লিফলেট
বাল্যবিয়ে বন্ধ কর, নারী নির্যাতন রোধ কর
৮ মার্চ, ‘আন্তর্জাতিক নারীদিবস’। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্কের সেলাই কারখানায় বিপদজনক ও অমানবিক কর্মপরিবেশ, স্বল্প মজুরী এবং দৈনিক ১২ ঘন্টা শ্রমের বিরুদ্ধে নারী শ্রমিকরা প্রতিবাদ করে। এরপর বিভিন্ন সময়ে ৮ মার্চে উল্লেখযোগ্য আরো ঘটনার ধারাবাহিকতায় ১৯১০ সালে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলনে জার্মান সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী ক্লারা জেটকিন এর প্রস্তাবে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারীদিবস ঘোষণা করা হয়।
নারী আন্দোলনের এই প্রতিবাদী ধারার সাথে একাতম হয়ে ১৯৯১ সাল থেকে নারীপক্ষ জোটগত বা এককভাবে একটি সুনির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালন করছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য ”বাল্যবিয়ে বন্ধ কর, নারী নির্যাতন রোধ কর।”
যুগে যুগে নারীর উপর নানাভাবে, নানা কৌশলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্যাতন হয়ে আসছে। এরই একটি ভয়াবহ রূপ বাল্যবিয়ে। বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে সামাজিকভাবে স্বীকৃত ও আইনগতভাবে বৈধ। বাল্যবিয়ের মাধ্যমে নারীকে শারিরীক ও মানসিকভাবে তৈরি হবার আগেই অপরিণত বয়সে যৌন সম্পর্ক, গর্ভধারণ এবং পারিবারিক ও সামাজিক দায়িতব গ্রহণে বাধ্য করা হয়, যা নারীর জীবনকে করে তোলে দুর্বিসহ।
আসুন ! সকল কুসংষ্কার, অপচর্চা, অপব্যাখা, পিছিয়ে পড়া চিন্তা-চেতনা ও ভয়-ভীতি থেকে মুক্ত হয়ে বাল্যবিয়ে বন্ধ ও নারী নির্যাতন রোধ করার লক্ষ্যে আমরা প্রত্যেকে তৎপর হই। নিজে উদ্যোগী হই, অন্যের উদ্যোগে সামিল হই।
দেশব্যাপী চলমান জ্বালাও-পোড়াও, গুম-খুন-হত্যা এবং নির্বিচার ‘ক্রসফায়ার ও জেল-জুলুমজনিত নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির কারণে নারীদের উপর সংঘটিত নিপীড়ন-নির্যাতন ও সহিংসতা হয়তো চাপা পড়ে যাচ্ছে। আসুন এই সবকিছুর বিরুদ্ধে আমরা স্বোচ্চার হই।
ঘোষণাপত্র
৮ মার্চ, ‘আন্তর্জাতিক নারীদিবস।’ ঐতিহাসিকভাবে এই দিনটি বিশ্বব্যাপী নারী অধিকার আন্দোলনের সাথে যুক্ত। ১৮৫৭ সালে ৮ মার্চ নিউইয়র্ক শহরে সেলাই কারখানার নারী শ্রমিকরা বিপদজনক ও অমানবিক কর্ম পরিবেশ, স্বল্প মজুরী ও দৈনিক ১২ ঘন্টা শ্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল বের করে। সেই মিছিলের উপর পুলিশ হামলা চালায়। এর তিন বছর পর ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ নারী শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নিজস্ব ইউনিয়ন গঠনে সমর্থ হয়।
এইসব ঘটনাধারার সম্মিলনে নারীর বিভিন্নমুখী প্রতিবাদী ভূমিকার প্রতি আন্তর্জাতিক সংহতি প্রকাশ, সমর্থন দান ও সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরীর প্রতীক হিসেবে একটি দিনকে চিহ্নিত করার উপলব্ধি জাগে। অতঃপর ১৯১০ সালে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলনে জার্মান সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী ক্লারা জেটকিনের প্রস্তাব অনুসারে ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারীদিবস’ ঘোষণা করা হয়।
নারী আন্দোলনের এই প্রতিবাদী ধারার সাথে একাত্ম হয়ে ১৯৯১ সাল থেকে নারীপক্ষ জোটগত বা এককভাবে প্রতিবছর একটি সুনির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালন করছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য ”বাল্যবিয়ে বন্ধ কর নারী নির্যাতন রোধ কর।”
দেশব্যাপী চলমান জ্বালাও-পোড়াও, গুম-খুন-হত্যা এবং নির্বিচার ‘ক্রসফায়ার’ ও জেল-জুলুমজনিত নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যেও আজকের দিনে আপনাদের উপস্থিতি আমাদের আশান্বিত করে।
