Select Page
২০০০-১২-১৭
আলোর স্মরনে কাটুক আঁধার -২০০০

স্বজন হারানোর বেদনা ও বিজয়ের আনন্দে – নারীপক্ষ

ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস, আনন্দের মাস, আবার বেদনার মাস। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে আমরা পেয়েছি স্বাধীন জাতী হিসাবে স্বিকৃতি। বিশ্ব মানচিত্রে অঙ্কিত হয়েছে আমাদের অবস্থান। এই আনন্দ, স্বীকৃতির জন্য আমাদের অনেক দাম দিতে হয়েছে। আমরা আমাদের স্বজন হারিয়েছি। স্বীকৃতর জন্য, স্বাধীনতার জন্য, নিজেদের অস্তিত্বের জন্য এদেশের সকল শ্রেনীর মানুষ-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে নারী পুরুষ অংশ নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। দীর্ঘ নয় মাসের সে মুক্তি সংগ্রামে কেউ হাতে নিয়েছে অস্ত্র, যোদ্ধাদের কেউ দিয়েছে নিরাপদ আশ্রয়, কেউ যুগিয়েছে মানসিক সাহস, কেউ দিয়েছে তথ্য, কেউ জুগিয়েছে অর্থ, কেউবা কুট কৌশলে পরাস্ত্র করেছে পাক সেনাদের, রক্ষা করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের। এ বিজয় মাসে নারীপক্ষ গভীরভাবে স্মরন করে হারিয়ে যাওয়া সেইসব সজনদের পাশাপাশি বিজয়ের আনন্দ ভাগাভাগি করে এদেশের সকল স্তরের সকল মানুষের সাথে “আলোর স্মরনে কাটুক আঁধার অনুষ্ঠান” উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে।

নারীপক্ষ বিশ্বাস করে মানুষের সত্যিকার মৌলিক স্বাধীনতায়। আমাদের দেশে স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু এদেশের সর্বস্তরের মানুষ সত্যিকার স্বাধীনতা থেকে আজো বঞ্চিত। এমনকি মুক্তিযুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের ত্যাগ তিতিক্ষা অবদানও যথাযথ মর্যাদা থেকে বঞ্চিত। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকার এদেশ পরিচালনা করেছে। কমবেশী সকলেই মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে, এ মহান অর্জনকে নিজেদের কৃতিত্ব বলেই জাহির করেছে। আজও এ বিজয় সর্বজনিতা লাভ করতে পারেনি।
মুক্তিযুদ্ধের বিজয়, স্বাধীনতা নির্দিষ্ট কোন রাজনৈতিক দল বা কোন গোষ্ঠির নয়, ১৯৮৮ সাল থেকে নারীপক্ষ “আলোর স্মরনে কাটুক আধার” অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ কথাই জানাতে চেয়েছে এ অর্জন এ কৃতিত্ব দেশের সকল স্তরের, সকল মানুষের। আলোর স্মরনে কাটুক আধার অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে নারীপক্ষ সেই সব স্বীকৃতি বঞ্চিত মানুষের কথা, অভিজ্ঞতা, বেদনা, আনন্দ উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে। ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত নারীপক্ষ আলোর স্মরনে কাটুক আঁধার অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করেছে। যেমন : …………..

মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে এদেশের জনগন সাম্প্রদায়িকতাকে সম্পূর্নভাবে প্রত্যাখান করে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে মূলনীতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে। নিজ নিজ ধর্ম পালন ও প্রচারে দেশের সকল নাগরিকের পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগের নীতি গ্রহন করা হয়। জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষ সম অধিকার পাবে বলা হয়। কিন্তু তৎকালীন শাসক দল নিজ স্বার্থে দেশের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক স্বার্থকে পদদলিত করে, ইসলামকে রাষ্ট ধর্ম হিসাবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করে ধর্ম নিরপেক্ষতার আদর্শকে কলুষিত করে। পিছিয়ে পরা, সুবিধা বঞ্চিত ব্যপক জনগনকে নিজ নিজ অবস্থা পরিবর্তনের লড়াইয়ে নিরুৎসাহিত করে নিয়তি নির্ভর রাখার অসদুদ্দেশ্যই এই রাষ্ট্রীয় নীতি ও আদর্শের ক্ষেত্রে ধর্ম প্রীতির মূল লক্ষ্য।
এছাড়া নারীকে তার বর্তমান আচলায়তনে আবদ্ধ রাখতে এবং তার মানবীয় উত্থানের সামাজিক সম্ভাবনাকে প্রতিহত করতে ধর্ম এক মোক্ষম মরনাস্ত্র। পশ্চাদপদতার বিরুদ্ধে মানুষের স্বাধীন ও সৃজনশীল উত্থানে সক্রিয় সহযোগিতাই গনতান্ত্রিক সংস্কৃতির দার্শনিক কর্তব্য। সকল অসাম্প্রদায়িক, গনতান্ত্রিক প্রগতিশীল ব্যক্তির সমন্বিত চেষ্টায় এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। সে সমন্বিত উদ্যেগেই বর্তমান অচলায়তন দুর করার লক্ষ্যে নারীপক্ষ ১৯৮৮ সালে প্রথম বারের মত উদ্যাপন করে “আলোর স্মরনে কাটুক আঁধার” যার বিষয়বস্তু ছিল “বাংলার মাটি দুর্জয় খাটি বুঝে নিক দুবৃত্ত”।

