Select Page
২০১৪-১২-১৩
আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার

মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে ১৯৮৮ সাল থেকে প্রতি বছরের মতো এবারও বিজয় দিবসের প্রাক্কালে নারীপক্ষ আয়োজন করেছে “আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার” অনুষ্ঠান। এবারের প্রতিপাদ্য “বীরাঙ্গনা গাঁথা।”

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর কর্তৃক ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার নারীদের প্রতি সমাজ যাতে কোনরকম অসম্মান প্রদর্শন না করে সেজন্য তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান তাঁদের “বীরাঙ্গনা” উপাধি দিয়েছিলেন। হিতে বিপরীত হলো ; এই উপাধি তাঁদের জন্য অপমান, অপবাদ এবং লাঞ্ছনার কারণ হয়ে দাঁড়ালো।

আমাদের সমাজ-সংস্কৃতির চিরাচরিত দৃষ্টিভঙ্গি, যেকোন ধরনের যৌন নির্যাতন নারীর ইজ্জত বা সম্ভ্রমহানি ঘটায়। পরিবার ও সমাজ তাকেই অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে তাকে অপমান ও অপদস্থ করে। মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার নারীদের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। বীরাঙ্গনার শারীরিক ও মানসিক ক্ষত এবং আর্থিক বিপর্যয় নিরাময়ে রাষ্ট্র কর্তৃক কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী হলেও তা হয়নি, তাই আজও শুনতে হয় দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনের কথা।

সম্প্রতি সরকার বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ; তাঁরা মুক্তিযোদ্ধাদের মতো সরকারী ভাতা পাবেন। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে এখনো বেঁচে থাকা বীরাঙ্গনাদের অর্থকষ্টের যন্ত্রণায় কিছুটা স্বস্তি আসবে। আমরা এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই; তবে আমরা মনে করি, নাম বা উপাধি বদলালে তাঁদের প্রতি সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন হবে না। তাঁদেরকে দেয়া “বীরাঙ্গনা” উপাধির যথাযোগ্য মর্যাদা ও সম্মান রাষ্ট্রিয় উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা অত্যাবশ্যক। সেইজন্য সামাজিক, মানসিক ও আর্থিক ক্ষতিপূরণার্থে তাঁদের পূর্ণ মর্যাদা প্রদান করার পক্ষে আমাদের দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছি। আমরা চাই, রাষ্ট্র এই বীরাঙ্গনাদের যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করবে।

মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে মোমবাতি জ্বালাবার আহ্বান জানাচ্ছে নারীপক্ষ। এই আলো মানুষের মনের সকল অন্ধকার, কুপমন্ডুকতা ও সঙ্কীর্ণতা দূর করে চিন্তা-চেতনাকে প্রসারিত করুক; ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার নারীকে দোষারোপ, অসম্মান-অপমান-অপদস্থ করার সংস্কৃতির অবসান ঘটাক।

Pin It on Pinterest

Share This