৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী দিবসটি উদযাপন করা হয়ে থাকে। দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস, যা আজ বিশ^জুড়ে সমগ্র নারীসমাজের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।
১৮৫৭ সালে মজুরি বৈষম্য দূর করা ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করার দাবি এবং বিপদজনক ও অমানবিক কর্মপরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় মিছিলে নেমেছিলেন সেলাই কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে পুলিশের দমনপীড়ন। পরবর্তীতে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯১০ সালে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলনে জার্মান সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী ক্লারা জেটকিনের প্রস্তাবে ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সেই থেকে নারীর সম-অধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার লক্ষ্যে সারা পৃথিবী জুড়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
১৯৮৯ সাল থেকে নারীপক্ষ প্রতিবছর জোটগত বা এককভাবে একটি সুনির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালন করছে। এবছর নারীপক্ষ ঢাকায় এবং ৫৫টি জেলা শহরে সহযোগী সংগঠন ও নারী সংগঠনসমূহের নেটওয়ার্ক ‘দুর্বার’কে নিয়ে দিবসটি পালন করছে। আমাদের এবারের প্রতিপাদ্য “নারী তুমি এগিয়ে চলো।”
নারী আজ রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, পর্বতারোহন থেকে শুরু করে প্রশাসন, বিচারবিভাগসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রে স্ব-মহিমায় প্রতিষ্ঠিত। সকল পেশার সকল স্তরে নারী জায়গা করে নিয়েছে। পরিবার থেকে রাষ্ট্র অবধি স্থানীয় থেকে জাতীয় অর্থনৈতিক অর্জনে নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে কিন্তু আমাদের সমাজে নারীর জন্য কোন অর্জনই সহজসাধ্য নয়। পরিবার থেকে রাষ্ট্র অবধি সকল পর্যায়ে প্রতিটি পদক্ষেপে নারীকে বৈষম্য ও নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হতে হয়। ঘরে, বাইরে, রাস্তাঘাটে, যানবাহনে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, সর্বত্র- সকল বয়সের, সকল শ্রেণি-পেশার নারী প্রতিনিয়ত ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, ধষর্ণের চেষ্টা, যৌন হয়রানি, উত্যক্তকরণ, এসিড আক্রমণসহ নানাবিধ সহিংসতার শিকার হচ্ছে বা এর ঝুঁকির মধ্যে থাকছে। তারপরেও নারী সকল জড়তা, ভয়-ভীতি, বাধা-বিপত্তি, সমাজের চোখরাঙানি অতিক্রম করে অবিরাম সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে; সর্বস্তরের সকল ক্ষেত্রে মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ রেখে চলেছে।
নারীর এই অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে হলে অবস্থার সাথে সাথে তার অবস্থানের পরিবর্তন ঘটিয়ে নারী-পুরুষের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এরজন্য নারীবিদ্বেষী মানসিকতা, আচার-আচরণ ও সংস্কৃতি পরিত্যাগ করতে হবে। এ আচরণ যে বা যারাই করুক, যেখান থেকেই আসুক, এর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নারীর উপর সংঘটিত প্রতিটি অপরাধের সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। ঘটনার তদন্তের সাথে সম্পৃক্ত পুলিশ, ডাক্তার ও সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসন এবং বিচার ব্যবস্থাকে জনগণের আস্থা ও আশ্রয়স্থলে উন্নীত করতে হবে। সকল অনিয়ম, দুর্নীতি, দুঃশাসন ও অপ-রাজনীতির বেড়াজাল ভেঙে ফেলতে হবে। নারীকে মানুষ ভাবতে হবে; তাকে মানুষ হিসেবে চিনতে, জানতে ও বুঝতে হবে, তার প্রতি সম্মানজনক আচরণ করতে হবে।
আসুন, নারীর অবিরাম পথচলাকে সুগম ও শক্তিশালী করতে সকল কুসংষ্কার, অপচর্চা, অপব্যাখা, পিছিয়ে পড়া চিন্তা-চেতনা, জড়তা, সঙ্কোচ ও ভয়-ভীতি থেকে মুক্ত হয়ে আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাই এবং সমস্বরে আওয়াজ তুলি, “নারী তুমি এগিয়ে চলো।”
কর্মসূচি
ঘোষণাপত্র পাঠ, আনসার ও ভিডিপি এর নারীদল অর্কেস্ট্রা বাদন, নারীদের জীবন অভিজ্ঞতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
২৬ ফাল্গুন ১৪২৬/১০ মার্চ ২০২০, মঙ্গলবার বিকাল ৫.৩০- সন্ধ্যা ৬.৪৫
ঈদগাহ মাঠ, সেকশন-১২, ব্লক-ডি, পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা।