স্মারক নং- না.প- ১২/২০১৫-
২১ অগ্রহায়ণ ১৪২২/৫ ডিসেম্বর ২০১৫
বরাবর
আ ক ম মোজাম্মেল হক
মাননীয় মন্ত্রী,
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
সরকারি পরিবহন পুলভবন- (৬ষ্ঠ ও ৭ম তলা),
সচিবালয় লিংক রোড
ঢাকা- ১০০০
বিষয়: ’৭১ এর বীরাঙ্গনাসহ ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার সকল নারীর প্রতি অসম্মানজনক শব্দ ও ভাষা ব্যবহার বন্ধে জরুরী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি
মহোদয়,
স্বাধীনতাদিবস ও বিজয়দিবসকে ঘিরে বিভিন্ন সম্প্রচার মাধ্যম, পত্র-পত্রিকা এবং প্রাসঙ্গিক অনুষ্ঠান, সভা-সেমিনারে ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণের সাথে সাথে যুদ্ধ চলাকালীন ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার নারীদের “সম্ভ্রম হারানো মা-বোন” বলে সম্বোধন করা হয়। আমাদের বিনীত অনুরোধ, আপনি নিজে উদ্যোগী হয়ে ’৭১ এর বীরাঙ্গনাদের প্রতি এই ভাষা ব্যবহার বন্ধ এবং তদস্থলে “১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন আক্রমনের শিকার নারী” কথাটি ব্যবহার করার নির্দেশ দিবেন।
আমাদের সমাজ-সংস্কৃতির চিরাচরিত দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নারীর প্রতি যেকোন ধরনের যৌন নির্যাতন নারীর “ইজ্জত বা সম্ভ্রমহানি” বলে বিবেচিত হয়। পরিবার ও সমাজ যৌন নির্যাতনের শিকার নারীকেই অপরাধী ভাবে এবং তাকে অপমান ও অপদস্থ করে। ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ধর্ষণ ও যৌন আক্রমনের শিকার নারীদের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম হয়নি, এমনকি আমাদের জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রীপরিষদের অনেক সদস্যও এই নারীদের ‘ইজ্জতহানি’ বা ‘সম্ভ্রমহানি’র কথা অবলীলায় বলে থাকেন। “দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীনতা” কথাটি প্রায়শঃই শুনতে হয়। এই শব্দ চয়ন যে ‘বীরাঙ্গনা’ তথা ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার নারীদের কতটা বিদ্রæপ করে তা হয়তো তাঁরা কখনো ভেবে দেখেননি। তাছাড়া, সহিংসতার শিকার নারীকে “ধর্ষিতা” বা “নির্যাতিতা” সম্বোধনে তার উপর সংঘঠিত অপরাধকে তার পরিচিতির সাথে চিরতরে জড়িয়ে দিয়ে তার প্রতি অবিচার ও অন্যায় করা হয়।
সুতরাং আপনার কাছে সবিনয় অনুরোধ, বিজ্ঞাপনসহ সরকারী-বেসরকারী সকল পর্যায়ে যথা- বেতার, টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকা, সভা-সমাবেশ, সেমিনার, ইত্যাদিতে লিখনে বলনে বা ভাষণে ’৭১ এর বীরাঙ্গনাসহ যৌন নির্যাতনের শিকার সকল নারীর প্রতি সম্মান রেখে “ধর্ষিতা” বা “নির্যাতিতা” শব্দ ব্যবহার না করে “নির্যাতনের শিকার” বা “ধর্ষণের শিকার” শব্দ ব্যবহারের নির্দেশ দিন। সেইসাথে এইসকল ঘটনার সাথে ইজ্জত অথবা সম্ভ্রমহানির কোন সম্পর্ক নেই তা স্পষ্ট করতে আপনার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি।
ধন্যবাদসহ,
রেহানা সামদানী
সভানেত্রী