নারী প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্নভাবে- ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা বা এসিড আক্রমণ। তাছাড়া উত্ত্যক্তকরণের ঘটনা ঘটেই চলেছে। ঘরে, বাইরে, রাস্তাঘাটে, যানবাহনে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্বত্রই নারী আক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে, এমনকি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তির কাছেও নারী নিরাপদ নয়। ধর্ষণ বা উত্ত্যক্তকরণের কারণে নারীর আত্মহত্যা আরও একটি ভয়াবহ সংযোজন।
সারা দেশে থানায় দায়েরকৃত নারী নির্যাতনের মামলার পরিসংখ্যান:
সময়কাল | যৌতুকের জন্য | এসিড আক্রমণ | অপহরণ | ধর্ষণ | ধর্ষণ ও খুন | খুন | জখম | পাচার | অন্যান্য | মোট |
২০০১ | ২৯৮৬ | ১৫৩ | ১৬৯১ | ৩১৭৮ | ২০ | ৮২ | ৬৩ | ৬৩ | ৪৭২২ | ১২৯৫৮ |
২০০২ | ৪৯২২ | ২৩২ | ২২৩৬ | ৪০৯৫ | ২২ | ৯০ | ৮৩ | ৭৪ | ৬৭০০ | ১৮৪৫৪ |
২০০৩ | ৫৮৬৯ | ২২২ | ২২৬২ | ৪৪৪২ | ২৮ | ৭৩ | ১২০ | ৭৪ | ৭১৫২ | ২০২৪২ |
২০০৪ | ৩০৮১ | ১৯৮ | ১৫৯৪ | ৩০৯৭ | ১৭ | ৬২ | ১৩৪ | ৬৮ | ৪৫৬৪ | ১২৮১৫ |
২০০৫ | ৩১৩০ | ১৭৭ | ২০৬৯ | ২৭৯৬ | ২২ | ৯৭ | ৪৯ | ১৩৮ | ২৯৪৯ | ১১৪২৭ |
২০০৬ | ৩৪১৭ | ১৩৫ | ২০৮৭ | ২৫৬৬ | ১৪ | ১০৯ | ৭৫ | ১০৭ | ২৫৫৮ | ১১০৬৮ |
২০০৭ | ৪১৪৬ | ১৩৭ | ২৭৩৬ | ৩৪৯৫ | ৩৩ | ১৪২ | ৭৪ | ১১৩ | ৩৩৭৪ | ১৪২৫০ |
২০০৮ | ৪৪৮৭ | ১২০ | ২৮৭৪ | ৩৩৮৭ | ৬৫ | ১৩১ | ৮৭ | ১০৫ | ৩০২৩ | ১৪২৭৯ |
২০০৯ | ৪০৬১ | ১২৯ | ২৭৭২ | ২৯০০ | ৩৯ | ১৩৯ | ৯৪ | ১০০ | ২৬৯৩ | ১২৯২৭ |
২০১০ | ৫৩৩১ | ৯৭ | ৩৩৯১ | ৩৩২৮ | ২৫ | ১৭৬ | ১২০ | ১১৭ | ৩৭৬৮ | ১৬৩৫৩ |
২০১১ | ৭০৭৯ | ৮৮ | ৪১০৯ | ৩৬৩৮ | ২৮ | ২৮০ | ১৩৯ | ১৪৩ | ৪৫২৮ | ২০০৩২ |
২০১২ | ৬৭০৪ | ৯৮ | ৪০০১ | ৩৬৪৮ | ২০ | ২৫২ | ১৩২ | ২১১ | ৪৫৫১ | ১৯৬১৭ |
সর্বমোট | ৫৫২১৩ | ১৭৮৬ | ৩১৮২২ | ৪০৫৭০ | ৩৩৩ | ১৬৩৩ | ১১৭০ | ১৩১৩ | ৫০৫৮২ | ১,৮৪,৪২২ |
সূত্র : পুলিশ সদরদপ্তর, বাংলাদেশ
উপরোক্ত হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় মামলা হচ্ছে ৫৪টি, যার মধ্যে ১০টিই ধর্ষণের। এর বাইরেও আছে অসংখ্য ঘটনা যার জন্য কোন অভিযোগ দায়ের হয়নি, যা খবর হয়নি কোন পত্রিকার পাতায় বা টেলিভিশন চ্যানেলে। দেশে আইনের শাসনের অভাব, দলীয় রাজনীতির আগ্রাসন, প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম নারীর উপর সংঘটিত নির্যাতন এবং সহিংসতার মাত্রা ও প্রবণতা বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুন। বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা যায়, শতকরা ৬০-৭০ জন নারী তার জীবদ্দশায় অন্তত একবার সহিংসতার শিকার হন। