Select Page
২০১৫-১২-১৪
’৭১ এর বীরাঙ্গনাসহ ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার সকল নারীর প্রতি অসম্মানজনক শব্দ ও ভাষা ব্যবহার বন্ধে জরুরী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাব

স্মারক নং- না.প- ১২/২০১৫- ৩৪৮

৩০ অগ্রহায়ণ ১৪২২/১৪ ডিসেম্বর ২০১৫

বরাবর
হাসানুল হক ইনু
মাননীয় মন্ত্রী,
তথ্য মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
ভবন- ৪, বাংলাদেশ সচিবালয়
ঢাকা- ১০০০

বিষয়: ৭১ এর বীরাঙ্গনাসহ ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার সকল নারীর প্রতি অসম্মানজনক শব্দ ও ভাষা ব্যবহার বন্ধে জরুরী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি

মহোদয়,
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার নারীদের প্রায়শই ‘‘সম্ভ্রম হারানো মা-বোন’’ বলে সম্বোধন করা হয়। আমাদের বিনীত অনুরোধ, আপনি নিজে উদ্যোগী হয়ে সম্প্রচার মাধ্যমে ৭১ এর বীরাঙ্গনাদের প্রতি এই ভাষা ব্যবহার বন্ধ এবং তদস্থলে “১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন আক্রমনের শিকার নারী” কথাটি ব্যবহার করার নির্দেশ দিবেন। আমাদের এহেন দাবির পক্ষে যুক্তিসমূহ নি¤েœ উল্লেখিত।

১. আমাদের সমাজ-সংস্কৃতির চিরাচরিত দৃষ্টিভঙ্গি নারীর প্রতি যেকোন ধরনের যৌন নির্যাতন নারীর “ইজ্জত বা সম্ভ্রমহানি” হিসেবে দেখে। পরিবার ও সমাজ যৌন নির্যাতনের শিকার নারীকেই অপরাধী ভাবে এবং তাকে অপমান ও অপদস্থ করে। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ধর্ষণ ও যৌন আক্রমনের শিকার নারীদের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম হয়নি, এমনকি আমাদের জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রীপরিষদের অনেক সদস্যও এই নারীদের ইজ্জতহানি বা সম্ভ্রমহানির কথা অবলীলায় বলে থাকেন। ‘‘দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীনতা’’ কথাটি প্রায়শঃই শুনতে হয়। এই শব্দ চয়ন যে বীরাঙ্গনা তথা ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার নারীদের কতটা বিদ্রুপ করে তা হয়তো তাঁরা কখনো ভেবে দেখেননি। উপরন্তু, যৌন সহিংসতার শিকার নারীকে ‘‘ধর্ষিতা’’ বা ‘‘নির্যাতিতা’’ সম্বোধনে তার উপর সংঘঠিত অপরাধকে তার পরিচিতির সাথে চিরতরে জড়িয়ে দিয়ে তার প্রতি চরম অবিচার করা হয়।
২. এই দেশের নারীরা এই দেশের নাগরিক। এই ক্ষেত্রে সম নাগরিকত্বের পরিচয়ই আমাদের প্রধান পরিচিতি। ‘‘মা-বোন’’ সম্বোধন আতœীয়তার ভাষা। এই ভাষা ব্যবহার করে নাগরিক হিসেবে সমতার দাবীকে গৌণ করা হয়।

অতএব আপনার কাছে সবিনয় অনুরোধ, বিজ্ঞাপনসহ সরকারী-বেসরকারী সকল পর্যায়ে ও সম্প্রচার মাধ্যমে যথা- বেতার, টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকা, সভা-সমাবেশ, সেমিনার, ইত্যাদিতে লিখনে বলনে বা ভাষণে ’৭১ এর বীরাঙ্গনাসহ যৌন নির্যাতনের শিকার সকল নারীর প্রতি সম্মান রেখে ‘‘ধর্ষিতা’’ বা ‘‘নির্যাতিতা’’ শব্দ ব্যবহার না করে ‘‘নির্যাতনের শিকার’’ বা ‘‘ধর্ষণের শিকার’’ শব্দ ব্যবহারের নির্দেশ দিন এবং সেইসাথে যৌন সহিংসতার ঘটনার সাথে সহিংসতার শিকার নারীর ইজ্জত অথবা সম্ভ্রম হানির কোন সম্পর্ক নেই তা স্পষ্ট করার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি।

ধন্যবাদসহ,

রেহানা সামদানী
সভানেত্রী

Pin It on Pinterest

Share This