০৮ পৌষ ১৪৩০/২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ সন্ধ্যা ৫.০০ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে নারীপক্ষ’র বিশেষ স্মরণ অনুষ্ঠান ‘আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার’। মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া কাছের মানুষগুলোর মুখ আমাদের স্মৃতির মণিকোঠায় এখনও সমুজ্জ্বল।১৯৮৮ সাল থেকে প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে বিভিন্ন প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে নারীপক্ষ নিয়মিতভাবে “আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার” অনুষ্ঠানটি উদ্যাপন করে আসছে। এবারের প্রতিপাদ্য “নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা থেকে নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন”।
স্বাধীনতা পরবর্তীতে প্রায় প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, বিশেষ করে নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর সহিংসতা অব্যাহত আছে। অনেক সময় স্থানীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও নারী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর সহিংসতা হয়েছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণ করে মোমবাতি জ্বালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান হয়ে সকল অসমতা দূর করে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করবে।
এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ‘আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে’ গানের সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে উপস্থিত সকলে একটি করে আলোর শিখা জ্বালিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন নারীপক্ষ’র সদস্য রেহানা সামদানী। গান পরিবেশন করেন জান্নাত-এ-ফেরদৌসী ও নারায়ণ চন্দ্র শীল, ছায়ানট । কবিতা আবৃত্তি করেন ইকবাল আহামেদ ও তন্বী সোম। স্মৃতিচারণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, মোকাররম হোসেন, সেক্টর-৭ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউদ্দীন আহমেদ, সেক্টর- ২।
নারীপক্ষ’র সদস্য রাশিদা হোসেন এর ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
ঘোষণাপত্র
মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে নারীপক্ষ ১৯৮৮ সাল থেকে প্রতিবছর বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে একেকটি প্রতিপাদ্য নিয়ে “আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার” অনুষ্ঠান আয়োজন করে আসছে। এবারের প্রতিপাদ্য “নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা থেকে নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।”
আজ এই অনুষ্ঠান থেকে আমরা বিশ্বব্যাপী বিক্ষুদ্ধ জনতার সাথে ফিলিস্তিনিদের, বিশেষত গাজাবাসীর অপরিসীম প্রত্যয় ও সাহসের প্রতি সংহতি জানচ্ছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক গাজাবাসীর প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি। ফিলিস্তিনের গাজা অঞ্চলের জনগণের ওপর ইসরাইলের ক্রমবর্ধমান নৃশংস আক্রমণ, হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ আমাদেরকে ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ, মর্মাহত এবং ব্যথিত করছে। আমরা এই যুদ্ধে নিহত সকল ফিলিস্তিনির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং তাদের শোকার্ত পরিবারবর্গ ও নিকটজনের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়ে এখন ১ মিনিট নীরবতা পালন করবো। …………….।
দেশের স্বাধীনতার জন্য ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোষ্ঠী, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে যুদ্ধ করেছে, ত্যাগ স্বীকার করেছে; হারিয়েছে অনেককিছু কিন্তু স্বাধীনতার ৫২ বছরেও বাংলাদেশটা সেই সকল মানুষের দেশ হয়ে উঠতে পারেনি, বিশেষকরে নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের সুরক্ষা এবং জানমালের কোন নিরাপত্তাবিধান আজও হয়নি।
স্বাধীনতা পরবর্তীতে প্রায় প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, বিশেষকরে নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর সহিংসতা অব্যাহত আছে। অনেক সময় স্থানীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও নারী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর সহিংসতা হয়েছে।
আমাদের আরও একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। এই নির্বাচনকে ঘিরেও যেন আর কোনো নারী বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের উপর হত্যা, ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা বা তাদের বাড়ি-ঘর, উপাসনালয় জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর না হয় অর্থাৎ, তাদের জানমালের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে সরকার, পুলিশপ্রশাসন, রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজকে সতর্ক থাকতে হবে, বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
আমাদের দাবি,
* ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময়ে এবং নির্বাচন পরবর্তীতে সেখানকার নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনে সম্পৃক্ত প্রতিটি প্রশাসন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ ও এলাকাবাসীর যৌথ উদ্যোগে কার্যকর পদক্ষেপ নিন
* নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রদান এবং তা বাস্তবায়ন তদারকি করুন
* সরকারি জরুরী সেবাসমূহকে অধিক সক্রিয় ও কার্যকর রাখুন
* সহিংসতা সংঘঠনকারী ব্যক্তি ও তার আশ্রয়-প্রশ্রয় দানকারীর বিরুদ্ধে জনগণ রুখে দাঁড়ান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিন
* ধর্ষণ ও যৌননির্যাতনসহ যেকোনো ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে স্থানীয়ভাবে জন-প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
আসুন, মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে আজ এখানে প্রজ্জ্বলিত আলোয় আলোকিত হয়ে আমরা সকল অসমতা, বৈষম্য দূর করে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাই।