স্মারক নং না.প ১১/২০২২-৩৫০
১৭ কার্তিক ১৪২৯/২ নভেম্বর ২০২২
মৃত্যুদন্ড অপরাধ দমন করে না বরং “জীবনের অধিকার” খর্ব করে
পত্রিকাসূত্রে জানা গেছে, এক যুগ আগে আয়শা সিদ্দিকা লীনা নামের এক নারী স্বামীর দ্বারা এসিড আক্রান্ত হওয়ার মামলার রায় সম্প্রতি দিয়েছেন আপিল বিভাগ। মাননীয় আদালত মত প্রকাশ করেছেন, এসিড সন্ত্রাসের ভয়াবহতা ভিকটিমকে শারীরিক ও মানসিকভাবে আজীবন বয়ে বেড়াতে হয়- যা কেবল অমানবিকই নয়, এটা বর্বর ও ঘৃণ্য অপরাধ। এ ধরনের অপরাধকে নমনীয় দৃষ্টিতে বিবেচনা করা হলে তা হবে বিচারের নামে তামাশার শামিল। দোষীদের যদি দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেওয়া যায় তাহলে এসিড সন্ত্রাসের মত ঘৃণ্য অপরাধ হ্রাসে তা ভূমিকা রাখবে, তাই আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি ‘মৃত্যুদন্ড’ বহাল রাখা হোল।
নারীপক্ষ ১৯৯৫ সালে এসিড সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত করে, তাই দেরীতে হলেও এই মামলার সমাপ্তিতে নারীপক্ষ স্বস্তি প্রকাশ করছে। যেহেতু মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের মূলনীতি “জীবনের অধিকার” এর সাথে মৃত্যুদন্ড সাংঘর্ষিক, সেহেতু নারীপক্ষ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে। মৃত্যুদন্ড একধরনের আইনসিদ্ধ হত্যা। আইন-আদালতের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড প্রদান রাষ্ট্র দ্বারা হত্যার শামিল। রাষ্ট্রের দায়িত্ব জনগণের জান ও মালের সুরক্ষা করা, জীবন নেয়া নয়।
আজ অবধি বিশ্বের কোন গবেষণা দাবি করেনি যে, মৃত্যুদন্ড অপরাধ দমনে কার্যকর। মৃত্যুদন্ড প্রতিশোধক অর্থাৎ “মারের বদলে মার” এবং প্রতিরোধক অর্থাৎ “একজনকে শাস্তি দিয়ে অপরজনকে শিক্ষা দেয়া”। এই দুই বিবেচনাই অকার্যকর। অপরদিকে, মৃত্যুদন্ড কার্যকর হলে তা বদলানোর সুযোগ থাকে না। বাংলাদেশসহ অনেক দেশের বিচারব্যবস্থায় অপরাধের তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া শতভাগ নির্ভরযোগ্য নয়, ফলে কখনো কখনো নিরপরাধীও দন্ডিত হন। মৃত্যুদন্ডের ক্ষেত্রে এই ভুল সংশোধনের আর কোন সুযোগ থাকে না। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন দঃুখজনক ঘটনার নজির রয়েছে। এছাড়া, একটি মৃত্যুদন্ডের কারণে একটি পরিবারও পতিত হয় চরম দুর্বিপাকে। এই পরিস্থিতি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য নতুন দায় সৃষ্টি করে, তাই অপরাধ দমনে প্রয়োজন মনো-সামাজিক বিশ্লেষণ এবং তার আলোকে অপরাধীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া।
তাই নারীপক্ষ’র দাবি, বাংলাদেশের আইনে ‘মৃত্যুদন্ড’র বিধান অনতিবিলম্বে বাতিল করা হোক।
তামান্না খান পপি
আন্দোলন সম্পাদক, নারীপক্ষ।