আগামী ২৮ আশ্বিন ১৪২৬/১৩ অক্টোবর ২০১৯ নারীপক্ষ “ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন সহ সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা’ অবস্থান কর্মসূচী পালন করবে মিরপুর সরকারী বাঙলা কলেজের সামনে বিকাল ৪টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত।
গত ১৯ ভাদ্র ১৪২৬/৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ নারী ও শিশু ধর্ষণের ক্রমবর্ধমান ঘটনার প্রতিবাদে “যৌন আক্রমণ আর না!!! ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনসহ সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা” প্রতিপাদ্য নিয়ে কর্মসূচির মাধ্যমে দেশব্যাপী নারীর সুরক্ষা অভিযানের সূচনা করা হয়। নারীপক্ষ’র আহবানে ঐদিন ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে দুর্বার নেটওয়ার্ক, স্থানীয় সহযোগী সংগঠন এবং সমমনা ১৭৩টি সংগঠনের মাধ্যমে ৬৪টি জেলা সদর, ১৬টি উপজেলা, ২৩টি ইউনিয়নের মোট ২০০টি স্থানে এই কর্মসূচি সংগঠিত হয়। এভাবে লাগাতার কর্মসূচির মাধ্যমে আগামী ২৫ নভেম্বর ২০১৯ ‘নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস’ এ দেশব্যাপী ঝড় তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই লক্ষ্যে নারীপক্ষ আগামী তিনমাস প্রতি ১৫দিন পর পর ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে এই ধরনের প্রতিবাদ অবস্থান কর্মসূচি করবে।
এরই ধারাবাহিকতায় নারীপক্ষ গত ২ আশ্বিন ১৪২৬/১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক সংলগ্ন উন্মুক্ত স্থানে এবং ১৫ আশ্বিন ১৪২৬/৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সোবহানবাগ ক্যাম্পাসের সামনে বিকাল ৪টা থেকে ৫ টা প্রতিবাদ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।
আগামী ২৮ আশ্বিন ১৪২৬/১৩ অক্টোবর ২০১৯ মিরপুর সরকারী বাঙলা কলেজের সামনে বিকাল ৪টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচী পালন করা হবে। কর্মসুচিতে লিফলেট বিতরণ, শ্লোগান দেয়া ও গান গাওয়া হবে। প্রতীকি হিসেবে লিফলেট বিতরন করবেন ধর্ষণের পর হত্যা, আগুনে পুড়ে পুরো শরীরে ব্যান্ডেজে মোড়ানো নুসরাত, শাহীনুর ও রূপারা।
——————————————————————————————————————————
প্রচারপত্র–
যৌন আক্রমণ আর না!!!
নারীর উপর সহিংসতা নতুন কোন বিষয় নয়। এর মোকাবেলায় সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগও চলমান আছে, তবে নারীর উপর সহিংসতা দমনে রাষ্ট্র এতটাই ব্যর্থ যে সহিংসতা এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকল বয়সের নারী যৌন সহিংসতা ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে; ছেলে শিশুরাও বলাৎকার থেকে রেহাই পাচ্ছে না। কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশে ধর্ষণ ও ধর্ষণ করে হত্যার মহোৎসব চলছে।
ঘরে, বাইরে, রাস্তাঘাটে, যানবাহনে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষণচেষ্টা বা যৌন হয়রানি, উত্যক্তকরণ, এসিড আক্রমণসহ নানাবিধ সহিংসতার শিকার হচ্ছে নারী ও শিশু। পরিবার, সমাজ, এমনকি রাষ্ট্র এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তির কাছেও নিরাপদ নয়।
পত্রিকাসূত্রে, জানুয়ারী-জুন ২০১৯ পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬৩০ জন নারী; এরমধ্যে একজন দ্বারা ধর্ষণ ৪৬৪ জন ও দলবদ্ধ ধর্ষণ ১৫৩ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩৭ জনকে। ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন। ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে ১০৫ জন নারীর উপর; এরমধ্যে হত্যা করা হয়েছে ১ জনকে, আত্মহত্যা করেছেন ১ জন। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১২৭ জন, এরমধ্যে আত্মহত্যা করেছেন ৮ জন। ধর্ষণের প্রতিবাদ করায় খুন হয়েছে ৩ জন নারী ও ২ জন পুরুষ।
দেশের প্রতিটি নারী ও শিশু সহিংসতার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর মূল কারণ নারীকে মানুষ হিসাবে গণ্য না করার দৃষ্টিভঙ্গী ও আচরণ। আদিকাল থেকে সমাজের চিন্তা-চেতনা নারীকে অধস্তন অবস্থানে রাখে। নারীবিদ্বেষী দৃষ্টিভঙ্গী ও সংস্কৃতি একদিকে নারীর উপর সহিংসতা করার প্রবণতা তৈরি ও লালন করে এবং প্রয়োগ করে, অন্যদিকে নির্যাতনের শিকার নারীকেই দোষারোপ করে। সহিংসতাকারী বিনা বিচারে পার পেয়ে যায় বা বিচারের আওতায়ই আসে না।