স্বপ্ন ছিলো মানুষে মানুষে বিভেদহীন ধর্ম নিরপেক্ষ এক স্বাধীন দেশের। সাম্যের দেশ গড়তে গিয়ে হারিয়ে গেছে লক্ষ লক্ষ অমূল্য প্রাণ, আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রিয় মুখ, অতি কাছের জন – যাদের মুখের স্মৃতি আজও কাঁদায় প্রাণ, মন।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে সকল ক্ষেত্রে সাক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেছে বাংলাদেশের নারী। কখনো সরাসরি কাঁধে তুলে নিয়েছে বন্দুক, নির্দিষ্ট স্থানে রেখে এসেছে বোমা, পৌছে দিয়েছে খাবারের মোড়াক। সেবায় চিকিৎসায় সারিয়ে তুলেছে আহতদের আশ্রয় দিয়েছে ঘরছাড়া বিপন্ন মানুষকে। শীত মোকাবেলা করার জন্য লুকিয়ে কাথা তৈরী করে পৌছে দিয়েছে যোদ্ধাদের। এই সহযোগীতা করার জন্য পরিবারের সকলকে সার্বক্ষনিক মোকাবেলা করতে হয়েছে নানা বিপদের সম্ভাবনাকে। সেই বিপদ কখনো হয়তো এড়ানো গিয়েছে আবার কখনো হয়তো হতে হয়েছে আক্রমনের সরাসরি শিকার। শত প্রতিরোধ স্বত্তে¡ও সবসময় সম্ভব হয়নি প্রাণে বেঁচে থাকা। পাশাপাশি মোকাবেলা করতে হয়েছে যৌন আক্রমনের সার্বক্ষনিক হুমকি। অত্যাচার, ধর্ষন, আবার অত্যাচার আবার ধর্ষন অবেশেষে মৃত্যু। এভাবেই হারিয়ে গিয়েছে অনেকেই এবং এই বিভিষিকার ভয়াবহ সম্ভাবনাকে বহন করে সংগ্রাম করে গেছে এদশের নারী। চালিয়ে গিয়েছে দৈনন্দিন জীবনের কাজ, পূরন করেছে পারিবারিক দায়িত্ব যুক্ত করেছে নিজেকে মুক্তি সংগ্রামের সাথে নানা ভাবে।

সেই সময় পাক সেনারা নির্বিচারে হত্যা করেছে মানুষ, জ্বালিয়ে দিয়েছে ঘর বাড়ী, মানুষের শেষ সহায় সম্বল আতংকে দিক বিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে ছুটছে একটু নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় শহর থেকে গ্রামে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে যেখানে আগুনের লেলিহান শিখা ভষ্ম করে দিয়ে চলেছে সবুজ বাংলার শান্ত জীবন।
শতাব্দীর ক্রমান্বয় শোষনের ফলে গ্রামীন মানুষের জীবনে কখনো বৈভব ছিলোনা। কেবল খেয়ে-পড়ে জীবন ধারণের প্রচেষ্টায় প্রতিদিনের সংগ্রামে পূর্ণ ছিলো তাদের স্বল্প আয়ের সংসার জীবন। অভাব, অনটন আর দারিদ্র তবু কেড়ে নিতে পারেনি তাদের হৃদয়ের অনুভুতি এবং ভালবাসার সম্পদ ভান্ডার। যারা অতি গরীব তারাও সেদিন এগিয়ে এসেছিলো বিভ্রান্ত আশ্রয়হীনদের আশ্রয় দেবার জন্য। তারা অনেকে অস্ত্র হাতে সেদিন যুদ্ধ করেনি কিন্তু নিজের সহায় সম্বল পরিবার এমনকি প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও এসব নিরাশ্রয় মানুষকে জাতি ধর্মের ভোদাভেদ ভুলে আশ্রয় দিয়েছিলো। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেবার অপরাধে পাক সেনারা বহু পরিবারকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিলো তবু এই গ্রামবাসীরা কখনো কোন আশ্রয় প্রার্থীকে ফিরিয়ে দেয়নি।
যুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীন হোল, যোদ্ধারা ফিরে এসে অনেকে পদক বা খেতাব পেলেন কিন্তু যাদের জীবন ও সম্পদের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধ সফল হতে পেরেছিলো আজ ২৯ বছর পরও তাদের ত্যাগের স্বীকৃতি মিলে­ানা। একটি দেশের জন্মের পিছনে এই মহান আত্মত্যাগের কথা ভুলে যে ইতিহাস রচিত হবে তা হবে এক অসম্পূর্ণ কল্পকাহিনী মাত্র, সত্য ইতিহাস নয়।

