নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস কমিটির আয়োজনে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১/২৫ নভেম্বর ২০২৪ বিকাল ৪ টায় ৫১টি সংগঠন একত্রিত হয়ে “বিচারের নামে অবিচার হয়, নারী কোথাও নিরাপদ নয়” প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালন করা হয়। ঢাকাসহ সারা দেশব্যাপী সহযোগী সংগঠন ও নারী সংগঠনসমূহের জাতীয় নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশন (দুর্বার) এর মাধ্যমে একই প্রতিপাদ্য নিয়ে মোট ৬৪ জেলায় দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
২৫ নভেম্বর ২০২৪ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত ঘোষণাপত্র পাঠ, শ্লোগান দেয়া, প্রচারপত্র বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে আহবান জানার বহ্নিশিখার তাসাফি হোসেন, ঘোষনাপত্র পাঠ করেন নারীপক্ষ’র সদস্য রেহানা সামদানী, শ্লোগান, একক গান পরিবেশন করেন নারীপক্ষ’র সদস্য শিল্পী ওয়ার্দা আশরাফ, একক আবৃতি করেন ইকবাল আহম্মেদ, র্যাপ গান: থামবে কবে পরিবেশন করেন কমিটি, দলীয় নাচ করেন কর্মজীবি নারী, এছাড়াও লাইভ আর্ট আয়োজন করে জীবন গঠন উন্নয়ন সংস্থা। আবৃতি ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ এর আব্দুস সালাম। সবশেষে বিকেল ৫টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মশাল মিছিল নিয়ে তারেক মাসুদ ও মিশুক মনীর চত্তরে শেষ করা হয়।
প্রচারপত্র
নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস ২০২৪
বিচারের নামে অবিচার হয়, নারী কোথাও নিরাপদ নয়
দেশের বিভিন্ন স্থানে নারীদের পেশা, পোশাক-পরিচ্ছদ, সাজ-সজ্জা, টিপ পরা, মাথায় কাপড় না দেয়া, একা একা বা ছেলে বন্ধু নিয়ে ঘোরাফেরা বা বেড়ানো নিয়ে প্রকাশ্য জনসমক্ষে হয়রানি, নির্যাতন ও মারপিট করা হচ্ছে। কিছু মানুষ একত্রিত হয়ে এগুলো করছে আর অনেক মানুষ সেটা নীরবে দেখছে। অনেকে তাতে উৎসাহ যোগাচ্ছে, মোবাইলে লাইভ করছে, ছবি তুলে বা ভিডিও করে ভাইরাল করছে। অনেকে আবার এগুলোকে জনতার বিচার বলেও দাবি করছে। আমরা বলছি, প্রকাশ্য জনসমক্ষে কিংবা ঘরে অথবা বাইরে, যেকোনো স্থানে কোনও নারীকে তার পেশা, পোশাক-পরিচ্ছদ, সাজ-সজ্জা ও চলাফেরায় বাধা দান বা হয়রানি ও নির্যাতন করা, পেটানো বা তার উপর কোনোরকম সহিংস আচরণ এবং তার ভিডিওচিত্র ধারণ ও প্রকাশ করা কোন বিচার তো নয়ই বরং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ও দÐনীয় অপরাধ। এর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ জারি আছে, থাকবে।
১৯৬০ সালের ২৫ নভেম্বর ডোমিনিক্যান রিপাবলিকের স্বৈরাচারী সরকার বিরোধী মিরাবেল ভগ্নিত্রয়কে সেনা সদস্য দ্বারা ধর্ষণ ও হত্যাকাÐকে স্মরণ করে ১৯৮১ সালে ল্যাটিন আমেরিকান ও ক্যারিবিয় নারী সম্মেলন ২৫ নভেম্বরকে “নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস” ঘোষণা করে। লক্ষ্য ছিলো নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা। এই লক্ষ্যে ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর উইমেন্স গেøাবাল লিডারশীপের এক প্রশিক্ষণে ২৩টি দেশ থেকে আগত অংশগ্রহণকারীগণ “নারী নির্যাতন মানবাধিকারের লঙ্ঘন”-এই চিন্তার ভিত্তিতে ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর ‘মানবাধিকার দিবস’ পর্যন্ত পক্ষকাল ব্যাপী নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কর্মসূচি গ্রহণের প্রস্তাব করেন। এই ডাকে সাড়া দিয়ে দেশে দেশে হাজার হাজার সংগঠন ১৬দিন ব্যাপী নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশ^ব্যাপী অভিযানে অংশগ্রহণ করে আসছে।
