Select Page
২০১০-০৩-০৮
আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০১০

বাজাও আপন সুর
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের ১০০ বছর পূর্তি
২৮ ফাল্গুন ১৪১৬/১২ মার্চ ২০১০

ঘোষনাপত্র

বিশ্ব ব্যাপী নানান অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে উদযাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণার ১০০ বছর পূর্তি। বাংলাদেশে সরকার এবং সরকারের বাইরে নারী সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠন ছাড়াও অনেক রকম প্রতিষ্ঠান নারীর অগ্রযাত্রাকে তুলে ধরে নারী দিবস ঘোষণার শতবর্ষ উদযাপন করছে।

৮ই মার্চের প্রাসঙ্গিকতা বোঝা শুধু নারী আন্দোলনের জন্য নয়, সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামে যুক্ত সকলের জন্য আবশ্যক।
১৮৫৭ সালে নিউ ইয়র্কের সেলাই কারখানাগুলোতে নারী শ্রমিকরা, বিপদজনক ও অমানবিক কর্মপরিবেশ, স্বল্প মজুরী এবং দৈনিক ১২ ঘন্টা শ্রমের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করলে তা পুলিশী হামলার সম্মুখীন হয়। তিন বছর পরে তারা নিজস্ব ইউনিয়ন গঠনে সমর্থ হয়। নারীদের বিভিন্নমূখী প্রতিবাদী ভূমিকার প্রতি আমত্মর্জাতিক সংহতি প্রকাশ, সমর্থন দান ও সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরীর প্রতিক হিসেবে একটি দিনকে চিহ্নিত করার উপলব্ধি জাগে। অত:পর ১৯১০ সালে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে শহরে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলনে, জার্মান সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী ক্লারা জেটকিনের প্রসত্মাবে ৮ই মার্চকে বিশ্ব নারী দিবস ঘোষণা করা হয়।
১৯৮৮ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে নারীপক্ষ প্রকাশ করে ৮ই মার্চের ইতিহাস সম্বলিত পোষ্টার ”আমি নারী সারা পৃথিবী আমার যুদ্ধ ক্ষেত্র”। ১৯৮৯ সালে বিভিন্ন দেশের সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী নারীদের তুলে ধরা হয় ”রক্তে মোর জাগে রুদ্রবীনা” শীর্ষক এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। এতে আরো ছিল সাধারন নারীর জীবনে সামাজিক বিধিবিধান অর্পনে যে সংঘাত তৈরী হয় তার চিত্রায়ন। ১৯৯০ সালে রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের নৃত্যনাট্য ”চিত্রাঙ্গদা” অবল্মবনে মঞ্চস্থ করা হয় ”নহি দেবী নহি সামান্যা নারী”।

১৯৯১ সালে নারীপক্ষ’র সহযোগীতায় ৪৬টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস কমিটি। সংসদ ভবনের উদ্দেশ্যে নারীদের বিশাল মিছিল ছিল ”সংসদের কাছে আমার দাবি আছে” শ্লোগানে মুখরিত। এরপর থেকে প্রতিবছর এই কমিটির মাধ্যমে একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে দিবসটি উদ্যাপন করা হচ্ছে দেশব্যাপী। নারীর নিরাপত্তা ও মানবাধিকার, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, বিচার ব্যবস্থার সংস্কার, নারীর শরীরের উপর অধিকার স্থাপন, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারী পুরুষের সমতা, সন্তানের অভিভাবকত্ব বাবা-মা উভয়ের, গণতন্ত্রের পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়ন ইত্যাদি প্রতিপাদ্য বিষয় উল্লেখযোগ্য।

১৯৯১ সালের ৭ই মার্চ বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো নারীদের মশাল মিছিলের আয়োজন করে নারীপক্ষ। ”রাতের বেড়া ভাঙ্গব স্বাধীনভাবে চলব” উচ্চকণ্ঠে ধ্বনিত এই শ্লোগানটি নিয়ে মশাল মিছিল ঢাকা শহরের পথ প্রদক্ষিণ করে।

