স্মারক নং- না.প- ০১/২০১৯- ২৯৭
২১ মাঘ ১৪২৫/ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
প্রতিবাদ বিবৃতি
ধর্ষককে হত্যা নয়, আইনের আওতায় নিরপেক্ষ তদন্ত করে ন্যায্য বিচার চাই
প্রায় প্রতিদিন নতুন নতুন কায়দায় ধর্ষণ, সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণ ও ধর্ষণেরচেষ্টা এবং ধর্ষণজনিত হত্যা ও অত্মহত্যার খবর আসছে গণমাধ্যমে। দেড় বছরের শিশু থেকে সত্তুর বছরের বৃদ্ধা – কেউই রেহাই পাচ্ছে না এই নৃসংশতা থেকে। দৈনিক প্রথম আলো প্রত্রিকার খবর অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি-৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ এই ৩৪ দিনে ৪২টি ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার খবর প্রকাশ হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ জনই শিশু ও কিশোরী। আমরা এই অবস্থার অবসান চাই এবং তার জন্য প্রয়োজন বহুমুখী উদ্যোগ। রাষ্ট্রীয় স্বদিচ্ছা ও পদক্ষেপের পাশাপাশি প্রয়োজন নারীর উপর সহিংসতার বিরুদ্ধে সক্রিয় সামাজিক আন্দোলন, প্রয়োজন প্রতিটি মানুষের মধ্যে এই সহিংসতা বরদাস্ত না করার মানসিকতা গড়ে তোলা এবং প্রয়োজন প্রতিটি ভুক্তভোগীর ঘুরে দাঁড়াবার শক্তি অর্জনে তার পাশে থাকার প্রস্তুতি ও তৎপরতা। বিনা বিচারে ধর্ষককে হত্যা করা এই লড়াইয়ের অংশ নয়।
সাম্প্রতিক সময়ে কে বা কারা একের পর এক ধর্ষণের মামলার চিহ্নিত আসামিকে হত্যা করছে। গত এক মাসে ধর্ষণে অভিযুক্ত অন্তত তিন ব্যক্তির মরদেহ গলায় ‘স্বীকারোক্তিমূলক’ চিরকুট লাগানো অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। এতে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থা। আইনকে নিজের হাতে তুলে নিয়ে এরা জন্ম দিচ্ছে আরও অপরাধের। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে, একজন ধর্ষকের জন্য এটাই উচিত শাস্তি, কারণ বেশীরভাগ ধর্ষণ মামলাতেই দ্রুত এবং ন্যায়বিচারের অভাব পরিলক্ষিত হয়। অপরাধী নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে মামলাকে অংকুরেই বিনাশ করে দেয় এবং ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি নিয়ে দাপটের সাথে সমাজে চলাফেরা করে, ধর্ষণের শিকার নারী ও তার পরিবারকে নতুন করে বিপদে ফেলে। আর এভাবেই অপরাধ করে পার পেয়ে যাবার উদাহরণ সৃষ্টি হয়, যা নতুন নতুন অপরাধের জন্ম দেয়। এতদ সত্ত্বেও নারীপক্ষ বিচার বহির্ভূতভাবে ধর্ষককে হত্যা করা সমর্থন করে না। অন্যদিকে, বিচার বহির্ভূতভাবে ধর্ষককে হত্যার দায় ধর্ষণের শিকার নারীর পরিবারকে করে তোলে আরও অসহায়।
এহেন পরিস্থিতিতে নারীপক্ষ’র দাবি, ধর্ষককে হত্যা নয়, আইনের আওতায় এনে যথাযথ বিচার করা হোক। ধর্ষককে হত্যা এবং সেইসাথে ধর্ষণসহ নারীর উপর সংঘটিত প্রতিটি অপরাধের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং বিচার সমাপ্ত করার দাবি জানাই।
ফরিদা ইয়াছমিন
আন্দোলন সম্পাদক
নারীপক্ষ