বিশিষ্ট সমাজসেবিকা।
১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলায় চণ্ডীপুর ইউনিয়নের কালুপুর গ্রামের চৌধুরী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পারিবারিকভাবে শিক্ষা লাভ করেন। পরে চট্টগ্রামের খাস্তগীর বালিকা বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।
১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে পাক-ভারত উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা শুরু হলে, তার প্রভাব বৃহত্তর নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুর, রামগঞ্জ ও চৌমুহনীসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এই বৎসরের নভেম্বর মাসে মহাত্মা গান্ধী দাঙ্গা পীড়িত রামগঞ্জে আসেন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ২৯ জানুয়ারিতে গান্ধীজি সোনাইমুড়ি উপজেলার জয়াগ বাজারে অবস্থান করেন। তখন এ জায়গাটি গান্ধী ক্যাম্প বা গান্ধী আশ্রম নামে পরিচিত হয়। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার জয়াগ বাজারে প্রতিষ্ঠিত হয় গান্ধী আশ্রম ট্রাষ্ট।
রামগঞ্জে গান্ধীজী শান্তির বাণী প্রচারের সময় ঝর্নাধারা, গান্ধীজীর দ্বারা শান্তি প্রচারে উদ্বুদ্ধ হন এবং তাঁর সাথে কাজ শুরু করেন। সে সময় তিনি গান্ধীজির সঙ্গী হয়ে বিভিন্ন স্থানে শান্তির বাণী প্রচার করেন।
দেশবিভাজনের পর তদানীন্তন পূর্ব -পাকিস্তানে, তিনি গান্ধীজীর আদর্শে অসাম্প্রদায়িক আদর্শ প্রচার অব্যাহত রাখেন এবং নানারকম সেবামূলক কাজ করতে থাকেন।
১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চট্টগ্রামে আসেন এবং ‘প্রবর্তক সংঘ’ নামে একটি শিশু সদনে কাজ শুরু করেন। এখানে তিনি অনাথ শিশুদের দেখাশোনার দায়িত্ব নেন।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে ২ মার্চ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি চট্টগ্রাম ত্যাগ করেন ভারতে চলে যান। এই সময় তিনি প্রায় ৫০০ শিশু ও কিশোরীকে সাথে করে নিয়ে যান। ভারতে তিনি অন্যান্য মেয়েদের সাথে রিলিফ ক্যাম্পে কাজ করেন। পরবর্তীতে স্বাধীনতার পর ধ্বংস হয়ে যাওয়া প্রবর্তক সংঘ পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেন।
১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি বিজড়িত নোয়াখালী জয়াগ-এঅবস্থিত গান্ধী আশ্রমে যোগদান করেন। এখানে তিনি সাধারণ দরিদ্র জনগণকে নানারকম কাজে উদ্বুদ্ধ করেন এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক অংশগ্রহণ করেন।
বর্তমানে তিনি গান্ধি আশ্রম ট্রাস্টের সচিবের দায়িত্বে আছেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ‘বাজাজ ইন্টারন্যাশনাল এওয়ার্ড’ পান।
২০০০ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রের ওল্ড ওয়ষ্টবেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি পুরস্কার পান।
২০০২ খ্রিষ্টাব্দে ‘অনন্যা’ পুরস্কার পান।
২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে দূর্বার নেটওয়ার্ক থেকে পুরস্কার লাভ করেন।
২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস এন্ড কনফ্লিকড বিভাগ হতে পুরস্কার লাভ করেন।
২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে সাদা মনের মানুষ নির্বাচিত হন
২০১০ খ্রিষ্টাব্দে শ্রীচৈতন্য, স্কয়ার কীর্তীমতী নারী ও চ্যানেল আই থেকে পুরস্কার লাভ করেন।
২০১১ খ্রিষ্টাব্দে গান্ধী স্মৃতি শান্তি সদ্ভাবনা পুরস্কার পান।
২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকার-এর প্রদেয় ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার লাভ করেন।
তথ্যসূত্র :
কালের কণ্ঠ। মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর ২০১১
প্রথম আলো