“নারী ও মেয়ে শিশুর উপর সহিংসতা বন্ধে কথা বলার সহায়ক পরিবেশ তৈরি এবং নির্যাতন বন্ধ করা” এই লক্ষ্য ইউকেএইড এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগীতায় ২০১৯-২০২১ সাল পর্যন্ত ‘নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে নারীপক্ষ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নারীপক্ষ ঢাকার বাহিরে ৪টি সহযোগী সংগঠন জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট ও ঝিনাইদহসহ ঢাকায় ২ নং সিটি কর্পোরেশনের কালশির কয়েকটি বস্তিতে উর্দুভাষী ও বাঙ্গালীদের সাথে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ঢাকায় কালশিসহ ২টি হাসপাতাল, ৭টি থানা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবোনাল ২,৬,৮ ও ৩টি কলেজ এবং ঢাকার বাহিরে ৪টি সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমে ৪টি জেলার ৮টি উপজেলা, ১৬টি ইউনিয়ন, ৮টি থানা, ৮টি হাসপাতাল, ৮টি বিদ্যালয়, ৪টি কলেজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবোনালে কাজ করছে।
নারীপক্ষ ‘নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ’ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সহিংসতার শিকার নারী ও মেয়ে শিশুর প্রতি সমাজের প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণ ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, তৃনমূলে নারী,পুরুষ ও কিশোর-কিশোরীদের সাথে কাজ করার পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠান যেমন হাসপাতাল, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও আদালতে বিচার প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা এবং মান উন্নয়নের জন্য অন্তর্নিহিত সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত ও উত্তরণে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
নারীকে পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে অধিকার সম্পন্ন নাগরিক ও মর্যাদা সম্পন্ন মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে নারীর অধিকার ও মানবাধিকার বিষয়ে কাজ করা নারীপক্ষ’র সকল কাজের কেন্দ্রবিন্দু। নারীর উপর সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আন্দোলনকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নারীপক্ষ ১৯৯৭ সালে নারীর উপর সহিংসতার বিশ্লেষণাত্মক একটি সারথী গবেষণা করে। থানা, হাসপাতাল ও আদালত সহিংসতার শিকার নারীর সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করছে। এই প্রেক্ষাপটে নারীপক্ষ রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ড অর্থাৎ সহিংসতার শিকার নারীর ঘটনা তদন্ত, সহিংসতার শিকার নারীর মানসিক সহায়তা প্রদান, চিকিৎসা ব্যবস্থা ও আদালতের বিচার প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ নিয়মিত পরিবীক্ষণ করার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে ২০১৯ সালে “নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ” নামে প্রকল্প হাতে নেয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে নারীপক্ষ সরকারি সেবার মান উন্নয়ন, আইন ও নীতি প্রয়োগ এবং সেবা প্রদানকারীর দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ নিয়মিত “তৃতীয় পক্ষের” উপস্থিতিতে পর্যবেক্ষণ শুরু করে। পর্যবেক্ষণকৃত তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করে অর্ন্তনির্হিত সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত হয় এবং পরবর্তীতে এডভোকেসির মাধ্যমে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ১৯৯৫, ২০০০ ও ২০০৩ এর বিভিন্ন পরিবর্তন ও সংশোধনে নারীপক্ষ ভ’মিকা রাখে। সহিংসতার শিকার ব্যক্তির মেডিকোলিগ্যাল/ডাক্তারী পরীক্ষার নীতি পরিবর্তনে সরকারের সাথে যৌথভাবেও কাজ করে। এরই ধারাবাহিকতায় নারীপক্ষ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, স্বাস্থ্য বিভাগ ও বিচার বিভাগের সাথে একযোগে কাজ করে আসছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগী সংগঠনকে সাথে নিয়ে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ প্রকল্প’র জন্য একটি কর্মকৌশল তৈরি করা হয়েছে। এটি এমন একটি কর্মকৌশল যার মাধ্যমে সহিংসতার শিকার ব্যক্তির প্রতি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা প্রদানের ধরণ, সরকারি কর্মকর্তাদের আচরণ, সম্পদের সরবরাহ, ব্যবহার ও অপ্রতুলতাসহ যাবতীয় বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করা হয়। পর্যবেক্ষনের ফলে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের (থানা, হাসপাতাল, আদালত) সাথে আলোচনা করা হয়। যা সেবার মান উন্নয়নে ভৃুমিকা রাখে।
প্রকল্পের লক্ষ্য- নারী ও মেয়ে শিশুর উপর সহিংসতা বন্ধে কথা বলার সহায়ক পরিবেশ তৈরি এবং নির্যাতন বন্ধ করা
প্রকল্প’র ফলাফল-
* সহিংসতার শিকার নারী ও মেয়েদের স্বাস্থ্য সেবা ও আইনগত সেবা পাওয়ার সুযোগ তৈরী হয়েছে
* জেন্ডার এর আলোকে নারীর অধিকার বিষয়ে পুরুষ ও ছেলেরা তাদের মনোভাবনা, আচরণ এবং চর্চার ক্ষেত্রে পরিবর্তিত হয়েছে
* নারী ও তরুণীদের সেবা প্রদানের বিষয়ে স্থানীয় পর্যায়ে সরকারী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি অধিদপ্তর এর জবাবদিহিতা এবং দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি হয়েছে
* নারীর নিজেদের উপার্জিত অর্থ ও সম্পদের উপর ভোগ ও নিয়ন্ত্রণে সুযোগ তৈরী হয়েছে
* নারীর মানবাধিকার সুরক্ষায় আইন ও নীতিমালা পর্যালোচনা, সংশোধন এবং বাস্তবায়ন হয়েছে
মূল কার্যক্রম –
* বেইজ লাইন সার্ভে
* চিকিৎসা ও আইনি সেবা নিশ্চিত করার জন্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে সংলাপ
* দল গঠন (নারী,পুরুষ,কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী)
* দিবস উদযাপন ( মানবাধিকার দিবস, আর্ন্তজাতিক নারী দিবস, আর্ন্তজাতিক নারী নির্যাতন প্রতিবাদ দিবস)
* স্থানীয় জনগণ, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করার মাধ্যমে সহিংসতা প্রতিরোধে তাদেরকে সম্পৃক্ত করা
* সহিংসতার শিকার নারীর আত্মশক্তি বৃদ্ধি, আত্মনির্ভরশীলতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি বিষয়ক কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ
* প্রতিটি জেলার ২টি থানা, ২টি হাসপাতাল এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল পর্যবেক্ষন
* ঢাকা জেলায় ৭টি থানা. ২টি হাসপাতাল ও ৩টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল পর্যবেক্ষণ
* নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা ৮০ টি মামলা ফলোআপ
* ফলোআপ মামলার তথ্য নিয়ে গবেষনা প্রতিবেদন তৈরী করে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে এ্যাডভোকেসি করা
* আইন ও পলিসি পর্যালোচনা এবং সরকারের সাথে এডভোকেসি করা
* সরকারী প্রতিষ্ঠান ও নির্বাচিত মামলাসমূহ পরিবীক্ষণ, তথ্য সংগ্রহ ও সীমাবদ্ধতা উত্তরণে এ্যাডভোকেসি করা
* সরকারী আইন সহায়তা তহবিল সক্রিয়করণ এবং এ্যাডভোকেসী
প্রকল্প কর্মএলাকা:
ক্র.নং | সংগঠনের নাম ও জেলা | কর্মরত উপজেলা | কর্মরত থানা | কর্মরত হাসপাতাল | আদালত |
১. | নারীপক্ষ, ২নং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা | ১.পল্লবী থানা ২. মিরপুর থানা ৩. তেজগাঁও থানা ৪. মোহাম্মদপুর থানা ৫. ধানমন্ডি থানা ৬, হাজারীবাগ থানা ৭. শাহবাগ থানা ১. ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল |
১. ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
২. শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী কলেজ ও হাসপাতাল |
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২,৬,৮ |
সহযোগী সংগঠনের তালিকা ও কর্মএলাকা:
ক্র.নং | সংগঠনের নাম ও জেলা | কর্মরত উপজেলা | কর্মরত থানা | কর্মরত হাসপাতাল | আদালত |
১ | তরঙ্গ মহিলা কল্যান সংস্থা, জামালপুর | ১. সদর উপজেলা
২. মেলানন্দহ উপজেলা |
১. সদর থানা
২. মেলানন্দহ থানা |
১. জামালপুর সদর হাসপাতাল
২. উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মেলানন্দহ |
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল |
২ | প্রোগ্রাম ফর উইমেন ডেভেলপমেন্ট (পিডাব্লিউডি) সিরাজগঞ্জ | ১.সদর উপজেলা ২. কামারখন্দ উপজেলা |
১.সদর থানা
২.কামারখন্দ থানা |
১.২৫০ শষ্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল ২. উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কামারখন্দ |
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল |
৩ | হার্টকোর পিপলস ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন(এইচপিডিও, জয়পুরহাট | ১.সদর উপজেলা ২.পাঁচবিবি উপজেলা |
১.সদর থানা ২.পাঁচবিবি থানা |
১. ২আধুনিক জেলা হাসপাতাল, জয়পুরহাট ২.উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পাঁচবিবি |
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল |
৪ | ওয়েরফেয়ার এফোর্টস (উই), ঝিনাইদহ | ১.সদর উপজেলা ২.কালিগঞ্জউপজেলা |
১. সদর থানা ২.কালিগঞ্জ থানা | ১. ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল ২.উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কালিগঞ্জ |
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল |
প্রকল্প সমন্বয়কারী: রওশন আরা
কর্মদলের সদস্যবৃন্দ:
- রীতা দাশ রায়
- গীতা দাস
- নাজমুন নাহার শেলী
- ফরিদা ইয়াসমিন
Click here For PDF