Select Page
২০২৪-০৩-০৫
আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে “নারীর সুরক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করুন”

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে আজ ২১ ফাল্গুন ১৪৩০/৫ মার্চ ২০২৪ মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটির আয়োজনে রমনা পার্কের অরুণোদয় গেইট থেকে পদযাত্রা করা হয়েছে। আমাদের এবারের প্রতিপাদ্য ছিল “নারীর সুরক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করুন”। পদযাত্রাটি ব্যানার, বিভিন্ন শ্লোগান সম্মলিত ফেষ্টুন (নারীর সার্বিক সুরক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করুন, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর সুরক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করুন, খাদ্য, বাসস্থান ও চিকিৎসাসহ নারীর সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করুন, নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্যমূলক আইন, নীতিমালা, প্রথা, চর্চা ও বিধিবিধান বিলুপ্ত করুন, নারীকে সম্মান করুন, মর্যাদা দিন ইত্যাদি) নিয়ে মৎস ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের সামনে আসে। পদযাত্রা শেষে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন রেহানা সামদানী, সদস্য নারীপক্ষ। অনুষ্ঠানে আগত সকল বয়সী নারী পুরুষ অংশ নেন। পদযাত্রায় কমিটির অন্তর্ভুক্ত ৫০টি সংগঠনের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার, বয়স, বিভিন্ন লিঙ্গ বৈচিত্রময় জনগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও উন্নয়ন সংগঠনের প্রায় ৫০০ জন অংশগ্রহণ করেন।

একজন নারী তার পরিবারে স্ত্রী, মা তথা সেবিকার দায়িত্ব পালনে একটা বড় সময় ব্যয় করেন। এর পরে আছে সামাজিক দায়িত্ব। তদুপরি সে নারী যদি হন কর্মজীবী তাহলে দিনের ১৮ থেকে ২০ ঘন্টাই তাকে ঘরে-বাইরে সমানভাবে কাজ করে যেতে হয়। সর্বোপরি, মানব প্রজন্ম রক্ষায় সন্তান জন্মদানসহ লালন-পালন করার মূল দায়িত্বটিও নারীরই। পারিবারিক ও জাতীয় অর্থনীতিতেও প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নারীর অবদান গুরুত্বপূর্ণ, অথচ নারীর মর্যাদাপূর্ণ ও সুরক্ষিত জীবনের জন্য পরিবার ও রাষ্ট্রের কোথাও পর্যাপ্ত বিনিয়োগ নেই!
নারীকে দিতে হবে একজন পরিপূর্ণ মানুষের মর্যাদা এবং নিশ্চিত করতে হবে তার সার্বিক সুরক্ষা।

আমরা চাই:
*
*শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্র, যানবাহন ও যাতায়াত পথসহ পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে

*বাংলাদেশ কর্তৃক স্বাক্ষরকৃত ‘নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ’ আন্তর্জাতিক সনদ অনুযায়ী, সকল বৈষম্যমূলক আইন, নীতিমালা, কর্মসূচি, প্রথা, চর্চা এবং বিধি-বিধান সংশোধন ও বিলুপ্ত করা; প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে

*খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষাসহ নারীর সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে সম-অধিকারের ভিত্তিতে বাজেট তৈরি ও ক্ষেত্রমতো অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।

ঘোষণাপত্র

৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস, যা আজ বিশ্বজুড়ে সমগ্র নারীসমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।

দিবসটি উদযানের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের সেলাই কারখানার নারীশ্রমিকরা বিপদজনক ও অমানবিক কর্মপরিবেশ, স্বল্প মজুরী এবং দৈনিক ১২ ঘন্টা শ্রমের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করেন। তাদের এ শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর পুলিশ হামলা চালায়। তিন বছর পরে ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ, নিউ ইয়র্ক শহরের পোশাকশিল্প কারখানার নারীশ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নিজস্ব ইউনিয়ন গঠনে সমর্থ হন। ১৯০৮ সালের ৮ মার্চ, আবারও নিউ ইয়র্ক শহরে একটি প্রতিবাদমিছিল বের হয়, যাতে পোশাকশিল্প কারখানার নারীশ্রমিকরা যোগ দেন। ৮ মার্চ- এর এ ঘটনাধারার সম্মিলনের ফলে ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগন এ দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন এর প্রস্তাব অনুসারে ঐ দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটি’র আয়োজনে বিগত ৩৩ বছর ধরে একএকটি সুনির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য নিয়ে আমরা দিবসটি পালন করছি। আমাদের এবারের প্রতিপাদ্য “নারীর সুরক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করুন।”

একজন নারী তার পরিবারে স্ত্রী, মা তথা সেবিকার দায়িত্ব পালনে একটা বড় সময় ব্যয় করেন। এর পরে আছে সামাজিক দায়িত্ব। তদুপরি সে নারী যদি হন কর্মজীবী তাহলে দিনের ১৮ থেকে ২০ ঘন্টাই তাকে ঘরে-বাইরে সমানভাবে কাজ করে যেতে হয়। সর্বোপরি, মানব প্রজন্ম রক্ষায় সন্তান জন্মদানসহ লালন-পালন করার মূল দায়িত্বটিও নারীরই। পারিবারিক ও জাতীয় অর্থনীতিতেও প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নারীর অবদান গুরুত্বপূর্ণ, অথচ নারীর মর্যাদাপূর্ণ ও সুরক্ষিত জীবনের জন্য পরিবার ও রাষ্ট্রের কোথাও পর্যাপ্ত বিনিয়োগ নেই।

নারীকে দিতে হবে একজন পরিপূর্ণ মানুষের মর্যাদা এবং নিশ্চিত করতে হবে তার সার্বিক সুরক্ষা; এর জন্য নিমোক্ত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা অতিব জরুরী:
* শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্র, যানবাহন ও যাতায়াত পথসহ পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখা
* বাংলাদেশ কর্তৃক স্বাক্ষরকৃত ‘নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ’ আন্তর্জাতিক সনদ অনুযায়ী, সকল বৈষম্যমূলক আইন, নীতিমালা, কর্মসূচি, প্রথা, চর্চা এবং বিধি-বিধান সংশোধন ও বিলুপ্ত করা; প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বিনিয়োগ করা
* খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষাসহ নারীর সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে সম-অধিকারের ভিত্তিতে বাজেট তৈরি ও ক্ষেত্রমতো অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করা।

উপরোক্ত পদক্ষেপসমূহের কার্যকর বাস্তবায়নে সরকার ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কর্তৃক নিয়মিত পরিবীক্ষণ করা, জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং এরজন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়া সময়ের দাবি।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটি
ফাল্গুন ১৪৩০/মার্চ ২০২৪

Pin It on Pinterest

Share This