Select Page
১৯৯৬-০৩-০৮
আন্তর্জাতিক নারী দিবস- ১৯৯৬

৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই দিনটি প্রথম উদযাপিত হয় ১৯১০ সালে। দিনটির তাৎপর্য বুঝতে হলে আমাদের যেতে হবে ১৮৫৭ সালে। নিউ ইয়র্কের সেলাই কারখানাগুলোতে। সেখানে নারী শ্রমিকরা বিপজ্জনক ও অমানবিক কর্মপরিবেশে, স্বল্প জমুরী এবং দৈনিক ১২ ঘন্টা শ্রমের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করলে তা পুলিশী হামলার সম্মুখীন হয়। তবে তিন বছর পরে তারা নিজস্ব ইউনিয়ন গঠনে স্বার্থক হয়। আরো পঞ্চাশ বছর পর মিছিলরত নারী শ্রমিকদের দাবীনামায় ভোটাধিকারের দাবী অন্তর্ভুক্ত হয়।

ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক নারী আন্দোলন বিস্তৃতি লাভ করে, এবং ইউরোপে যুদ্ধ বিরতি এবং রাশিয়ার সাম্যবাদী আন্দোলনেও নারীরা সক্রিয় ভূমিকা রাখে। এই সকল ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯১০ সালে ডেনমার্ক এর কোপেনহেগেন শহরে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলনে, জার্মান সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী ক্লারা জেটকিন এর প্রস্তাব ৮ই মার্চকে বিশ্ব নারী দবিস ঘোষণা করা হয়।

আমরা নারী আন্দোলনের এই প্রতিবাদী ধারাকে তুলে ধরেই আজকে নারী দিবস উদযাপন করছি। এই দিনটি পালনের লক্ষ্যে ১৯৯১ সনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন কমিটি গঠিত হয়। বিগত ৬ বছর ধরে আমরা নারী আন্দোলনের বিভিন্ন দাবী এই দিবসে তুলে ধরেছি। এই ধারাবাহিকতার মধ্যে বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের একটি রূপরেখা পরিস্ফুটিত হয়। আমাদের এবারের দাবী নারী পুরুষের সমতা। এই দাবী ১৮৫৭ সনের দাবী থেকে খুব ভিন্ন নয়। আজ বাংলাদেশে গার্মেন্টস শ্রমিকতো বটেই, নির্মান ও অন্যান্য কায়িক শ্রমের ক্ষেত্রে বা গৃহস্থালির কাজে, নারী উপযুক্ত মজুরী থেকে বঞ্চিত। তার কর্মক্ষেত্রকেও স্বল্প মজুরীর বলে গণ্য করা হয়, যেমন পোষাক কারখানায় সেলাইয়ে মেয়েরা নিয়োজিত হলেও, কাটিং এবং ফিনিশিং-এ সচরাচর তাদের দেখা যায় না। আমাদের দাবী সর্বক্ষেত্রে শ্রমের অধিকার এবং শ্রমের বিনিময় ন্যায্য মজুরীর।

শুধু শিল্প কারখানাতেই নয়, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রে আমরা সমান অধিকার চাই। সাধারনত: নারী-পুরুষের বৈষম্য দূরীকরনের দাবীকে পুরুষের সমান হওযার প্রয়াস হিসাবে দেখা হয়। যে সমাজে নারীর প্রতি কোন বৈষম্য থাকেনা, সেখানে সে পুরুষের সমান কেন, তার অতিরিক্ত ন্যায্য দাবী আদায়েও সক্ষম হতে পারে। সমতার দাবীতে নারীর প্রতি সুবিচার এবং তার ন্যায্য পাওনা নিশ্চিতকরণের দাবী অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। দেশে ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইন দ্বারা নারীকে যে নানা অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে তার আমরা তীব্র প্রতিবাদ করছি। যে সকল সামাজিক প্রথা নারীর মুক্ত চলাফেরাকে সীমিত করে সেই প্রথাগুলোর অবসান চাই।

নারী নির্যাতন যে মানবাধিকার লঙ্ঘন সে কথা আজ সর্বজনস্বীকৃত। সম্প্রতি আমাদের দেশে নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের কয়েকটি ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে গেছে, যেমন দিনাজপুরে ইয়াসমীন হত্যা। এই ধরনের ঘটনা নারী সমাজের উপর প্রচন্ড আঘাত। দেশের সার্বিক অবস্থা আজ ভয়াবহ, আমরা এক সঙ্কটময় সময়ের মধ্যে রয়েছে। এখন নাগরিক অধিকার রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সকলের এবং সংঘবদ্ধভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে।

৮ই মার্চের এই উৎসবে যোগ দিয়ে, এই দিবসটির প্রতিবাদী আদর্শের নিরিখে, বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে যেন আমরা নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রসর হতে পারি।

Pin It on Pinterest

Share This