ঘোষণা পত্র
আনন্দ ও বেদনার মাস ডিসেম্বর । বিজয়ের আনন্দ এবং মুক্তি অর্জনের স্মৃতিকে অনুপ্রাণিত করা ডিসেম্বর মাস। স্বজন হারানোর বেদনা জাগায় ডিসেম্বর মাস। এবার দ্বাদশ বারের মত নারীপক্ষ স্মরণ করছে মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের এবং উদযাপন করছে বিজয়ের আনন্দ।
স্বাধীনতার স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭১ সালে এদেশের সকল নারী পুরুষ ধর্ম বর্ণ জাতিভেদ ভুলে শত্রুর মোকাবেলা করেছে। পাকিস্তানী শত্রুর বিরুদ্ধে সকলের প্রত্যক্ষ পরোক্ষ সক্রিয় প্রতিরোধ এবং ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। এ বিজয় এদেশের প্রতিটি নাগরিকের, আমাদের সকলের, কোন দল বা গোষ্ঠীর নয়। মুক্তিযুদ্ধের শ্বাসরুদ্ধকর প্রতিটি মুহুর্তের ভুক্তভোগী যেমন এদেশের প্রতিটি মানুষ, তেমনি বিজয়ের নির্মল আনন্দের অংশীদারও এদেশের সকরেই।
স্বাধীনতার পর থেকে আমরা দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে নিয়ে চলছে রাজনৈতিক দলগুলির দলীয়করণের প্রতিযোগিতা। এদেশের প্রতিটি নারী পুরুষের আন্তরিক সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলেই দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার ডাকে এদেশের প্রতিটি মানুষ সাড়া দিয়েছে। কেউ অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে, কেউবা অস্ত্রছাড়া যুদ্ধ করেছে, কেউবা হৃদয়ের অনুভূতি ভালবাসা ও সমর্থন দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে পৃথিবীর মানচিত্র নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য, স্বাধীনতার জন্য। স্বাধীনতা আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। তাই এবার আমাদের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘‘মুক্তিযুদ্ধ সকলের’’।
যে স্বপ্ন নিয়ে, ত্যাগের বিনিময়ে এদেশের মানুষ অর্জন করেছে স্বাধীনতা, সে স্বপ্নের বাস্তবায়ন কি আমরা প্রেয়েছি? আগামী সহস্রাব্দে আমাদের ভবিষ্যত নির্মাণে কোন পরিকল্পনা বা দিকনির্দেশনা আমাদের আছে কি? সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণে অর্জিত এদেশ। দেশ গড়ার কাজে, রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে সকলের অংশ গ্রহণ মতামতের প্রতিফলন আছে কি? সময় এসেছে আত্ম জিজ্ঞাসার। স্থানীয় পর্যায় থেকে কেন্দ্রীয় কোথাও সাধারণ মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন নেই, মতামত প্রকাশের সুযোগ নেই। রাষ্ট্রীয় কাঠামোর কোন পর্যায়েই স্বচ্ছতা বা জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নেই।
স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত সহিংসতা, সন্ত্রস ও ক্ষমতার দ্বন্ধের কাছে দেশের মানুষ জিম্মি হয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাক সেনার অত্যাচারে এদেশের মানুষের প্রতিটি ক্ষণ কেটেছে ভয়ে আতঙ্ক; আর বর্তমান স্বাধীন দেশে মানুষের সময় কাটে অজানা বিপদের আশাস্কায়। আমরা কি এই চেয়েছিলাম?
মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, আমাদের গৌরবময় অধ্যায়। স্বাধীনাতার প্রেরণায় আমাদের দূরদৃষ্টিকে প্রসারিত করার এখনই সময়, আমাদের ভবিষ্যত নির্মাণের এখনই সময়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দলাদলি, রাজনীতি আর নয়। মুক্তিযুদ্ধ কোন দলের, ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের ছিল না, আজও নেই এটাই ধ্রুব সত্য। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসাবে আমরা সন্ত্রাস মুক্ত নিরাপদ জীবন চেয়েছি, দেশ গড়ার কাজে সর্বস্তরের জনগনের অংশগ্রহণ চেয়েছি।
আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার
১৬ ই ডিসেম্বর সমগ্র জাতি বিজয় উৎসব পালন করতে যাচ্ছে। দীর্ঘ ২৪ বছরের পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসনের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিল এদেশের সর্বস্তরের জনগন। উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা , এই উক্তির মাধ্যমে যখন নগ্নভাবে প্রকাশ পায় যে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী বাংগালীর জাতীয় ও সাংস্কৃতিক সত্বা এবং রাজনৈতিক চিন্তা চেতনাকে সমূলে বিনাশ করে বাংগালীকে চিরকালের জন্য পংগু করে দেবে, তখন বাংলার মানুষ তার সুষ্পষ্ট প্রতিবাদ জানিয়েছিল। দ্বিধাগ্রস্ত হয়নি পুলিশের গুলিতে প্রাণ বিলিয়ে দিতে । শাসকরা ভীত হলেও বাংগালীকে পদানত করে রাখবার লোভ সংবরণ করতে পারে নি।
বিশ বছর ধরে একের পর এক সামরিক শাসনের নিগড়ে বেধে রাখতে চেয়েছে বাংগালীকে। ৭১ এর নিলজ্জর ধিকৃত অমানবিক আক্রমণে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছে সমগ্র জাতিকে। প্রতিটি জনগণ রুখে দাড়িয়ে প্রাণপন যুদ্ধে অর্জন করেছে স্বাধীনতা। জাতিলড়াই করেছে শোষণহীন বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য। লাখ লাখ লোকের প্রাণের বিনিময়ে দেশ আজ স্বাধীন হয়েছে। যুদ্ধকালীন সময়েও পাকিস্থানী হানাদার ঠিকই খুজে নিয়েছিল এদেশের বুদ্ধিজীবীদের । যুক্তি দেখিয়েছিল ধর্ম রক্ষার । ধর্মকে লগ্নি করে চেষ্টা করেছে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার।
আজ ১৭ বছর আবার সেই সাম্প্রদায়িক শক্তি তৎপর হয়ে উঠেছে বাংলাদেশকে ধর্মের নামে দাসত্বের শংখলে আবদ্ধ করতে ধর্মের নামে বৈরাগরকে পাকাপোক্ত করতে। ইসলামকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হয়েছে, প্রতিনিয়ত জীবনের সর্বস্তরে ইসলামের নামে জেহাদের ডাক দেওয়া হচ্ছে। স্কুল কলেজ, অফিস আদালতে সাম্প্রদায়িক ধ্যান ধারণা ও ধর্মীয় গোড়ামী প্রতিষ্ঠা করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। দেয়ালে দেয়ালে লেখা হচ্ছে জাতি ধর্ম নিরপেক্ষতার জন্য যুদ্ধ করেনি। যে আদর্শে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল এদেশের নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল স্তরের জনগন সেইআদর্শ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দেয়া হচ্ছে। আজ সময় এসেছে মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনা সেই আদর্শকে সত্যের আলোকে চিনে নেওয়ার । আজ সময় এসেছে মুক্তিযুদ্ধে বিলিয়ে দেওয়া প্রাণের প্রতি যর্থার্থ সম্মান প্রদর্শরন করার । আসুন বিজয় দিবসের প্রাককালে মুক্তিযুদ্ধের বীর যোদ্ধাদের স্মরণ করি একেকটি আলোক শিখা জ্বালিয়ে । এই আলো দৃষ্টি ফিরিয়ে দিক আমাদের এই আলো দুর করুক সাম্প্রদায়িকতার অন্ধকারকে।
স্থানঃ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
সময়ঃ সন্ধা ৭ঃ০০টা – ৯ঃ ০০ টা
তারিখঃ বুধবার ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪০৬/৮ ডিসেম্বর ১৯৯৯
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা
নারীপক্ষ
র্যাংগস নীলু স্কোয়ার (৫ম তলা), বাড়ী- ৭৫, সড়ক- ৫/এ, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯, বাংলাদেশ
জিপিও বক্স-৭২৩, ঢাকা-১০০০, ফোন : ৮৮০-২-৮১১৯৯১৭, ৮১৫৩৯৬৭, ফ্যাক্স : ৮৮০-২-৮১১৬১৪৮
ই-মেইল : naripokkho@gmail.com, ওয়েব : www.naripokkho.com.bd
আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার – ২০১২