আইনের শাসনের অভাব ও দুঃশাসন, বিচারহীনতা, দলীয় রাজনীতির নির্লজ্জ আগ্রাসন ও ক্ষমতাসীনদের অনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি, প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি দেশে অরাজক অবস্থা সৃষ্টি করেছে। নিন্দা, প্রতিবাদ এবং ঘটনার দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবি আর এখন কেউ যেন আমলেই নেন না।
নারীর উপর নির্যাতন এবং সহিংসতার মাত্রা, ধরন ও নিষ্ঠুরতা বেড়েছে বহুগুণ। নারীবিদ্বেষী মানসিকতা, আচরণ ও সংস্কৃতি পরিহার করতে হবে। এ আচরণ যেই করুক, যেখান থেকেই আসুক, এর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নারীর উপর সংঘটিত প্রতিটি অপরাধের সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। ঘটনার তদন্তের সাথে সম্পৃক্ত পুলিশ, ডাক্তার ও সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এরজন্য প্রশাসন এবং বিচার ব্যবস্থাকে জনগণের আস্থা ও আশ্রয়স্থলে উন্নীত করতে হবে; সকল অনিয়ম, দুর্নীতি, দুঃশাসন ও অপ-রাজনীতির বেড়াজাল ভেঙে ফেলতে হবে।
আমাদের আহ্বান:
নারী ও শিশুর উপর সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নির্মান করি
দেশে আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী ও ঐক্যবদ্ধ হই
সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুকে সকল সেবা পেতে সাহায্য করি
সহিংসতার ঘটনা লুকিয়ে না রেখে অভিযোগ দাখিল করতে সাহায্য করি
নারীর উপর যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ নারীর জন্য লজ্জা না বরং নির্যাতনকারীর লজ্জা, তাই যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার নারীকে দোষারোপ করার চর্চা বন্ধ করি
ভোগ্যবস্তু নয় নারীকে মানুষ ভাবি।
জাতীয় সংসদের কাছে দাবি:
কার্যতালিকায় নারীর উপর যৌন সহিংসতা ও ধর্ষণ সংক্রান্ত আইনের প্রয়োগ ও প্রতিবন্ধকতা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করুন
নারীর উপর যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণসহ সকল সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিকার করতে যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন এবং সংস্কার করুন
সহিংসতার শিকার নারীর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণের বিধান রেখে আইন প্রণয়ন ও সংস্কার করুন।
বিচার বিভাগের কাছে আবেদন:
আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করুন
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন করুন।
সরকারের কাছে দাবি:
হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থল এবং প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন ও সক্রিয় করুন, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করুন
থানা, হাসপাতাল ও আদালতকে নারীবান্ধব করার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করুন
পাঠ্যসূচীতে নারীর প্রতি নেতিবাচক ও বৈষম্যমূলক বিষয় পরিহার করুন, ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরুন
সরকারী দলিলসমূহ এবং প্রচারমাধ্যমে নারীকে নিয়ে অবমাননাকর শব্দ-বাক্য ব্যবহার বন্ধ করুন
জাতীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করে নারীর উপর সহিংসতা, যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ সংক্রান্ত সকল আইন বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও প্রতিবন্ধকতা নিয়মিত পরিবীক্ষণ এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দিন।
আসুন আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই
নারীর উপর যেকোন ধরনের নির্যাতন ও সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হবো এবং রুখে দাঁড়াব; কোন অবস্থায়ই আমরা সঙ্কুচিত হব না, ভীত হব না, পিছপা হব না। আর একজন নারীকেও ধর্ষণের শিকার হতে দেব না, একজন পুরুষকেও ধর্ষক হতে দেব না।
নারীপক্ষ
জিপিও বক্স-৭২৩, ঢাকা-১০০০, ফোন : ৮৮০-২-৮১১৯৯১৭, ৮১৫৩৯৬৭
নারীর উপর সহিংসতার ঘটনায় সহযোগিতার জন্য ফোন করুন ১০৯