Select Page
২০২০-১২-১৫
“আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার” -২০২০

ঘোষণাপত্র

মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে নারীপক্ষ ১৯৮৮ সাল থেকে বিজয় দিবসের প্রাক্কালে একটি নির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য নিয়ে “আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার” অনুষ্ঠান আয়োজন করে আসছে। এবছর কোভিড-১৯ এর কারণে অনুষ্ঠানটি বরাবরের মতো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে করা যাচ্ছে না বিধায় অন্তর্জালের মাধ্যমে করার আয়োজন করা হয়েছে এবং তা সরাসরি নারীপক্ষ’র ফেইসবুক পাতায় সম্প্রচারিত হচ্ছে। আমাদের এবারের প্রতিপাদ্য “মুক্তিযুদ্ধ ও ইহজাগতিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন”।

নাসরীন হক, নারীপক্ষ’র প্রয়াত সদস্য। তাঁর উদ্যোগে নারীপক্ষ’র এই অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছিলো। আজ আমরা তাঁকেও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। একদিকে বিশ^ব্যাপী কোভিড- ১৯ অতিমারীর বিধ্বংসী প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি, জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক যোগাযোগ বিপর্যস্ত। এরই সাথে বেড়ে চলেছে ঘরে-বাইরে সহিংসতা। অপরদিকে ধর্মের চিরাচরিত রাজনৈতিক ব্যবহারের ভয়াবহতা এবং গণতন্ত্রহীনতা দেশে এক সঙ্কটময় পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এই সময়ে নাসরীন হক এর মতো সাহসী ও উদ্যমী মানুষের অভাব আমরা আরো বেশী করে অনুভব করছি।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের নেপথ্যে রয়েছে ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, গোষ্ঠী, স¤প্রদায়- নির্বিশেষে সকলের সম-অধিকার আদায়ের দীর্ঘ সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৯ এর গণÑঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন এবং ’৭১ এ সশস্ত্র যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের মধ্য দিয়ে আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছি।

মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ছিলো, ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়ে একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। পরবর্তীতে রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়ায় যে সংবিধান তৈরি হয় সেই সংবিধানে বলা হয়, বাংলাদেশ রাষ্ট্র তার সকল রীতি, নীতি, আইন ও আচরণে প্রতিটি নাগরিকের প্রতি সমান আচরণ করবে এবং সকল ধর্মের, সকল মতের, সকল বিশ্বাসের মানুষের সমান অধিকার সমুন্নত রাখবে।

আমাদের সংবিধান প্রথমে ইংরেজি ভাষায় রচনা করা হয়। সেখানে ‘সেকুলারিজম’কে রাষ্ট্রের চার মূল নীতির একটি বলে ঘোষণা করা হয়; অর্থাৎ বাংলাদেশ হবে ইহজাগতিক রাষ্ট্র। যদিও পরবর্তীতে সংবিধানের বাংলা সংস্করণে ‘সেকুলারিজম’ এর বাংলা করা হয় ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’।

ইহজাগতিক রাষ্ট্রের মূল বিষয় হচ্ছে, রাষ্ট্রের সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক থাকবে না। রাষ্ট্র একটি রাজনৈতিক, আইনি ও প্রশাসনিক কাঠামো। এর কোন ধর্ম থাকতে পারে না, ধর্ম মানুষের বিশ^াস। রাষ্ট্র পরিচালিত হবে সংবিধান মোতাবেক, কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে নয়।

একটি রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বাস করে, এমনকি ধর্ম বিশ^াসহীন মানুষও বাস করে। একজন ব্যক্তি যেকোনো ধর্ম পালন করার যেমন অধিকার রাখে অন্য আরেকজন ধর্ম পালন না করারও অধিকার রাখে। ধর্ম পালন করা কিংবা না করা ব্যক্তির নিজস্ব বিষয়। রাষ্ট্রে বসবাসকারী সকলের প্রধান পরিচয় রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে এবং রাষ্ট্র সকল নাগরিককে সমান চোখে দেখবে।

সরকারের কাছে আমাদের দাবি:
* মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে বাংলাদেশকে ইহজাগতিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন করুন, সংশ্লিষ্ট সকল আইন সংস্কার করুন
* দেশে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী সকল তৎপরতা বন্ধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিন
* সমাজে ধর্মনিরপেক্ষ পরিবেশ সৃষ্টি ও অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গী গঠনে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে গুরুত্ব দিয়ে পাঠ্যক্রম প্রণয়নসহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিন
* প্রতিটি নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা বিধানে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করুন, গণতন্ত্র বিনির্মাণ ও চর্চা নিশ্চিত করণে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

আসুন, আজ মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে প্রজ্জ্বলিত মোমবাতির আলোয়ে আমরা নিজেদের আলোকিত করি, দূর করি ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার। আমাদের আকাক্সক্ষা, ব্যক্তি লালন করবে অসা¤প্রদায়িক মনোভাব, বিরাজ করবে ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ব্যবস্থা এবং প্রতিষ্ঠিত হবে একটি ইহজাগতিক রাষ্ট্র।

দিনক্ষণ: ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪২৭/১৫ ডিসেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার রাত ৮টা

নারীপক্ষ
জিপিও বক্স-৭২৩, ঢাকা-১০০০

Pin It on Pinterest

Share This