৮ মার্চ- আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৯
একশত বাষট্টি বছর আগে নারীর উপযুক্ত কর্মপরিবেশ, শ্রমের ন্যায্য মজুরীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে লড়াইয়ের সূচনা হয়েছিল তা আজও চলছে আরো ব্যাপক ও বিস্তৃত পরিসরে, কারণ নারী এখনও পায়নি মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার সম্পূর্ণ অধিকার, সম্মান, মর্যাদা ও নিরাপত্তা।
১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউ ইয়র্কের সেলাই কারখানায় বিপদজনক ও অমানবিক কর্মপরিবেশ, স্বল্প মজুরী এবং দৈনিক ১২ ঘন্টা শ্রমের বিরুদ্ধে নারী শ্রমিকরা প্রতিবাদ করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে আরো অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনার ধারাবাহিকতায় ১৯১০ সালে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলনে জার্মান সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী ক্লারা জেটকিন এর প্রস্তাবে ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ ঘোষণা করা হয়। প্রতিবাদী আন্দোলনের এই ধারার সাথে একাত্ম হয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন নারীসংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন জোটগত বা এককভাবে দিবসটি পালন করে আসছে। প্রতিবছরের মতো এবারও নারীপক্ষ ঢাকায় এবং একইসাথে দেশের আরো ৫৮টি জেলা শহরে সহযোগী সংগঠন ও নারী সংগঠনসমূহের নেটওয়ার্ক ‘দুর্বার’ এর মাধ্যমে দিবসটি পালন করছে। আমাদের এবারের প্রতিপাদ্য “নারীর নাগরিক অধিকার।”
বাংলাদেশ সংবিধান দেশের সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার সমানভাবে ভোগের নিশ্চয়তা দিয়েছে কিন্তু সেই সংবিধানই আবার ব্যক্তি অধিকারের বিষয়টি উহ্য রেখে একটি সাংঘর্ষিক অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ: ২৮ (১)- এ বলা আছে, “ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী, পুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না।” অথচ ২৮.২ অনুচ্ছেদে কেবল রাষ্ট্র ও জনজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করার কথা বলা হয়েছে। ফলে ব্যক্তি অধিকারের ক্ষেত্রে নারী সবসময়ই বৈষম্যের শিকার। নারী যেমন সম্পত্তিতে সম-অধিকার পায় না ঠিক তেমনি বিয়ে ও তালাকের ক্ষেত্রেও সমমর্যাদার অধিকারী নয়। নারীকে মা হিসেবে একটি মহান স্থানে রাখা হলেও অভিভাবকত্ব আইনে নারীর সন্তানের স্বাভাবিক অভিভাবকত্ব স্বীকৃত নয়, সে জিম্মাদার মাত্র। ফলশ্রæতিতে মন্ত্রী নারী, বিচারক নারী বা উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত যেকোন নারীই হোক না কেন ব্যক্তিজীবনে সে সর্বদাই অধস্তন অবস্থানে, যার অভিভাবকত্ব পুরুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের অবাধ চলাফেরার নিশ্চয়তা দিলেও নারীর চলাফেরার স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত এবং অনিরাপদ। নারীর রাতের চলাফেরা পরিবার ও সমাজের কাছে আপত্তির এবং সন্দেহের। রাষ্ট্র ঘরে-বাইরে নারীর সুরক্ষা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ, তাই নারীর বেঁচে থাকার অধিকারও ক্ষুণœ হচ্ছে পদে পদে। এক কথায় নারী নাগরিক হিসেবে কোন অবস্থায়ই সম-অধিকার পায় না।
নারীকে অধস্তন অবস্থানে রাখতে সংস্কৃতি, প্রথা ও ধর্ম প্রতিনিয়ত মুখ্য ভূমিকা রেখে চলেছে এবং এই অবস্থা টিকিয়ে রাখছে রাষ্ট্র, অর্থাৎ সার্বিক বিবেচনায় নারীর অধস্তন অবস্থানের জন্য দায়ী সম্পূর্ণরূপে রাষ্ট্র।
নারীর অবস্থার সাথে সাথে অবস্থানের পরিবর্তন ঘটিয়ে তার নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব। তাই রাষ্ট্র, বিশেষ করে সরকারের কাছে আমাদের দাবি, রাষ্ট্র ও জনজীবনের সাথে সাথে ব্যক্তিজীবনের সর্বস্তরেও নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৬ অনুযায়ী, মৌলিক অধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক সকল প্রকার আইন বাতিল করা হোক। পাশাপাশি সরকারের অঙ্গীকারকৃত আন্তর্জাতিক সনদ ও দলিলসমূহ বাস্তবায়ন করে নারীকে সমমর্যাদার একজন নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হোক।
কর্মসূচি
শুক্রবার, ২৪ ফাল্গুন ১৪২৫/৮ মার্চ ২০১৯
সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত, ভ্রাম্যমান গান, নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
স্থান: মানিক মিঞা এভিনিউ, কালসী ও আশুলিয়া।