকুলামে এবং শিক্ষাদান পদ্ধতিতে প্রজননস্বাস্থ্য ও অধিকার বিষয়ে সামাজিক প্রভাবের মাত্রা যাচাইকরণ
* শিক্ষাক্ষেত্রে প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্ত করণের জন্য এডভোকেসী কৌশল তৈরি।

প্রকল্প এলাকা:
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এর ১- ৫৬ নং ওয়ার্ড

কার্যক্রম:
১. গবেষণা:
মাধ্যমিক শিক্ষা কারীকুলামে প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার বিষয়ে যা অর্ন্তভুক্ত করা প্রয়োজন সেগুলো চিহ্নিতকরণ ও মাধ্যমিক শিক্ষা কারীকুলামে এবং শিক্ষাদান পদ্ধতিতে প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার বিষয়ে সামাজিক প্রভাবের মাত্রা যাচাইকরণের লক্ষ্যে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এই গবেষণা কার্যক্রমের আওতায় প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতির মধ্যে সাধারণ শিক্ষা মাধ্যম, ইংরেজি শিক্ষা মাধ্যম (কেমব্রিজ ও এড-এক্সেল) মাদ্রাসা শিক্ষা আলিয়াহ্ (ইংরেজি ও বাংলা) মাধ্যম এর ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সকল পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর মোট ১০ টি বাংলা মাধ্যম এবং মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সর্বমোট ১২০ জন শিক্ষার্থী, ২০ জন বিষয় শিক্ষকসহ ২৫ জন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কর্মরত জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, জাতীয় শিক্ষা কমিশন, শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ, গবেষক, অভিভাবক অংশগ্রহণ করেছেন।

গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল :
 শ্রেণিকক্ষে পাঠদান পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে জড়তা, অস্পষ্টতা, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়।
 ধর্মীয় বিশ্বাস ও বিধিবিধানও এতে প্রভাব ফেলে।
 শিক্ষকগণ যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন না বা খোলামেলা আলোচনা করেন না

সুপারিশ:
 যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনকে মৌলিক মানবাধিকার বিষয় বিবেচনায় এর আলোকে শিক্ষানীতি ও পাঠ্যক্রমকে মানসম্মত করা এবং ২০১৩ সালে বাতিলকৃত বিষয় সমূহ পুন: সংযোজন করা
 স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে সমন্বিত যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা বিষয় অন্তর্ভুক্ত এবং শ্রেণিকক্ষে পাঠদান পদ্ধতি আধুনিক ও সহজিকরণ করা এবং শিক্ষকদের যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করা
 সকলের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা
 যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়টি পারিবারিক ও সামাজিকভাবে এখনও গোপন বা লজ্জাকর এবং উপেক্ষিত, তাই গণমাধ্যম ব্যবহার করে এ সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেয়া।

২. এ্যডভোকেসি:
এ্যডভোকেসি পরিকল্পনা অনুসারে ৪ জুন ২০১৬ সিরডাপ এর প্রধান মিলনায়তনে একটি মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এন.সি.টি.বি) চেয়ারম্যান ও সদস্য (পাঠ্যপুস্তক)। আরো উপস্থিত ছিলেন আমাদের গবেষণায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক। এছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও বেসরকারী সংস্থার প্রতিনিধি সহ সর্বমোট ৯০ জন।
* মতবিনিময় সভার সুপারিশটি হলো; শিক্ষক প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল তৈরি এবং প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা করে এন.সি.টি.বি’কে নিয়েই বাস্তবায়ন করা। সুপারিশকে আমলে নিয়ে প্রকল্পের এ্যাডভোকেসি পরিকল্পনা পরিবর্তন করা হয়েছে এবং সেই পরিকল্পনা অজজঙড’র নিকট হতে অনুমোদন নেয়া হয়েছে। এন.সি.টি.বি’র সাথে কাজের জন্য মৌখিক অনুমতি পাওয়া গিয়েছে।
* এ্যাডভোকেসি ব্রিফকে গবেষনা সারমর্ম হিসেবে কাঠামোবদ্ধ করে ফ্লাইয়ার আকারে সাময়িকভাবে প্রিন্ট করে মতবিনিময় সভায় বিনিময় করা হয়েছে।

এ্যডভোকেসির উদ্দেশ্য:
১) অভীষ্ঠ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের নিকট যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য পাঠ্যক্রমে অর্ন্তভুক্তির লক্ষ্যে গবেষণা হতে প্রাপ্ত সুপারিশসমূহ উপস্থাপন।
২) বাংলা, ইংরেজী ও মাদরাসা মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য পাঠদানের উপযুক্ত ও যথাযথ শিখন প্রক্রিয়া এবং পরিবেশ তৈরির জন্য গবেষণা থেকে প্রাপ্ত সুপারিশসমূহ মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ।

Pin It on Pinterest

Share This