২৫ নভেম্বর ২০২৩ ‘নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস’উপলক্ষ্যে ১০ অগ্রহায়ন ১৪২৯/২৫ নভেম্বর ২০২৩ শনিবার বিকাল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ ঘোষণাপত্র পাঠ, শ্লোগান দেয়া হয় এবং প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়। নারীপক্ষ ১৯৯৭ সাল থেকে কখনো এককভাবে, কখনো বন্ধু সংগঠনের সাথে যৌথভাবে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালন করে আসছে। এবছর ৪৬টি সংগঠন একত্রিত হয়ে “নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস কমিটি” “আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নারীর উপর সহিংসতার আশঙ্কা: প্রতিরোধ গড়ুন, প্রতিবাদ করুন”- এই প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালন করে। ঢাকাসহ সারা দেশব্যাপী সহযোগী সংগঠন ও নারী সংগঠনসমূহের জাতীয় নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশন (দুর্বার) এর মাধ্যমে মোট ৬০ জেলায় দিবসটি পালন করা হয়।
লিফলেট
নারীনির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস- ২০২৩
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নারীর উপর সহিংসতার আশঙ্কা: প্রতিরোধ গড়ুন, প্রতিবাদ করুন
নারীর উপর সহিংসতা নতুন কোন বিষয় নয়। -এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ, লড়াই-সংগ্রামও জারি ছিলো, আছে।
১৯৬০ সালের ২৫ নভেম্বর ডোমিনিক্যান রিপাবলিকের স্বৈরাচারী সরকার বিরোধী মিরাবেল ভগিনীত্রয়কে সেনা সদস্যরা ধর্ষণ ও হত্যা করে। নারীনির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালে ল্যাটিন আমেরিকান ও ক্যারিবিয় নারী সম্মেলন এই হত্যাকান্ডকে স্মরণ করে ২৫ নভেম্বরকে “নারীনির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস” ঘোষণা করে। ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর উইমেন্স গেøাবাল লিডারশীপের এক প্রশিক্ষণে ২৩টি দেশ থেকে আগত অংশগ্রহণকারীগণ “নারীনির্যাতন মানবাধিকারের লঙ্ঘন”-এই চিন্তার ভিত্তিতে ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর ‘মানবাধিকার দিবস’ পর্যন্ত পক্ষকালব্যাপী নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কর্মসূচি গ্রহণের প্রস্তাব করেন। এই ডাকে সাড়া দিয়ে এযাবৎ প্রায় দুইশ’টি দেশে ছয় হাজারের বেশী সংগঠন ১৬ দিনব্যাপী নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী অভিযানে অংশগ্রহণ করে আসছে। বাংলাদেশে ‘নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস উদযাপন কমিটি’ ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতিবছর একেকটি নির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালন করছে। এবারের প্রতিপাদ্য “আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নারীর উপর সহিংসতার আশঙ্কা: প্রতিরোধ গড়ুন, প্রতিবাদ করুন।”
ঘরে, বাইরে, রাস্তাঘাটে, যানবাহনে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, যুদ্ধক্ষেত্রে, দুর্যোগে-দুর্বিপাকে, এমন কি আনন্দানুষ্ঠানেও নারী যৌন নিপীড়ন, নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। সকল বয়সের, সকল শ্রেণি-পেশার নারীই সর্বদা এই আক্রমণের ঝুঁকিতে আছে। আমাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালে (নির্বচনের আগে, নির্বাচনের সময় এবং নির্বাচন পরবর্তীতে) প্রচারণা ও ভোট প্রদানকে কেন্দ্র করে এই ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়।
আমাদের আরো একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। এই নির্বাচনকে ঘিরে যেমন আছে প্রত্যাশা তেমনি আছে সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও, হরতাল-অবরোধ, গ্রেফতার, নির্যাতন, জেল-জুলুম-হুলিয়া, ইত্যাদি কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা। সর্ব্বোপরি যে বিষয়টি আমাদেরকে বেশি উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত করছে তা হলো, নারীর উপর সহিংসতা। ১৯৯৬, ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮- প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে নারীর উপর ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টা হয়েছে। -এর পুনরাবৃত্তি আমরা আর চাই না, তাই বিষয়টি পুনরায় জনসমক্ষে নিয়ে এসেছি, যাতে প্রশাসন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং জনগণ সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে নারীর উপর নির্বাচনকালীন সহিংসতা, প্রতিরোধ ও প্রতিকারে জোরালো ভূমিকা রাখে, কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালে নারীর সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পুলিশি নিরাপত্তার পাশাপাশি আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে সামাজিক নিরাপত্তার দিকেও।
আমাদের দাবি:
* ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে নির্বাচনে সম্পৃক্ত প্রতিটি প্রশাসন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং এলাকাবাসীর যৌথ উদ্যোগে নারীর জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন
* সরকারি জরুরী সেবাসমূহকে অধিক কার্যকর ও সক্রিয় রাখুন
* নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময়ে এবং নির্বাচন পরবর্তীতে ধর্ষণ ও যৌননির্যাতনসহ নারীর উপর সকল প্রকার সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন থেকে সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিন এবং তা বাস্তবায়ন তদারকি করুন
* ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী ও প্রতিবন্ধী নারী এবং মেয়েশিশুর নিরাপত্তা বিধানে সরকার ও পুলিশপ্রশাসন থেকে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করুন
* নারীর উপর যেকোন ধরণের সহিংসতা সংঘঠনকারী ব্যক্তি ও তার আশ্রয়-প্রশ্রয় দানকারীর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিন; এলাকাবাসী স্থানীয়ভাবে জন-প্রতিরোধ গড়ে তুলুন
* সংবাদমাধ্যমগুলো নারীর প্রতি অধিকতর সংবেদনশীল থেকে নিরপেক্ষ ও সত্য সংবাদ প্রকাশ করুন
* সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যহারকারীরা সংবাদ/তথ্য প্রকাশে দায়িত্বশীল হোন, কোনরকম উষ্কানিমূলক সংবাদ প্রচার করা থেকে বিরত থাকুন।
যেকোন সময়ে, যেকোন পরিস্থিতিতে নারীর উপর সহিংসতার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জারি আছে, থাকবে। এই লড়াইয়ে আপনি নিজে যুক্ত হোন এবং অন্যকে যুক্ত করুন।
নারীনির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস উদ্যাপন কমিটি
প্রকাশকাল: ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩০/২৫ নভেম্বর ২০২৩