“১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে সকল ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেছে বাংলাদেশের নারী। কখনো ঐ বিভীষিকার নয়মাসে দৈনন্দিন জীবনের তাগিদ, অনেক শোক, দুঃখকষ্টের মধ্যেও প্রতিদিনের নাওয়া-খাওয়া, সাংসারিক জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার সিংহভাগ। শত প্রতিরোধ সত্তে¡ও সম্ভব হয়নি প্রাণে বেঁচে থাকা-যৌন আক্রমনের আশংকা থেকে নিজেকে রক্ষা করা। অত্যাচার, ধর্ষণ, মৃত্যু-এভাবেই হারিয়ে গিয়েছে অনেকে বহু বছরের ক্ষোভ ব্যক্ত করে বলা হয় “এত ত্যাগ, অবদান সত্তে¡ও প্রতি বছর বিভিন্ন মঞ্চ থেকে কম্পিত কণ্ঠে শুধু উŽচারিত হয় লাখ মা-বোনের ইজ্জত হানির কথা। নারীর উপর যঘন্যতম আক্রনকে নিছক ইজ্জত বা সম্ভ্রম হানির মত ঘোলাটে শব্দের আড়ালে রাখা অপমানকর এবং মুক্তিসংগ্রামে নারীর অবদানকে অস্বীকার করার শামিল। এভাবেই নির্যাতিতের উপর রাষ্ট্রীয়, সামাজিক এবং পারিবারিক ভাবে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে ইজ্জত হানির দায়দায়িত্ব। ইজ্জত তো যাবার কথা যে অত্যাচারী তার ; ধর্ষিত নারীর প্রতি আমাদের একি অসম্মান! মুক্তিসংগ্রামে নারীর অংশগ্রহন এবং অবদানের একি তাচ্ছিল্য ; এখনই অবসান হোক ‘ মা-বোনদের ইজ্জত হানির’ অপমানকর উক্তির।”

আমরা যারা দেশ স্বাধীন হতে দেখেছি, সকলে জানি স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিসাহ। আজোও আমরা তা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করি। এখনও অনুভব করতে পারি সেদিন গুলোর চরম নৃশংসতার ভয়াবহতা। ২৫ শে মার্চ পাকিস্তানী সেনা বাহিনীর অতর্কীত হামলা সে দিন স্তম্ভিত করে দিয়েছিল বাংলাদেশ তথা তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে। ১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চ থেকে ১৫ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কাল। সেই যুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছিল। সেদিনের প্রতিটি মৃত্যু ব্যাথিত করেছে, আমাদের করেছে প্রত্যয়ী। সেই প্রত্যয় সাহস, শক্তি ও সমর্থন যুগিয়েছে যুদ্ধ ক্ষেত্রে। ১৯৭১ সনে আমরা যারা যুব সম্প্রদায় স্বাধীনতা এনেছি, আমাদের সংগ্রাম ছিল, স্বপ্ন ছিল সুখী এবং সমৃদ্ধ দেশ গঠনের। সেখানে মানুষ মানুষের মর্যাদা পাবে, সমাজে সমতা আনার প্রয়াস থাকবে, দেশের প্রত্যেক নাগরিক পরিপূর্ণ বিকাশ লাভের সুযোগ পাবে। সেদিন আমরা যুদ্ধ করেছি হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান মুসলমান-নির্বিশেষে। একটি মুক্ত স্বদেশ ছিল আমাদের স্বপ্ন। তা বাস্তবায়নে আমরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি, হারিয়েছি আপনজনকে।
নয় মাস যুদ্ধের পর বাংলাদেশ শক্রুমুক্ত হল। এই বিজয় অর্জনে সেদিন আপমর জনগণ সকলে অংশ গ্রহণ করেছে। দলমত নির্বিশেষে সকল দেশ প্রেমিক বিল্পবী জনগনের স্বক্রিয় ও সহযোগিতায় বাংলাদেশর ভৌগলিক সীমানা হয়েছে শক্রমুক্ত। এ বিজয়ের ইতিহাস আমাদের গৌরবের ইতিহাস, বেদনার ইতহাস। এ ইতিহাস বারংবার উচ্চারিত হচ্ছে চারিদিকে কিন্তু একাত্তুরের প্রতিটি মৃত্যুর সাথে, সকল বিষয়ের সাথে আমাদের ব্যাক্তিগত সম্পর্ক আজও অনউŽচারিত। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার লক্ষ্য আর আমাদের প্রতিশ্রæতি আজও তুষ্ট নয়।

