ঘোষণাপত্র
মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া কাছের মানুষগুলোর মুখ স্মৃতির মণিকোঠায় এখনও উজ্জ্বল। সেইসব স্বজনদের স্মরণে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নারীপক্ষ’র শ্রদ্ধাঞ্জলি “আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার”। ১৯৮৮ সাল থেকে প্রতি বছর বিজয় দিবসের প্রাক্কালে নারীপক্ষ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। প্রতিবছর একটি বিশেষ প্রতিপাদ্য বিষয়কে কেন্দ্র করে সাজানো হয় এই অনুষ্ঠান। মুক্ত-বুদ্ধি চর্চা ও বহুমুখী সাংস্কৃতিক ধারার উপর নানা ধরনের আক্রমণকে প্রতিহত করার প্রত্যয় নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন ‘‘মুক্তিযুদ্ধ ও আমাদের সংস্কৃতি’’।
১৯৭১ সালে সংঘটিত রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। যেখানে বসবাস নানা ধর্মের, বর্ণের, গোত্রের, ভাষাভাষি মানুষের। এটি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীন সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ ও ঘরে-বাইরে সর্বত্র জায়গা করে দেয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কর্তব্য। এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের সংস্কৃতির বিকাশ ও সমৃদ্ধি ঘটবে। কিন্তু সম্প্রতি বিমানবন্দরের প্রবেশ পথের সড়কদীপে ‘‘বাউল ভাস্কর্য’’ ভাঙ্গা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের নাটক অনুষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা, জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী মমতাজের সঙ্গীতানুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া, মতিঝিলে ‘‘বলাকা ভাস্কর্য’’ ভাঙ্গা এবং দেশের সকল ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার হুমকি, ইত্যাদি প্রত্যেকটি ঘটনাই কতিপয় ধর্মীয় উন্মাদনা দানকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতার ফলাফল।
ভাস্কর্য ভাঙ্গা, সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং নাট্যচর্চা ও নাটক প্রদর্শনে বাধা প্রদান, মুক্ত-স্বাধীণ সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় নগ্ন হস্তক্ষেপ এটাই প্রথম নয়, অতীতেও এধরনের বহু ঘটনার স্বাক্ষী আমাদের ইতিহাস। কিন্তু প্রতিবারই সংস্কৃতি সচেতন মানুষ ও সংস্কৃতি কর্মীরা সেইসব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে।
আজ স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়েও যখন আমাদের এধরনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে হয় তখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে, স্বাধীনতা কি আমাদের মুক্ত করতে পেরেছে সভ্যতা-সংস্কৃতি ধ্বংসকারী অশুভ চক্রের চক্রান্ত থেকে?
একটি গণতান্ত্রিক দেশের সংস্কৃতি হয় বহুবিধ ও বহুমাতৃক। এই বৈচিত্রকে লালন করা আমাদের কর্তব্য, কিন্ত আমাদের চারিদিকে আজকের যে চিত্র তা থেকে মনে হয়, আমাদের সকলকে এক সংকীর্ন পশ্চাৎগামী সাংস্কৃতিক বলয়ে আবদ্ধ করার চেষ্টা চলছে। তাই আমাদের সোচ্চার হতে হবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠির সংস্কৃতি লালন করা শুধু নয় বরং নতুন নতুন মাত্রা যোগ করে একটি বহমান প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল তৈরী করার জন্য, যেখানে নতুন চিন্তা ও চেতনা বিকাশের ক্ষেত্র তৈরী হবে। আমরা গাইতে শিখবো নতুন গান, সুযোগ পাবো নতুন কবিতা সৃষ্টির।
আবহমান কাল ধরে মানুষ তার মুক্ত চিন্তার প্রতিফলন ঘটিয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে। কোন দেশ-জাতি-গোষ্ঠী-সম্প্রদায়ের চিন্তা-চেতনার পরিচয় পাওয়া যায় সেই দেশ-জাতি-গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের সংস্কৃতিতে। তারা বেঁচে থাকে তাদের সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে এবং বিকাশ ঘটে সভ্যতার।
তাই, আজ এখানে দাঁড়িয়ে আমরা প্রতিটি সংস্কৃতি সচেতন গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রতি আহবান জানাই: আসুন, মুক্ত সংস্কৃতির মুক্ত চর্চা দিয়ে রুখে দাঁড়াই সভ্যতা-সংস্কৃতি ধ্বংসকারী সকল অশুভ চক্রের চক্রান্ত এবং সু-সংহত করি মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে।
সমবেত সুধী!
মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণ করে আজ আমরা যে আলো জ্বেলেছি এ আলো সত্য ও সুন্দরের আলো। এ আলোয় ভেসে যাক সভ্যতা-সংস্কৃতি ধ্বংসকারী সকল কুপমন্ডুকতা। প্রসারিত হোক মুক্ত চিন্তার জগত। মুক্ত-বুদ্ধি চর্চা ও বহুমুখী সাংস্কৃতিক ধারার কর্মকান্ডকে এগিয়ে নিতে প্রতিষ্ঠিত হোক সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা। উদ্ভাসিত হোক মুক্ত চেতনাসমৃদ্ধ সমাজ নির্মাণের আলোকবর্তিকা।
স্থান : কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
সময়: বিকাল ৫:১৫ টা থেকে সন্ধ্যা ৬:৩০ টা
তারিখ: ২০ অগ্রহায়ণ ১৪১৪/৪ ডিসেম্বর ২০০৮
নারীপক্ষ
র্যাংগস নীলু স্কোয়ার (৫ম তলা), বাড়ী- ৭৫, সড়ক- ৫/এ, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯, বাংলাদেশ
জিপিও বক্স-৭২৩, ঢাকা-১০০০, ফোন : ৮৮০-২-৮১১৯৯১৭, ৮১৫৩৯৬৭, ফ্যাক্স : ৮৮০-২-৮১১৬১৪৮
ই-মেইল : naripokkho@gmail.com, ওয়েব : www.naripokkho.com.bd