Select Page
২০২৩-০৪-০৮
আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার ২০২০

মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে নারীপক্ষ ১৯৮৮ সাল থেকে বিজয় দিবসের প্রাক্কালে একটি নির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য নিয়ে “আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার” অনুষ্ঠান আয়োজন করে আসছে। এবছর কোভিড-১৯ এর কারণে অনুষ্ঠানটি বরাবরের মতো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে করা যাচ্ছে না বিধায় এবার অনুষ্ঠানটি অন্তর্জালের মাধ্যমে করা হবে এবং তা সরাসরি নারীপক্ষ’র ফেসবুক পাতায় সম্প্রচারিত হবে। এবারের প্রতিপাদ্য “মুক্তিযুদ্ধ ও ইহজাগতিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন”।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের নেপথ্যে রয়েছে ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়- নির্বিশেষে সকলের সম-অধিকার আদায়ের দীর্ঘ সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন এবং ’৭১ এ সশস্ত্র যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের মধ্য দিয়ে আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছি।

মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ছিলো, ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়ে একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। পরবর্তীতে রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়ায় যে সংবিধান তৈরি হয় সেই সংবিধানে বলা হয়, বাংলাদেশ রাষ্ট্র তার সকল রীতি, নীতি, আইন ও আচরণে প্রতিটি নাগরিকের প্রতি সমান আচরণ করবে এবং সকল ধর্মের, সকল মতের, সকল বিশ্বাসের মানুষের সমান অধিকার সমুন্নত রাখবে।

আমাদের সংবিধান প্রথমে ইংরেজি ভাষায় রচনা করা হয়। সেখানে ‘সেকুলারিজম’কে রাষ্ট্রের চার মূল নীতির একটি বলে ঘোষণা করা হয়; অর্থাৎ বাংলাদেশ হবে ইহজাগতিক রাষ্ট্র। যদিও পরবর্তীতে সংবিধানের বাংলা সংস্করণে ‘সেকুলারিজম’ এর বাংলা করা হয় ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’।

ইহজাগতিক রাষ্ট্রের মূল বিষয় হচ্ছে, রাষ্ট্রের সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক থাকবে না। রাষ্ট্র একটি রাজনৈতিক, আইনি ও প্রশাসনিক কাঠামো। এর কোন ধর্ম থাকতে পারে না, ধর্ম মানুষের বিশ্বাস। রাষ্ট্র পরিচালিত হবে সংবিধান মোতাবেক, কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে নয়।

একটি রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বাস করে, এমনকি ধর্ম বিশ্বাসহীন মানুষও বাস করে। একজন ব্যক্তি যেকোনো ধর্ম পালন করার যেমন অধিকার রাখে অন্য আরেকজন ধর্ম পালন না করারও অধিকার রাখে। ধর্ম পালন করা কিংবা না করা ব্যক্তির নিজস্ব বিষয়। রাষ্ট্রে বসবাসকারী সকলের প্রধান পরিচয় রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে। সকল নাগরিককে রাষ্ট্র সমান চোখে দেখবে।

আসুন, মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে আমরা মোমবাতির আলো জ্বালিয়ে নিজেদের আলোকিত করি, দূর করি ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার। আমাদের আকাক্সক্ষা, ব্যক্তি লালন করবে অসা¤প্রদায়িক মনোভাব, বিরাজ করবে ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ব্যবস্থা এবং প্রতিষ্ঠিত হবে একটি ইহজাগতিক রাষ্ট্র।

দিনক্ষণ : ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪২৭/১৫ ডিসেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার, রাত ৮টা
————————————————————————————————
নারীপক্ষ

Pin It on Pinterest

Share This