গত উপত্রিশ বছরের বিজয় উত্তর ইতিহাসে আমরা দেখি ব্যর্থতা, স্থবিরতা, সন্ত্রাস, ধর্মন্ধতা আর আমলাতন্ত্রের দাসত্বে বাংলাদেশকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে ফেলেছে। নানা ভাবে দেশের সামাজিক, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর স্তরে স্তরে বিন্যস্ত করেছে সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও হতাশা। যা আমাদের অস্তিত্ব বিকাশের সামনে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যে জাতি একদিন সশস্ত্র হামলার মুখে দেশের স্বাধীনতাকে অর্জন করেছে সেই জাতি আজ দলমত নির্বিশেষে এই সকল অশুভ ও অমঙ্গলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে এটাইতো স্বাভাবিক। তাই আজ আমরা সকলে আমাদের যুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া প্রিয় জনদের স্মরণ করে আবারো অঙ্গীকারবদ্ধ হব, আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে সুখী ও সমৃদ্ধ এবং মুক্ত স্বদেশ গড়ার।

একটি মুক্ত স্বদেশ ছিল এ দেশের হিন্দু বৌদ্ধ, খৃষ্টান, মুসলমান, অন্যান্য সকলের স্বপ্ন।
বাংলার মুক্তিকামী মানুষের প্রতি বিভিন্ন দেশের আপামর জনতা সংহতি ঘোষনা করেছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার যে হাত প্রাসারিত হয়েছিল সে সময়, সে ঘটনা ইতিহাসে বিরল। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি যে আন্তর্জাতিক সংহতি, সমর্থন ও সহযোগিতা থেকে আমরা লাভবান হয়েছি, অপরের ক্ষেত্রে আমরা তা প্রদর্শন করতে পারিনি। আমাদের মধ্যে সে উদারতার প্রতিফলন ঘটেনি। বস্তুত, জাতিগত ভাবে সেই সব সাধারন মানুষের অবদানের যথার্থ স্বীকৃতি দিতে আমরা ব্যার্থ হয়েছি। এমনকি, অন্যদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে যথার্থ সংহতি প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছি।

আজ, আমাদের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য বলীয়ান হতে হবে। আজ, বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার লক্ষ্য তথা সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়, পরমত সহিষ্ণুতা, আত্মনিয়ন্ত্রন ও গনতান্ত্রিক আচার – আচরণ ও রীতি নীতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তুলে ধরতে হবে। সেই সাথে আমাদের প্রতিশ্রæতিকে স্পষ্ট করে পুনরউচ্চারন করতে হবে। প্লাবনের পর সর্বস্বান্ত নারী এক কৃষকের সংগ্রামী সত্তা যে দেখেছে, সে জানে বাঙলীর পুঁজি ফুরোয়নি এখানো।

রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ভেদাভেদের অদ্ধায় সাংস্কৃতিক ও স্বাভাবিক স্রোতকে যে দেখতে পায় না, সে সত্যই দুর্ভাগা। ইতিহাসের মল প্রবাহের বাইরে রয়ে যায়। সে। অনগ্রসরতা ও অতীত আশ্রয়ী দ্বিধা বিভক্তির কালোছায়া আজ চারিদিকে বিরাজ করেছে। আমরা সেই আাঁধার কাটাতে আলোর স্মরনে, আজ এখানে সমবেত হয়েছি। এই আলো দুষ্টি ফিরিয়ে দিক আমাদের। এই আলো দুর করুক সকল সংকীর্ণনতা। ধর্মের উর্দ্ধে, ভাষার উর্দ্ধে, জাতির উর্দ্ধে নির্মিত হোক পৃথিবীময় মানুষের সংহতি। সকল অবজ্ঞা ও বিভ্রান্তির বেড়াজাল অতিক্রম করে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় আবাসস্থান বুঝে নেবার জন্য – বিগত চাঁচ বছরের মত, এবারও, নারীপক্ষ বিজয় দিবস উপলক্ষে হারানো স্বজনদের স্মরনে নিবেদন করছে – ‘আলোর স্মরনে কাটুক আাঁধার’ আজকের এই সান্ধ্য অনুষ্ঠান।

Pin It on Pinterest

Share This