যুগে যুগে নারীর উপর নানাভাবে, নানা কৌশলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্যাতন হয়ে আসছে। এরই একটি ভয়াবহ রূপ বাল্যবিয়ে, যার এখনো সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বাল্যবিয়ের ব্যাপারে আইনী অবস্থান ঘোলাটে। বর্তমান আইন অনুযায়ী বাল্যবিয়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধ কিন্তু অবৈধ নয়। বাল্যবিয়ের মাধ্যমে নারীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে তৈরি হবার আগেই অপরিণত বয়সে যৌন সম্পর্ক, গর্ভধারণ এবং পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব গ্রহণে বাধ্য করা হয়, যা নারীর জীবনের অনেক সম্ভাবনাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে।
বাল্যবিয়ের মূলে রয়েছে, নারীকে সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র ও যৌন-সেবাদাসী হিসেবে বিবেচনা করার মানসিকতা ও সংস্কৃতি। এর সাথে আছে সনাতনী চিমত্মা, যেমন: মেয়েরা বাবা-মায়ের কাছে অন্যের (স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির) গচ্ছিত সম্পদ; তা যত দ্রুত তাদের হাতে তুলে দেওয়া যায় ততই মঙ্গল। আমাদের সমাজে মেয়েদের প্রতিষ্ঠার অর্থ হচ্ছে বিয়ে; অপরদিকে ছেলেদের প্রতিষ্ঠার জন্য চাই ভালো শিক্ষা-দীক্ষা ও কর্মসংস্থান। এসবের সাথে যুক্ত হয় নিরাপত্তাহীনতা এবং দারিদ্রের অজুহাত। ধর্মের অপব্যাখ্যাও এই অপচর্চার জন্য দায়ী।
প্রায় একশত বছর আগে নারীকে বাল্যবিয়ের হাত থেকে রক্ষার উদ্যোগ হিসেবে প্রণীত হয়েছিলো ”বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন- ১৯২৯” কিন্তু অত্যমত্ম পরিতাপের বিষয়, বাল্যবিয়ে রোধ তো হয়ইনি বরং আজও বাল্যবিয়ে বন্ধে আন্দোলন এবং সরকার ও নীতিনির্ধারকদের সাথে দেনদরবার করতে হচ্ছে।
১৩ থেকে ১৯ বছরের মেয়ের বিয়ের হারের ক্ষেত্রে বিশেবর সর্বোচ্চ এগারোটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চতুর্থ স্থানে। দেশের বিদ্যমান আইনে বিয়ে নিবন্ধনের ন্যূনতম বয়স নারীর জন্য ১৮ বছর ও পুরুষের জন্য ২১ বছর হলেও প্রকৃতপক্ষক্ষ বিয়ে হচ্ছে অনেক কম বয়সে। আইনী বিধি-বিধান সত্ত্বেও বাল্যবিয়ে রোধ করা যাচ্ছে না। সরকার ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে যে, মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছরই থাকছে, তবে বাবা-মা চাইলে বা আদালতের সম্মতিতে ১৬ বছর বয়সে বিয়ে দেয়া যাবে। আমরা সরকারের এই ঘোষণার জোর প্রতিবাদ এবং তা প্রত্যাহরের দাবি জানাই, কারণ এহেন উদ্যোগ নারী ও পরুষের স্বাস্থ্য, সামাজিক অবস্থা এবং অবস্থানকে আরো নাজুক করে তুলবে, যা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না।
বাল্যবিয়ের কুফলসমূহের মধ্যে রয়েছে, অকাল গর্ভধারণ, অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ, প্রসূতি ও নবজাতকের অসুস্থতা ও মৃত্যুঝুঁকি, অপুষ্ট শিশুর জন্ম, শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া, অর্থনৈতিক সুযোগ ও সামাজিক যোগাযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া ইত্যাদি। এছাড়াও, নারীর যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে সে যৌনমিলনে অক্ষম হয়ে পড়ে এবং এ কারণে অনেক স্বামী অন্য নারীতে আসক্ত হয়। আমাদের দেশে বাল্যবিয়ের মাধ্যমে ধর্ষণ আইনগত বৈধতা পায়। এ সবই নারীর স্বাভাবিক জীবনকে বাধাগ্রস্ত ও মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করে, যার ফলে স্বাভাবিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়।
