Select Page
১৯৯৮-১২-১১
আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার -১৯৯৮

প্রতিবাদ, সংগ্রাম তার মুক্তিযুদ্ধ। আর যুদ্ধ জয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন। এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে বয়সের নারী, পুরুষ। অনেক ত্যাগ, তিতিক্ষার বিনিময়ে এই স্বাধীনতা। আর যুদ্ধ মানেই আক্রমণ, আত্মরক্ষা, ধ্বংস, প্রাণহানি আর স্বজন হারানোর হাহাকার। আপনজনদের হারানোর বেদনা ও বিজয়ের অনুভূতি নিয়ে অন্যান্য বারের মত এবারও নরীপক্ষ উদযাপন করছে বিশেষ স্মরণ অনুষ্ঠান, আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার’’।

যুদ্ধ, ধ্বংস প্রাণ হানি কারোরই কাম্য নয়। তারপর ও সেদিন সমগ্র জাতিকে হতে হয়েছে যুদ্ধের মুখোমুখি। আমরা হাতে তুলে নিয়েছিলাম অস্ত্র। বড়দের পাশাপাশি সেই সময়ের অনেক কিশোর কিশোরী কেউ বুঝে, কেউ বা না বুঝে, কেউ বা আবেগের বশবর্তী হয়ে নানাভাবে যুদ্ধের সাথে যুক্ত হয়েছিল। আমাদের আজকের স্মরণ অনুষ্ঠানের বিষয় যুদ্ধকালীন সময় কিশোর কিশোরীর অভিজ্ঞাতা’’।

কিশোর বয়সে সবারই থাকে কিছু করার অদম্য উদ্দীপনা। তাই সেদিন মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল কিশোর বয়সের অনেক ছেলে মেয়ে হাতে তুলে নিয়েছিল অস্ত্র। তাদের সমানে ছিল মুক্তিযুদ্ধের অস্পষ্ট ছবি। যুদ্ধের ঝুঁকি এবং ভয়াবহতা সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা ছিল না। কৈশোরের অদম্য উদ্দীপনাই তাদের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার প্রেরণা দিয়েছে। কেউ বা আপনজনদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে সচেতন ভাবে যুদ্ধ করেছে।

যারা যুদ্ধে গিয়েছিলো তাদের যেমন ছিলো জীবনের ঝুঁকি তেমনি যারা যায়নি তারা ও বিপদের আশংকায় সময় কাটিয়েছে। ঘরে বাইরে সবখানেই বিপদ ওঁৎ পেতে ছিলো। যুদ্ধকালীন সময়ে বেঁচে থাকাটাই ছিলো প্রতিদিনের সংগ্রাম। জীবনের কোন নিশ্চিত নিরাপত্তা ছিলো না। উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগে কেটেছে প্রতিটি মূহুর্ত । মুক্তিযুদ্ধে গেছে সন্দেহে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লোকেরা ছেলেদের ধরে নিয়ে গিয়ে, অমানুষিক নির্যাতনের পর তাদের অনেককেই হত্যা করেছে। যখন তখন যে কোন ঘরে শত্রু সেনারা ঢুকে ছেলে মেয়েদের ধরে নিয়ে গেছে যাদের অনেককেই আমরা ফিরে পাইনি। এরই মাঝে আবার অনেককে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের লোক সন্দেহে হয়রানী এবং নির্যাতনের শিকার হ’তে হয়েছে।

মেয়ে বলেই মেয়েদের জন্য ছিল বাড়তি বিপদ । শত্রুরা তুলে নিয়ে গেছে মেয়েদের কখনো ঘর থেকে কখনো বা রাস্তা থেকে। তাদের ধর্ষণ করেছে, নির্যাতন করেছে এবং অনেককে হত্যাও করেছে। মেয়েরা যেখানে সেখানে যৌন আক্রমনের ও ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

দেশ স্বাধীন হয়েছে আজ ২৭ বছর। সেই থেকে আজ অবধি যুদ্ধের সময়ে নারীর উপর আক্রমণ, যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণকে বার বার মা বোনের সম্ভ্রম ও ইজ্জতহানী বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। এই সম্ভ্রম কার ? কে হারিয়েছে সম্ভ্রম ? কে-ই বা হারিয়েছে ইজ্জত? ধর্ষণের শিকার নারীকে আমরা এই অপ-সম্বোধনে ডাকতে বা চিহ্নিত করতে আর রাজী নই। সম্প্রতি বাংলাদেশে নারী সংগঠন সমূহের সমন্বয় সংগঠন দুর্বার পর পক্ষ থেকে জাতীয় পর্যায়ে দাবী করা হয়েছে যে, মা বোনের সম্ভ্রমহানীর কথা সকল সরকারী দলিল ও কার্যক্রম থেকে বাতিল করে সে স্থানে সরাসরি স্বাধীনতার যুদ্ধে দুই লক্ষ নারী ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছিল’’ এই বাক্য ব্যবহার করতে হবে। আজ এই মঞ্চ থেকে এই দাবীর প্রতি আমাদের সমর্থন পূনর্ব্যক্ত করছি। যারা ধর্ষণ করেছে তাদের সম্ভ্রম ও ইজ্জতহানীর দায় দায়িত্ব আপনারা আর নির্যাতিত নারীর উপর চাপাবেন না।

সে দিনের কিশোর কিশোরীদের মধ্যে নতুন জগৎ সৃষ্টির উদ্যম ছিলো, দেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়। কিন্তু যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশ গঠনে এই উদ্যমকে কাজে লাগানো হয়নি। দেশ গঠন প্রক্রিয়া থেকে এ ভাবেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সম্ভাবনাময় এই কিশোর কিশোরীরা। দেরিতে হলেও এখনও সময় আছে এ থেকে শিক্ষা নেবার । আজকের কিশোর কিশোরীদের দিকে তাকাতে হবে, শুনতে হবে তাদের কথা অন্তর্ভূক্ত করতে হবে তাদের দেশ গঠন প্রক্রিয়ায়।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা
২৭ অগ্রহায়ণ, ১৪০৫/১১ ডিসেম্বর. ১৯৯৮

নারীপক্ষ
র‌্যাংগস নীলু স্কোয়ার (৫ম তলা), বাড়ী- ৭৫, সড়ক- ৫/এ, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯, বাংলাদেশ
জিপিও বক্স-৭২৩, ঢাকা-১০০০, ফোন : ৮৮০-২-৮১১৯৯১৭, ৮১৫৩৯৬৭, ফ্যাক্স : ৮৮০-২-৮১১৬১৪৮
ই-মেইল : naripokkho@gmail.com, ওয়েব : www.naripokkho.com.bd

Pin It on Pinterest

Share This