তামাকের কারণে সারা বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে একজন মারা যাচ্ছেন। বাংলাদেশে আমাদের জানা মতে প্রতি বছর ৭৫,০০০ লোক শুধুমাত্র তামাকজনিত ক্যান্সারে মারা যাচ্ছে। আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্যান্সার রোগী সাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত, তাই প্রকৃত ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা আমাদের অজানা। সারা বিশ্বে ধুমপানকে সিগারেট কোম্পানীগুলো আধুনিক ও প্রগতিশীলতার মাপকাঠি হিসেবে চিত্রায়িত করে নারীদের ধূমপানে উৎসাহিত করছে। এমন কি নারীদের জন্য তৈরী করছে কোমল সিগারেট। ফলে বাংলাদেশেও ধূমপায়ী নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের দেশে তামাক বিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠেছে পুরুষের ধূমপানকে কেন্দ্র করে। অথচ এদেশের নারী জনগোষ্ঠির এক বিরাট অংশ সাদাপাতা, জর্দা ও গুল রূপে তামাক সেবন করছে। তামাকের বিষক্রিয়া পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও ক্ষতিগ্রস্থ করছে কিন্তু নারীরা জানছে না তামাক তাদের স্বাস্থ্য ও জীবনের উপর কতবড় হুমকীস্বরূপ। এই পরিসংখ্যানটি করা হচ্ছে না যে তামাক এবং তামাক জাতীয় দ্রব্য সাদাপাতা, জর্দা, গুল ইত্যাদি গ্রহণের ফলে মুখ ও গলার ক্যান্সারে কতজন নারী আক্রামত্ম হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে।
- তামাকে ৪০০০ এরও বেশী রাসায়নিক দ্রব্য আছে যা হৃদরোগ, ষ্ট্রোক এবং ক্যান্সারসহ ২৫টি রোগের কারণ। তামাকের নিকোটিন আসক্তি হেরোইন, কোকেন, মারিজুয়ানা এবং এলকোহলের চাইতেও বেশী শক্তিশালী
- সমপরিমাণ তামাক ব্যবহারে পুরুষের চাইতে নারী বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আগামী ৩০ বছরে বিশ্বব্যাপী তামাক জনিত মহামারীর ফলে ২৫ কোটি শিশু ও কিশোর-কিশোরীর অকাল মৃত্যু ঘটবে
- তামাক ব্যবহার নারীদের হৃদরোগের ঝুঁকি দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয়। যে সকল নারীরা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির পাশাপাশি তামাক ব্যবহার করেন তাদের এই ঝুকি দশগুণ বেড়ে যায়
- তামাক ব্যবহারের ফলে সন্তান ও জরায়ুর ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং তামাক ব্যবহার বন্ধ করলে জরায়ুর মুখের ক্যান্সারের ঘা কমে আসে। ক্যান্সার আক্রামণাত্মক নারীদের মধ্যে জরায়ু ও সন্তান ক্যান্সারের সংখ্যাই বেশী
- তামাক ব্যবহারের ফলে নারীদের সাইনোসাইটিস, মুখের ঘা, মাড়ীতে ঘা, আলসার (গ্যাষ্ট্রিক ও ডুডেনাম) ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যে সকল নারী ধূমপান করেন (সিগারেট, বিড়ি, হুক্কা) তাদের ফুসফুসের রোগ যেমন ব্রঙ্কাইটিস, এমফিসীমা ও শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি বেশী
- গর্ভাবস্থায় তামাকের ব্যবহার গর্ভস্থ সন্তান ও গর্ভবতী, উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। তামাকের কারণে গর্ভধারণ ক্ষমতাও হ্রাস পায়। তামাক ব্যবহারকারী নারীদের তুলনামূলক অল্প বয়সে গর্ভধারণ ক্ষমতা লোপ পায় অর্থাৎ মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও চোখের ছানি এবং অস্টিওপরসিস (হাড্ডি ক্ষয় রোগ) এর সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়
- তামাক ধুমপানকারী ব্যক্তি শুধু নিজের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে না, তার পার্শ্ববর্তী মানুষের জীবনকেও বিপন্ন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপায়ী স্বামীর স্ত্রীর ফুসফুসের ক্যান্সারের সম্ভাবনা অধূমপায়ী স্বামীর স্ত্রীর দ্বিগুণ। বাড়ীতে একজন ধূমপান করলে অন্যান্য সকল সদস্যরা আক্রামণাত্মক হয়।
- তামাক আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সকলের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। তামাকের অভ্যাস নিজে বর্জন করুন এবং অন্যকে বর্জন করতে সাহায্য করুন।