বাংলাদেশে ‘নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস উদ্যাপন কমিটি’ ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতিবছর একেকটি নির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালন করছে। এবারের প্রতিপাদ্য “বিচারের নামে অবিচার হয়, নারী কোথাও নিরাপদ নয়।”
সকল বয়সের, সকল শ্রেণি-পেশার নারীই প্রতিনিয়ত ঘরে-বাইরে, রাস্তা-ঘাটে, যানবাহনে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, যুদ্ধক্ষেত্রে, দুর্যোগে-দুর্বিপাকে, এমন কি আনন্দানুষ্ঠানেও যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণসহ নানা ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বা এই আক্রমণের ঝুঁকিতে থাকছে। এটা নতুন কোন বিষয় নয় কিন্তু নারীর উপর এই অপরাধের পুনরাবৃত্তি আমরা আর চাই না, তাই এর বিরুদ্ধে আমরা পুনরায় আওয়াজ তুলছি, যাতে সরকার ও প্রশাসন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং জনগণ সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে নারীর উপর সকল ধরনের হয়রানি, নির্যাতন, সহিংসতা, অবিচার প্রতিরোধ ও প্রতিকারে জোরালো ভূমিকা রাখে, কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং প্রত্যেক অপরাধীর নিরপেক্ষ বিচার সুনিশ্চিত করে।
আমাদের দাবি:
* নারীর উপর সকল প্রকার হয়রানি, নির্যাতন ও সহিংসতা প্রতিরোধ এবং প্রতিকারে সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নিন
* নারীর উপর যেকোনো ধরনের সহিংসতা সংঘটনকারী ব্যক্তি ও তার আশ্রয়-প্রশ্রয় দানকারীর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিন, নারীনির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীকে গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করুন
* নারী নির্যাতনের কোন ঘটনা ঘটতে দেখলে বা শুনলে তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনকে জানান এবং জন-প্রতিরোধ গড়ে তুলুন
* সংবাদমাধ্যমগুলো নারীর প্রতি অধিকতর সংবেদনশীল থেকে নিরপেক্ষ ও সত্য সংবাদ প্রকাশ করুন
* সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীগণ ঘটনার শিকার নারীকে হেয় প্রতিপন্ন না করে ঘটনা সংঘটনকারীকে চিহ্নিত করে আইনের হাতে তুলে দিতে সহায়তা করুন। ঘটনার ছবি বা ভিডিওচিত্র প্রকাশ ও প্রচারে দায়িত্বশীল হোন, যাতে ঐ নারী ও তার পরিবারকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে না হয়।
নারীর সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও পুলিশি নিরাপত্তার পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তার দিকেও আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে, তাই আসুন আমরা যেকোনো স্থানে, যেকোনো সময়ে, যেকোন পরিস্থিতিতে নারীর উপর সকল প্রকার সহিংসতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করি, প্রতিরোধ গড়ি।
কর্মসূচি: জমায়েত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পদযাত্রা
দিন-ক্ষণ: ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১/২৫ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার বিকেল ৪টা – সন্ধ্যা ৬টা
স্থান: কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা।
নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ দিবস উদ্যাপন কমিটি
প্রকাশ কাল: ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১/২৫ নভেম্বর ২০২৪