ঘোষণাপত্র
প্রতি বছরের মত এবারও বিজয় দিবসকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে নিবেদিত হচ্ছে নারীপক্ষ’র শ্রদ্ধাঞ্জলি ‘আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার’।
বাহান্ন, উনসত্তর এবং একাত্তর সহ সকল আন্দোলনে বাংলার মানুষের সাহসী প্রতিরোধ আমাদের এনে দিয়েছে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি এবং একটি স্বাধীন দেশ। দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শোষণের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবাদের একটি বিজয় অর্জিত হয় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। একাত্তরের এই বিজয়ের ইতিহাস সৃষ্টির পেছনে রয়েছে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল স্তরের নারী-পুরুষের অংশগ্রহণ, সমর্থন ও সহযোগিতা।
মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যই ছিল এ দেশের কৃষক-শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের জীবনে অমতত ভাত-কাপড়ের নিশ্চয়তা থাকবে। প্রত্যাশা ছিল, মুক্তিযুদ্ধ এ দেশের সাধারণ মানুষকে একটি বৈষম্যহীন ও শোষণমুক্ত নিরাপদ স্বাধীন দেশ দেবে; যেখানে থাকবে স্বাভাবিক ও স্বচ্ছল জীবন যাপন এবং মৌলিক অধিকার চর্চার অনুকুল পরিবেশ।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ পার করতে যাচ্ছে পঁয়ত্রিশ বছর। কিন্তু সাধারণ মানুষ পায়নি স্বাধীনতার সুফল। অর্থনৈতিক ও সামাজিকসহ সকল ক্ষেত্রে তাদের যে সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা ছিল, তা নিশ্চিত হয়নি। ভাত, কাপড়, শিক্ষা, চিকিৎসার মত মৌলিক উপাদানের অভাবে সাধারণ মানুষ এখনো অনিশ্চিত জীবন-যাপন করে। দেশের কিছু কিছু অঞ্চলে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে খাদ্যের চরম অভাব দেখা দেয়। কাজ করার সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় সাধারণ মানুষ অর্থ উপার্জন করার সুযোগ পায় না। এর ফলে তাদের দারিদ্র্যমুক্তি না ঘটে তা আরো দীর্ঘায়িত হয়। দারিদ্রে্যর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শিক্ষা, চিকিৎসাসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে।
স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে উন্নয়ন এবং ক্ষমতা সবকিছুই ছিল পশ্চিম পাকিস্তান কেন্দ্রিক। আর স্বাধীনতা পরবর্তি সময়ে সবকিছু হয়েছে রাজধানী কেন্দ্রিক অর্থাৎ ঢাকা কেন্দ্রিক। ফলে¬ স্বচ্ছল জীবন যাপনের সুযোগ-সুবিধা থেকে সাধারণ মানুষ আজও রয়ে গেছে দূরে। রাষ্ট্রের ক্ষমতা বন্দি হয়ে আছে সংসদ, সচিবালয় নামের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে। সাধারণ মানুষের হাতে ক্ষমতা বলতে আছে একটি করে ভোট। কিন্তু সেই ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষের আশা আকাঙ্খার নেই কোন প্রতিফলন।
আইনের শাসন গণতন্ত্রের অপরিহার্য শর্ত হলেও তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সাধারণ মানুষের স্বার্থের অনুকূল আইন ও সুবিচার আদালতের দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ায় পিষ্ঠ। বঞ্চনা ও অধিকারহীনতায় নিমজ্জিত ব্যাপক জনগোষ্ঠি। এবারের অনুষ্ঠানে আমরা তাই জোর দিতে চাই ‘সাধারণ মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতার প্রতিফলন’ বিষয়টির ওপরে।
আমাদের প্রত্যাশা, সকল উদ্যোগ বাস্তবায়িত হবে গ্রামকে, উপজেলাকে কেন্দ্র করে। সেখানে গড়ে উঠবে দরিদ্র জনগোষ্ঠির স্বচ্ছল জীবন-যাপনের উপযোগী কর্মসংস্থান, মানসম্মত শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সকল মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা। এটা করতে হলে সিদ্ধামতগ্রহণ প্রক্রিয়ায় সাধারণ জনগণের অর্থাৎ স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাই স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়াকে কার্যকর ও অর্থবহ করে তুলতে হবে।
আজকে আমরা অনুষ্ঠান করছি অবরুদ্ধ অবস্থায়। বাংলাদেশে সম্প্রতিকালে এবং আজকে ঘটে যাওয়া বোমা হামলায় প্রাণ হারিয়েছে নিরীহ মানুষ। আজকে সকালে নেত্রকোনার বোমা হামলায় আমাদের জানামতে প্রাণ হারিয়েছে ৮ জন। আমরা তাদের জন্য শোকার্ত, আমরা দেশের জন্য শোকার্ত।
প্রতি বছরের মতো এবারও মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের কথা স্মরণ করে প্রজ্বলিত এ আলো সত্যের আলো। এ আলো দৃষ্টি ফিরিয়ে দিক আমাদের। সব অন্ধকার, হতাশা, দুর্ভোগ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস দূর হয়ে যাক জাতীয় জীবন থেকে। এ আলো হোক সকল মানুষের সুস্থ ও সুন্দর জীবনের দিশারী।
স্থানঃ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
সময়ঃ বিকেল ৫টা-সন্ধ্যা ৬টা
তারিখঃ বৃহস্পতিবার, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪১২/০৮ ডিসেম্বর ২০০৫
নারীপক্ষ
র্যাংগস নীলু স্কোয়ার (৫ম তলা), বাড়ী- ৭৫, সড়ক- ৫/এ, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯, বাংলাদেশ
জিপিও বক্স-৭২৩, ঢাকা-১০০০, ফোন : ৮৮০-২-৮১১৯৯১৭, ৮১৫৩৯৬৭, ফ্যাক্স : ৮৮০-২-৮১১৬১৪৮
ই-মেইল : naripokkho@gmail.com, ওয়েব : www.naripokkho.com.bd