স্মারক নং- না.প- ০৭/২০১৮-১৫০
৩ শ্রাবণ ১৪২৫/১৮ জুলাই ২০১৮
কোটা সংস্কারের আন্দোলনে ছাত্রলীগের বর্বরোচিত হামলা ও নারীর তথাকথিত চরিত্র হননের চেষ্টায় আমরা ক্ষুব্ধ, শঙ্কিত এবং লজ্জিত
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত কিছুদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও শাহাবাগ এলকাসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক ছাত্রলীগের বর্বরোচিত হামলার শিকার হয়েছে আন্দোলনকারীরা এবং তাদের সাথে সংহতি জানানো ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকসহ নাগরিক সমাজের ব্যক্তিবর্গ। সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপরও নানাভাবে আক্রমন, লাঞ্ছনা নিগ্রহ, হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। আরো ভয়াবহ ও ন্যাক্কারজনক ঘটনা হচ্ছে, এই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বা সমর্থনকারী নারীদের উপর যৌন আক্রমণ। গত ২ জুলাই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের কর্মসূচিতে হামলাকারীদের দ্বারা আক্রমণের শিকার হন মরিয়ম মান্নান। সেদিন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসানকে মারধরের হাত থেকে রক্ষায় এগিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তখন ফারুককে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। মরিয়ম ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে অটোরিকশায় উঠলে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী ঐ অটোরিকশায় ওঠে এবং তারা মরিয়মকে শাহবাগ থানায় নেওয়া পর্যন্ত পুরো সময় ধরে যৌন নির্যাতন চালায়। এর পরে ঘটে আরো ন্যাক্কারজনক ঘটনা। শাহাবাগ থানায় যাওয়ার পরে পুলিশ তাকে বেশ্যা বলে গালিগালাজ করে, ভয়ভীতি দেখায়, মাদকসেবী প্রমান ও মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করে। থানার বাইরেও পুলিশসহ কিছু লোক তাকে চরিত্রহীন, বেশ্যা, ইত্যাদি বলে গালি দিচ্ছিল বলে জানা যায়। এবছরই এপ্রলি মাসওে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং সুফিয়া কামাল হলে মেয়েদের উপর ছাত্রলীগ বর্বর হামলা ও যৌন নির্যাতন চালায়। এই সকল ঘটনায় নারীপক্ষ ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ, শঙ্কিত এবং লজ্জিত।
যেকোন সময় আন্দোলনে বা গণ-অনুষ্ঠানে নারীদের উপর যৌন আক্রমণ করা তাদের তথাকথিত চরিত্র হননের চেষ্টা রীতিতে পরিনত হয়েছে, যা নারীকে সক্রিয় ও স্বকীয় অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখতে একটি মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দেলনের নারীদের ক্ষেত্রেও তারই পুনরাবৃত্তি, যা নারী অধিকার আন্দোলনের জন্য একটি বড় হুমকি। অপরদিকে সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং আওয়ামীলীগ ছাত্রলীগের এই ঘৃণ্য তৎপরতা ও কর্মকান্ডকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে পক্ষান্তরে দেশের শাসন ব্যবস্থা এবং আইন-কানুনকে অকার্যকর করে তুলেছে, যা দেশ ও জাতির জন্য ভয়াবহ।
ক্ষমতাসীন ‘আওয়ামী লীগ’ দলীয় প্রধান ও মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছে নারীপক্ষ জোর দাবি জানাচ্ছে, অনতিবিলম্বে আপনার দলের ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের এহেন ঘৃণ্য কর্মকান্ড বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করুন।
ফরিদা ইয়াছমিন
আন্দোলন সম্পাদক, নারীপক্ষ