স্মারকনং- না.প- ১০/২০২০- ১৪০
২০ আশ্বিন ১৪২৭/৫ অক্টোবর ২০২০
প্রতিবাদ বিবৃতি
বাংলাদেশটা কি ধর্ষকের? আর কত নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হলে সরকার ও প্রশাসনের ঘুম ভাঙবে? ফুসে উঠবে জনতা?
প্রায় একমাস আগে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার পূর্ব একলাশপুর গ্রামে স্থানীয় চার/পাঁচজন যুবক কর্তৃক এক নারীকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ভিডিও এবং খবর ফেসবুকসহ বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে গতকাল ৪ অক্টোবর ২০২০। আমরা স্তম্ভিত। আমরা ক্ষুব্ধ। আমরা হতাশ।
ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন এবং নরী নির্যাতন এখন এক ভয়াবহ নৈমিত্তিক ঘটনা। গত ২ অক্টোবর ২০২০ মধ্য দুপুরে ঝালকাঠির বাল্যবিয়ে প্রতিরোধকারী স্বর্ণকিশোরী নাসরীন আক্তার সারা এর বাড়িতে ঢুকে তার উপর হামলা চালায় এলাকার যুবক জুবায়ের আদনান; কারণ তার দেয়া প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে সারা আক্তার! ২৪ সেপ্টেম্বর দিবাগত মধ্যরাতে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ১নং “বলপিয়ে আদাম” গ্রামে এক মানসিক প্রতিবন্ধী নারীকে নিজ বাড়িতে তার বাবা-মাকে বেঁধে রেখে তাদের সামনে ৯জন সেটলার বাঙালী সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। তার মাত্র কয়েকদিন আগে ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ সন্ধ্যায় সাভারে অসুস্থ কিশোরী নীলা রায়কে হাসপাতালে যাওয়ার পথে মিজানুর রহমান নামের এক যুবক অস্ত্রের মুখে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা করে। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার শালবেষ্টিত পেগামারী গ্রামের গারো আদিবাসী নারী বাসন্তী রেমার কলা ক্ষেতের প্রায় পাঁচশত কলাগাছ কেটে ফেলে মধুপুর বন বিভাগ। এমন আরো অসংখ্য নারী ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলেছে, যার কিছু কিছু প্রকাশ পাচ্ছে; আবার অপ্রকাশ্যই থেকে যাচ্ছে অনেক ঘটনা!
আমরা কি এই বাংলাদেশ দেখার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম? আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশটা কি ধর্ষকের দেশে পরিণত হলো? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! আর কত নারী ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার শিকার হলে আপনার এবং আপনার সরকার ও প্রশাসনের ঘুম ভাঙবে?
নারীপক্ষ’র দাবি, অনতিবিলম্বে প্রতিটি ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে বিচার নিশ্চিত করুন। ঘটনা প্রতিরোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিন। নারীসহ প্রতিটি নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করুন। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করুন। অন্যথায়, হয়তো এমন একদিন আসবে যেদিন আমি, আপনি ও আমাদের কন্যারাসহ কোন নারীই এই অনাচার, অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পাব না।
সর্বমহলের প্রত্যেকের প্রতি নারীপক্ষ’র আহবান, যে চেতনায় আমরা ভাষা আন্দোলন করেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম সেই চেতনায় বলীয়ান হয়ে এবার নারীকে এই অবিরাম ধর্ষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন ও হত্যা থেকে মুক্তি দিতে জেগে উঠুন, ফুসে উঠুন! রুখে দাঁড়ান! প্রতিরোধ গড়ুন!
তামান্না খান
আন্দোলন সম্পাদক
নারীপক্ষ।