ঘোষণাপত্র
১৯৮৮ সাল থেকে প্রতি বছর বিজয় দিবসের প্রাক্কালে নারীপক্ষ ‘‘আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার’’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনদের স্মরণ করে প্রদীপ প্রজ্জ্বালনের মধ্য দিয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রতিবছর একটি বিশেষ প্রতিপাদ্য বিষয়কে কেন্দ্র করে সাজানো হয় এই অনুষ্ঠান। মুক্ত-বুদ্ধি চর্চা ও বহুমুখী সাংস্কৃতিক ধারার উপর নানা ধরনের আক্রমণকে প্রতিহত করার প্রত্যয় এবং নিজস্ব্ সস্পদ রক্ষা ও সর্বোচ্চ ব্যবহারের অঙ্গিকার নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন ‘‘দেব না গোলার ধান’’।
আজ ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া দিবস। এই প্রতিবাদী নারীকে আজ আমরা স্বশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করছি। বাংলাদেশের নারী জাগরণের এই নারী স্বপ্ন দেখেছিলেন বৈষম্যমুক্ত মানব সমাজ। প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানব সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে মানব সভ্যতাকে একটি উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠ করতে চেয়েছিলেন । তার লেখা ‘সুলতানার স্বপ্ন’ গ্রন্থে সৌরশক্তি ও বৃষ্টির পানির ব্যবহারের স্বপ্ন তারই ফলশ্রুতি। আজ আমাদের বিজয় দিবসের প্রাক্কালে মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগের স্মরণকালে আমরা স্মরণ করছি তাঁকে। কামনা করছি মানুষের হৃদয়ে জাগরিত হোক মানুষের মঙ্গল কামনা এবং বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য চর্চা করার প্রত্যয়।
১৯৪৭ সালে দ্বিখন্ডিত হয়ে ভারত মুক্ত হয়েছিল বৃটিশ উপনিবেশ হতে। এই বিভাজন তৈরি হয়েছিল মূলতঃ ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে। হাজার বছরের সুজলা সুফলা পূর্ব বাংলা যুক্ত হয়েছিল পাকিসত্মানের সাথে। সম্পূর্ণ ভাবে ভিন্ন ভাষা, ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন জাতি সত্ত্বা। পশ্চিম পাকিসত্মানের শাসক গোষ্ঠী পূর্ব পাকিসত্মানের মানুষের উপর চালিয়েছিল শোষণ। বাংলা ভাষা সংস্কৃতি সম্পদের উপর পশ্চিম পাকিসত্মানের আগ্রাসন মেনে নিতে পারি নি আমরা দেশ প্রেমিক বাঙালী। ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষা কেড়ে নেবার প্রতিবাদ করেছি জীবনের বিণিময়ে। চরম মূল্য দিয়ে রক্ষা করেছি আমাদের মাতৃ ভাষাকে। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করতে আপোষ করিনি পশ্চিম পাকিসত্মানের অনৈতিক উদ্ধ্যত্য প্রসত্মাবের সাথে। শামিত্ম প্রিয় আমরা নিজ অধিকার, নিজ ভাষা, নিজ সম্পদকে রক্ষা করতে সর্ব শক্তি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র সকল জাতি সত্ত্বাই সেদিন নিজস্ব সম্পদ ও সম্পত্তিকে রক্ষা করতে যুক্ত হয়েছিল যুদ্ধে।
সকলের প্রত্যাশা ছিল সুখী সমৃদ্ধ ধর্ম নিরপেক্ষ ন্যায় বিচারে সমুন্নত একটি দেশ। আমাদের যে প্রাকৃতিক সম্পদ, মানব সম্পদ তা নিয়ে আমরা অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ জাতি হিসাবে আত্মপ্রকাশ পাবো বিশ্বের বুকে। কিম্তু স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর আমরা এখন কোথায়? আমাদের দেশের সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার করতে পেরেছি? নিরাপদ রাখতে পারছি আমাদের সম্পদকে?
আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের সম্পদ, শিক্ষা, মেধা বিভিন্ন উপায়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ভিন্ন সংস্কৃতির আগ্রাসনে আমাদের নিজস্ব বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ভুলুন্ঠিত হচ্ছে। সুষ্ঠু রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও সমাজ ব্যবস্থার অনাদরে অবহেলায় বেড়ে উঠছে যে তারা শিশুরা মানব সম্পদে পরিণত না হয়ে তৈরি হচ্ছে হুমকি ও বোঝা স্বরূপ।
দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের জন্য আমাদেরকে নির্ভর করতে হচ্ছে বিদেশি মেধা ও দক্ষতার উপর। উন্নত বিশ্ব থেকে একদিকে সাহায্যের হাতকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি অন্যদিকে আমাদের সম্পদের ব্যবহারের জন্য নির্ভর করছি তাদের উপর।
উন্নত বিশ্বের অতিমাত্রায় আয়েশি জীবন যাপনে ব্যহত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ। মানব সভ্যতা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। এর বেশিরভাগ ক্ষতির শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের মত দরিদ্র দেশের জনগণ।
একদিকে পরিবেশগত বিপর্যয় আর অন্যদিকে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে দূরদর্শিতার অভাবে আমাদের সম্পদ বৃদ্ধি না হয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। সমুদ্র সীমার উপর নিয়ন্ত্রণের অভাব, তেল-গ্যাস উত্তলোন, ট্রানজিট এসব বিষয়ে মতদ্বৈততা দুটি রাজনৈতিক দলের দেশপ্রেমকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। রাজনৈতিক দলসমূহের আত্মঅহমিকা দেশ প্রেমের আহবানেও ম্রিয়মান হয় না। সর্বদলীয় কোন কমিটি এই সম্পদ রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারছে না। দুই একজন ব্যক্তি বা সংগঠন এই ব্যপারে সোচ্চার হলেও তা দলীয় কোন্দলের জন্য তাদেরকে হতে হয় কোণঠাসা কখনও কখনও জীবন হয় হুমকীর সম্মখীন।
আমরা আর কতদিন এই স্বাধীন দেশে কতিপয় ব্যক্তিস্বার্থের কাছে পরাধীন থাকবো? ভুলুন্ঠিত হবে আমাদের অধিকার। নিশ্চিনহ হবে আমাদের সম্পদ। আজকের এই অনুষ্ঠানে সকলে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ হবো স্বাধীনতার সর্বোচ্চ অধিকার ফিরিয়ে আনতে এবং স্মরণ করবো আমাদের প্রিয়জনদের।
আজকে আমাদের দাবি―
- মেধাপাচার ও অপচয় রোধ করার জন্য রাষ্ট্রকে সুষ্ঠু নীতিমালা তৈরি এবং যথার্থ প্রয়োগ করতে হবে।
- দেশের স্বার্থে দলমত উর্ধ্বে রেখে দেশের সম্পদ রক্ষা সুনিশ্চিত করা করতে হবে।
- দেশের জাতিগত বৈচিত্র্যতা রক্ষায় বৃহত্তর জাতি সত্ত্বার কাছে ক্ষুদ্র জাতি সত্ত্বার যথাযথ বিকাশ, উন্নয়ন এবং অধিকার রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় নিশ্চিত করতে হবে।
নারীপক্ষ
র্যাংগস নীলু স্কোয়ার (৫ম তলা), বাড়ী- ৭৫, সড়ক- ৫/এ, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯, বাংলাদেশ
জিপিও বক্স-৭২৩, ঢাকা-১০০০, ফোন : ৮৮০-২-৮১১৯৯১৭, ৮১৫৩৯৬৭, ফ্যাক্স : ৮৮০-২-৮১১৬১৪৮
ই-মেইল : naripokkho@gmail.com, ওয়েব : www.naripokkho.com.bd