শরীর আমার সিদ্ধান্ত আমার
বিংশ শতাব্দীর শেষ প্রান্তে পৌঁছে আমরা নারী অধিকার আদায়ের ব্যাপারে আরো সচেতন ও সোচ্চার। নারীর কর্ম সংস্থান, সব মজুরী আইনগত সম-অধিকার এখন আমাদের মূখ্য আলোচনার বিষয়। কিন্তু তারপরেও যে মৌলিক বিষয়টি এখনও আলোচনার অন্তরালে রয়ে গেছে, তা হলো নারীর শরীরের উপর তার নিজের অধিকারের বিষয়টি।
নারীর হাত-পা, চোখ, কান কার এটা কোন বিতর্কিত বিষয় নয় কিন্তু নারীর শরীর তখনই বিতর্কিত হয়ে ওঠে যখন তার জন্মদান ক্ষমতার প্রসঙ্গটি আসে। তার প্রজনন ক্ষমতাকে মূখ্য করে দেখা হলেও, প্রজনন ক্ষমতার উপর তার অধিকারকে অস্বীকার করা হয়।
যখন থেকে একটি মেয়ে সাবালিকা হয়ে ওঠে তখন থেকেই তার স্বাধীন চলাফেরার ওপর হস্তক্ষেপ করা হয়। সাধারনত বলা হয়ে থাকে যে উঠতি বয়সের মেয়েদের অন্যের দৃষ্টির আড়ালে রেখে তার নিরাপত্তা বজায় রাখতে হবে। এর পরেও যদি কোন ‘দুর্ঘটনা ঘটে যায় সে ক্ষেত্রে ঐ বিশেষ মেয়েটিকে বিবেচনায় না এনে প্রাধান্য দেয়া হয় তার পরিবারের তথাকথিত মান-সম্মানকেই।
একটি বিবাহিত মেয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে সে কয়টি সন্তানের জন্ম দেবে। জন্ম নিয়ন্ত্রন সে করবে না তার স্বামী করবে। আদৌ কোন সন্তানের জন্ম দিবে কিনা-এ সমস্ত সিদ্ধান্তই নেয় পরিবারের অন্যরা। সামাজিক সেবা মূলক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও (কতিপয় ব্যতিক্রম ছাড়া) দেখা যায় যে তারা জন্মদান, জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি গ্রহণ ও গর্ভপাতের ক্ষেত্রে স্বামী এবং পরিবারের সিদ্ধান্তকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
অথচ প্রজনন সম্পর্কিত ব্যাপারে নারীর শরীরই রয়েছে মূখ্য ভূমিকা। কাজেই আমাদের বিশ্বাস নারীর প্রজনন তত্ত¡ তার শরীরের ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যপারে তার নিজের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
আপনারা হয়ত অবগত আছেন যে, এ বছর সেপ্টেম্বরে কায়রোতে আন্তর্জাতিক জনসংখ্যা ও উন্নয়ন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবারের সম্মেলনের একটি আলোচ্য বিষয় হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য। এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার ও সুপারিশমালা গ্রহণের সম্ভবনা রয়েছে যা পরবর্তী দর্শকের জন্য মহিলা সমাজে উলেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
এ সকল কারণে আমরা এবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের জন্য আমাদের মূল ভাব বেছে নিয়েছি “শরীর আমার সিদ্ধান্ত আমার” এই মূল ভাবের উপর ভিত্তি করেই ৪ঠা মার্চ থেকে ৮ই মার্চ পর্যন্ত পাঁচদিন ব্যাপী সারা দেশে পালিত হবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন কমিটি ১৯৯৩