Select Page
২০০৬-০৩-০৮
আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০০৬

শুধু নারী নয় মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি চাই

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশ্বব্যাপী নারী আন্দোলনের বিভিন্ন অধ্যায় ঐতিহাসিকভাবে এই দিনটির সাথে সম্পৃক্ত। ১৮৫৭ সালে ৮ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে সেলাই কারখানার নারী শ্রমিকরা বিপজ্জনক ও অমানবিক কর্ম পরিবেশ, স্বল্প মজুরি ও দৈনিক ১২ ঘন্টা শ্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল বের করে। তাদের সেই শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর পুলিশ হামলা চালায়। তিন বছর পর ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ নারী শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নিজস্ব ইউনিয়ন গঠনে সমর্থ হয়।

এই সব ঘটনার ধারাবাহিকতায় নারীদের বিভিন্ন প্রতিবাদী ভূমিকার প্রতি আন্তর্জাতিক সংহতি প্রকাশ, সমর্থন দান ও সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরির প্রতীক হিসেবে একটি দিনকে চিহ্নিত করার উপলব্ধি জাগে। অতঃপর ১৯১০ সালে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলনে জার্মান সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী ক্লারা জেটকিনের প্রস্তাব অনুসারে ঐতিহাসিকভাবে ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

নারী আন্দোলনের এই প্রতিবাদী ধারাকে তুলে ধরে বাংলাদেশে এই দিবসটি পালনের লক্ষ্যে ১৯৯১ সালে বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে ”আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন কমিটি” গঠিত হয়। বিগত ১৫ বছর ধরে এই কমিটি নারী অধিকার বিষয়ক প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে দিবসটি উদযাপনের মাধ্যমে নারী আন্দোলনের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে। এবছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারন করা হয়েছে ”শুধু নারী নয় মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি চাই”।

লক্ষ্যনীয় বিষয়, দেড়শ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে নারী তার অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন করে যাচ্ছেন কিন্তু অবস্থা বদলায়নি। একবিংশ শতাব্দীতেও বাংলাদেশের গার্মেন্টসের নারী শ্রমিকরা স্বল্প মজুরিতে অধিক শ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়া অস্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশের যন্ত্রণা, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন, নিরাপত্তাহীনতা এমনকি যে কোনো সময় মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হচ্ছে। দৈনিক পত্রিকার প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় ‘৯০ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০০৬ পর্যন্ত অগ্লিকান্ড ও ভবন ধ্বসে কমপক্ষে ২২৭ জন নারী শ্রমিক নিহত হয়েছেন এবং বহু সংখ্যক নিখোঁজ রয়েছেন। নিহত নারী শ্রমিকের আত্মীয়রা ক্ষতিপূরণ তো পানই না বরং লাশ উদ্ধার করতে অর্থ ও শ্রমের কষ্টসহ পোহাতে হয় নানা ঝামেলা। এই অবস্থা শুধূ গার্মেন্টসে নয়; সর্বক্ষেত্রে নারীর পারিশ্রমিক, মর্যাদা ও প্রাপ্তি পুরুষের সমান দেয়া হয় না।

নারী নির্যাতন পরিবার থেকেই শুরু হয়। এই নির্যাতন ধারাবহিকভাবে সমাজে, রাজপথে, কর্মস্থলে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে হয়ে থাকে। যুগে যুগে অবস্থা ও পরিবেশ ভেদে নারী নির্যাতনের ধরন পরিবর্তিত হচ্ছে। খাদ্য-পুষ্টিগ্রহণ থেকে শুরু করে এসিডদগ্ধ ও যৌত্মুকের বলিসহ নারীরা মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক দিক থেকে নির্যাতনের শিকার হয়। সর্বক্ষেত্রে নারীরা শুধু নারী হওয়ার কারণেই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

সকল ক্ষেত্রেই নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য বিদ্যমান। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারীকে বিদেশগমনসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় বিষয়ে লিখতে হয় কে তার অভিভাবক। আবার আইগতভাবে পিতা হন সন্তানের অভিভাবক। সরকারি কাঠামোতে উচ্চপদে নারীদের অংশগ্রহণ অপ্রতুল। অন্যদিকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ মোটেই ইতিবাচক নয়। সর্বক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য প্রকারান্তরে নির্যাতনের শিকার হতে বাধ্য করছে নারীকে। সমাজের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নারীরা মানুষের মতো বাঁচাবো; এই হোক আমাদের অঙ্গিকার।

আমাদের দাবি
• নারীর প্রতি সকল ধরনের বৈষম্য ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।
• নারীর প্রতি অমর্যাদা ও অবমাননাকর কার্যক্রম ও আচরণ বন্ধ করতে হবে।
• নারীর শ্রমের ন্যায্য মূল্য ও মর্যাদা দিতে হবে।
• কর্মক্ষেত্রের পরিবেশের গুণগতমান উন্নয়ন ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে হবে।

 

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন কমিটি
নারীপক্ষ
 র‌্যাংগস নীলু স্কোয়ার (৫ম তলা), সড়ক- ৫/এ, বাড়ী- ৭৫, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯, বাংলাদেশ।
জিপিও বক্স-৭২৩, ঢাকা-১০০০, ফোন : ৮৮০-২-৮১১৯৯১৭, ৮১৫৩৯৬৭, ফ্যাক্স : ৮৮০-২-৮১১৬১৪৮
ই-মেইল : naripokkho@gmail.com, ওয়েব : www.naripokkho.org.bd

Pin It on Pinterest

Share This