একটি মেয়েশিশু মাতৃগর্ভ থেকে নারী হয়ে ওঠার প্রতিটি ধাপে কোন না কোন ধরনের বৈষম্য, সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে; যা ঘটে থাকে তার পরিবারে, পরিবারের বাইরে, রাস্তাঘাটে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, চাকুরী বা ব্যবসাক্ষেত্রে, এমনকি মৌলিক সেবা গ্রহণ করতে গিয়েও।
যে বয়সে ছেলেরা চলাফেরায় অবাধ স্বাধীনতা পায় সে বয়সে মেয়েদের ঘরের গন্ডির বাইরে যাওয়া প্রায় নিষিদ্ধ; এমনকি বয়ঃসন্ধিকালে যখন তার জন্য প্রয়োজন পারিবারিক সহানুভূতি, আশ্রয় এবং নিরাপত্তা তখন তাদের অনেককেই বিয়ে, যৌতুক, গর্ভধারণ ও সমত্মান জন্মদান, সমত্মান লালন-পালন, নিজের জীবিকা নির্বাহ, ইত্যাদি মোকাবেলা করতে হয়। বিয়ের জন্য নারী-পুরম্নষ উভয়েরই শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা এবং যথাযথ প্রস্ত্ততি দরকার।
বাংলাদেশ নারীশিক্ষা, নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা, দারিদ্র বিমোচন ও নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষক্ষত্রে অনেক সফলতা অর্জন করেছে। আর্থ-সামজিক উন্নয়নের এই বৃহত্তর প্রেক্ষক্ষত, নীতিমালা ও কার্যক্রমের পাশাপাশি বাল্যবিয়ে বন্ধে অধিক শক্তিশালী ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী। নারীকে, তথা দেশ ও জাতিকে রক্ষার স্বার্থে এই অবস্থার অবসান জরুরী এবং তা সম্ভব পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্মিলিত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে।
আমরা সরকার ও সংশিস্নষ্ট মহলের প্রতি দাবি জানাচ্ছি,
• ১৮ বছরের কম বয়সে মেয়ের বিয়ে নয়, তাই বাবা-মা বা আদালতের সম্মতিতে ১৬ বছর বয়সে মেয়ের বিয়ে গ্রহণযোগ্য করার সরকারি উদ্যোগ এখনই বন্ধ করতে হবে
• বাল্যবিয়ে রোধে জন্ম নিবন্ধন সংক্রান্ত একীভূত ডাটাবেইজ তৈরী ও তা সর্বস্তরে, সর্বক্ষক্ষত্রে ব্যবহারের মাধ্যমে বিয়ে নিবন্ধনে নারী-পুরুষের প্রকৃত বয়স যাচাই করুন
• বিয়ে নিবন্ধনের জন্য বয়সের কোন এভিডেভিট সম্পূর্ণ অ-গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিন
• বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে সমন্বিত পদক্ষক্ষপ, যেমন: শিক্ষা বৃত্তি, বিভিন্ন প্রচারাভিযান, সচেতনতামূলক কার্যক্রম, আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ ও আইনের কার্যকর প্রয়োগ, ইত্যাদি কার্যক্রমকে আরো কার্যকর ও জোরদার করার জন্য জরুরীভাবে উদ্যোগ নিন
• নারী-পুরুষ সকলের জন্য যৌনশিক্ষা বাধ্যতামূলক করুন
• বাল্যবিয়েজনিত ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মেয়েদের রক্ষার জন্য বিয়ে এবং যৌন সম্পর্ক স্থাপনসহ জীবনের সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষক্ষত্রে নারীর স্বার্থে কার্যকর উদ্যোগ নিন; অন্যথায় দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী নির্যাতনের শিকার হবে এবং গোটা দেশ সঙ্কটে পড়বে।
আসুন ! সকল কুসংষ্কার, অপচর্চা, অপব্যাখা, পিছিয়ে পড়া চিন্তা-চেতনা ও ভয়-ভীতি থেকে মুক্ত হয়ে বাল্যবিয়ে বন্ধ ও নারীনির্যাতন রোধ করার লক্ষ্যে আমরা প্রত্যেকে তৎপর হই। নিজে উদ্যোগী হই, অন্যের উদ্যোগে সামিল হই।
অনুষ্ঠান
দিনক্ষণ : রবিবার, ২৪ ফাল্গুন ১৪২১/৮ মার্চ ২০১৫, বিকেল ৪:৩০-৫:৩০ মি:
স্থান: রবীন্দ্র সরোবর, সড়ক নং- ৮, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯।
নারীপক্ষ
নারীপক্ষ
র্যাংগস নীলু স্কোয়ার (৫ম তলা), সড়ক- ৫/এ, বাড়ী- ৭৫, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯, বাংলাদেশ।
জিপিও বক্স-৭২৩, ঢাকা-১০০০, ফোন : ৮৮০-২-৮১১৯৯১৭, ৮১৫৩৯৬৭, ফ্যাক্স : ৮৮০-২-৮১১৬১৪৮
ই-মেইল : naripokkho@gmail.com, ওয়েব : www.naripokkho.org.bd