পৃথিবীর কোন লগ্ন থেকে মানব সভ্যতার কাছে নারী তার মানব পরিচয়ের পরিবর্তে কন্যা- জায়া- জননীতে রূপান্তরিত হয়েছে জানা নেই। হাজার বছরের নারী তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে করতে নিজ মানব স্বত্ত্বাকে অঞ্জলী দিয়েছে মানব সভ্যতার বেদী মূলে। তার পরেও নারী মানুষের অধিকার আদায়ের আকাঙ্খায় যুগে যুগে প্রতিবাদ করেছে।

নারীর জীবনের বাঁকে বাঁকেই রয়েছে প্রতিকূলতা, নারীর নিজ জীবনের বৈষম্য উদঘাটনের সংগ্রাম। এই জীবন সংগ্রামের মধ্যে থেকেও অনেক নারী যুক্ত হয়েছে বৃহত্তর আন্দোলনে সমাজ পরিবর্তনের যুদ্ধে। নিজ শক্তি, বুদ্ধি ও মেধা দিয়ে ছিন্ন করেছে সকল শৃঙ্খল। এই সংগ্রামে নারী তার চাওয়া পাওয়া প্রেম ভালবাসাকে ক্ষুদ্র মনে করেছে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণার শতবর্ষ উদযাপনে আমাদের নিবেদন ”বাজাও আপন সুর”। এই আয়োজন আমাদের দেশের সঙ্গীত জগতে নারীর পদচারনা, পথচলা ও সুরের অন্তরালে যে সংগ্রাম ও সাধনা রয়েছে তা তুলে ধরার প্রয়াস।

সংগীত জগতে নারীর অবাধ বিচরণে রয়েছে অনেক প্রতিকুলতা। নারীর এই প্রতিকুল পরিবেশ তার পরিবার থেকেই দেখা য়ায়। সংগীত শিক্ষাকে নারীর একটি মেয়েলী গুণ হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্ত বিয়ের পর এই গুনটি আবার তার স্বাভাবিক জীবনে প্রতিবন্ধকতাও সৃষ্টি করে। তখন তার পরিবারই হয় তার অন্তরায়। পরিবারেই নারী বিভিন্ন প্রকার অসমতা ও সহিসংতার শিকার হয়। সেখানে নারীর সংগীত প্রতিভা তার নিজের শৈল্পিক বিকাশ পারিবারিক ও সামাজিক টানা পোড়েনে ব্যহত হয়।

সংগীতের সৃষ্টিশীল জগতে নারী কতটা অগ্রগামী? এই শিল্পে নারী তার আসল রূপ সুপ্রতিষ্ঠিত কি সহজেই করতে পেরেছে? ঐ পথের প্রতিকুলতা সত্বেও নারীরা সংগীতের দিকে ধাবিত হয়েছেন। কিন্তু তারা কি খুব সহজেই এই ভূবনে তাদের আসন সন্তোষজনক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন?

নারীর অপরিসীম প্রতিভা সামাজিক ও অর্থনৈতিক বেড়াজালে তখনও আবদ্ধ ছিল, এখনো তার উত্তরন তেমন ঘটেনি। এই বেড়াজাল থেকে বের হয়ে প্রতিভার প্রকাশ ঘটানো দু:সাহস মাত্র। ধর্মীয় অনুশাসন ও সামাজিক রক্ষনশীলতায় নারীর পথ রুদ্ধ হয়েছে বারবার। নারীর এই সংগ্রামে বিভিন্ন সফলতার পরেও এই অঙ্গনে সংগ্রামের ক্রমধাবমান ধারাতেই নারী সংগীত জগতে পদে পদে মাথা পেতে নিয়েছে তিরস্কার। ”বাজাও আপন সুর” নিবেদনে আমাদের দেশের সংগীত জগতে যে সব নারী বিচরণ করেছেন, আমাদের প্রাণে দোলা দিয়েছেন, বলেছেন আমাদের নাবলা কথা, তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। তাঁদের শিল্প সাধনা বাঁচিয়ে রেখেছে আমাদের অমত্মর। নারীর নিজের কথা, নিজের সুর, নিজের স্বপ্নকে স্থান দিয়েছে সাহিত্য। প্রতিধ্বনিত হয়েছে কথা ও সুর এবং নৃত্যের ছন্দে।

আমরা এই সকল সাহসী নারী শিল্পীদের জানাই আমাদের অভিবাদন, তাদের অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ আমাদের পথ চলার পাথেয় হোক।

Pin It on Pinterest

Share This