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করতে হবে, প্রতিরোধ গড়তে হবে। আমরা প্রতিটি অপরাধের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং মানসম্মত বিচার দেখতে চাই। তদন্তের সাথে সম্পৃক্ত পুলিশ, ডাক্তার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সেইজন্য প্রয়োজন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং বিচার ব্যবস্থাকে জনগণের আস্থার ও আশ্রয়ের স্থলে উন্নীত করা। অনিয়ম, দুর্নীতি, অরাজকতা, অপ-শাসন, অপ-রাজনীতির বেড়াজাল ভাঙতে হবে।
মৃত্যুদন্ড আইনসিদ্ধ হত্যার সামিল এবং মানবাধিকার পরিপন্থি। মৃত্যুদন্ড দিয়ে অপরাধ দমন সম্ভব নয়; এর দ্বারা নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা যাবে না। সহিংসতার ঘটনা যতই বীভৎস বা নৃশংস হোক না কেন, প্রতিটি ঘটনার মূলে আছে কোন না কোন মনস্তাত্ত্বিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক অথবা রাজনৈতিক কারণ। অপরাধ দমনে ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা এবং সেই অনুযায়ী কার্যকর পন্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন। ঘটনার বীভৎসতা যেন আমাদের মানবিক মূল্যবোধকে নিঃশেষ করে না দেয় সেই বিষয়েও সজাগ থাকতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা কিছু সংখ্যক অপরাধীর বিষয় নয়; এটি একটি সামাজিক ব্যাধি। এই সহিংসতার মূলে যে মানসিকতা, দৃষ্টিভঙ্গী ও সংস্কৃতি কাজ করে তা পরিবর্তনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী কাজ করতে হবে।
নারীর প্রতি সহিংসতা মোকাবিলায় আপনিও পারেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে:
- সহিংসতার বিরুদ্ধে জোড়ালো আওয়াজ তুলুন
- সহিংসতার শিকার নারীকে দোষারোপ না করে তার প্রতি সহমর্মী হোন
- ঘটনা লুকিয়ে না রেখে অভিযোগ দায়ের করতে সহিংসতার শিকার নারীকে সহযোগিতা করুন
- সহিংসতার শিকার নারীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পেতে সাহায্য করুন
- নির্যাতনের ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক তদন্তও সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হোন
কোন অবস্থায়ই আমরা সঙ্কুচিত হব না, ভীত হব না, পিছপা হব না।
নারীপক্ষ
জিপিও বক্স-৭২৩, ঢাকা-১০০০, ফোন : ৮৮০-২-৮১১৯৯১৭, ৮১৫৩৯৬৭
নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় সহযোগিতার জন্য ফোন করুন ১০ ৯ ২১
নারীপক্ষ
র্যাংগস নীলু স্কোয়ার (৫ম তলা), সড়ক- ৫/এ, বাড়ী- ৭৫, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯, বাংলাদেশ।
জিপিও বক্স-৭২৩, ঢাকা-১০০০, ফোন : ৮৮০-২-৮১১৯৯১৭, ৮১৫৩৯৬৭, ফ্যাক্স : ৮৮০-২-৮১১৬১৪৮
ই-মেইল : naripokkho@gmail.com, ওয়েব : www.naripokkho.org.bd