Select Page
১৯৯৫-০৩-০৮
আন্তর্জাতিক নারী দিবস-১৯৯৫

লক্ষ নারীর লক্ষ প্রাণ
লক্ষ ভাষায় একই গান

৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীর অধিকার আদায়ের লড়াই ও স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামের প্রতীক এই দিবস। এই সংগ্রাম বিশ্বের সকল নারীর। ভাষা, জাতি, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক সকল ভিন্নতা সত্ত্বেও বিশ্ব জুড়ে নারী তার নিজের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে লিপ্ত। এই সংগ্রাম ঘরে বাইরে- পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে, পথে ঘাটে, শিক্ষাঙ্গনে, সর্বত্র। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীকে মানুষ হিসেবে তার প্রাপ্য মান ও স্থান অর্জনের এবং তা সংরক্ষণের জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করে যেতে হয়। এমনকি সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কগুলো, যেখানে ভালবাসা শর্তহীন, সেখানেও নারীর নিজস্ব স্বত্ত¡া প্রকাশের স্থান সীমিত। মাতৃত্বের আবর্তে বিলুপ্ত প্রায় নারীর ব্যক্তিত্ব। মাতৃত্বের সকল দায়িত্ব বহন সত্তে¡ও সন্তানের অভিভাবক হবার অধিকারটি পর্যন্ত তার নেই। গৃহিনীর সকল কর্তব্য পালন করেও সে গৃহহীন। তার জীবন কাটে পিতার বা স্বামীর, ছেলের বা শ্বশুরের গৃহে। পারিবারিক কাঠামোর বাইরে যে নারীর বাস, সমাজ চোখে সে “পতিত” এবং বাস্তবে অধিকারহীন।

নারী মুক্তির সংগ্রাম বহুমুখী। এ লড়াই রাজনৈতিক, এ লড়াই আইনগত অধিকার অর্জনের, সাংস্কৃতিক মর্যাদা আদায়ের, অর্থনেতিক সম্পদ দখলের। নারীকে কোণঠাসা করে রাখার যে রাজনীতি ও ইতিহাস তার বিরুদ্ধে নারীর সংগ্রাম।

১৮৫৭ সনের ৮ই মার্চে যুক্ত রাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে সেলাই কারখানার নারী শ্রমিকরা বিপদজনক ও অমানবিক কর্মপরিবেশ স্বল্প মজুরী ও দৈনিক ১২ ঘন্টা শ্রমের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করেন। তাদের এই শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর পুলিশ হামলা চালায়। তিন বছর পর ১৯৬০ সনের ৮ই মার্চে নিউ-ইয়র্ক শহরের সেলাই কারখানার নারী শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের দাবী আদায়ের লক্ষ্যে নিজস্ব ইউনিয়ন গঠন করতে সমর্থ হন। নারী আন্দোলনের উত্তরোত্তর বিস্তৃতির ফলশ্র“তিতে ১৮৯৯ সনে নেদারল্যান্ড-এর দি হেগ শহরে প্রথম যুদ্ধ বিরোধী নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯০৫ থেকে ১৯০৭ সালে রাশিয়ার রাজতন্ত্র বিরোধী সংগ্রামে অসংখ্য নারী সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। পরবর্তীতে ১৯০৮ সালে ৮ ই মার্চে নিউ-ইয়র্কে একটি প্রতিবাদ মিছিলে বস্ত্র শিল্প কারখানার নারী শ্রমিকরা আবারও যোগ দেন। তাদের দাবী ছিল কাজের সময় কমানো, কাজের পরিবেশের উন্নতি, শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন এবং ভোটাধিকার।

এই সকল ঘটনা ধারার সম্মিলনের মধ্যে দিয়েই নারীদের বিভিন্নমূখী প্রতিবাদী ভূমিকার প্রতি আন্তর্জাতিক সংহতি প্রকাশ, সমর্থন দান ও সহযোগীতার ক্ষেত্র তৈরীর প্রতীক হিসেবে একটি দিনকে চিহ্নিত করার উপলব্ধি জাগে। অত:পর ১৯১০ সনে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলনে জার্মান সমাজতন্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী ক্লারা জেটকীনের প্রস্তাব অনুসারে ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ তারিখ হিসেবে ৮ মার্চ কে বিশ্ব নারী দিবস ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশে এই দিনটি ব্যাপক ভাবে পালনের লক্ষ্যে বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে ১৯৯১ সনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্যাপন কমিটি গঠিত হয়। প্রতি বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্যাপন করা হয় সমাজে অবস্থা ও অবস্থানের একটি বিশেষ দিক এবং সেই দিকগুলির সাথে সংশ্লিষ্ট দাবী তুলে ধরে। সর্বস্তরে, সর্বক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আইন সংস্কারের দাবীই ছিল ১৯৯১ সনের নারী দিবস কর্মসূচীর মূল বিষয়বস্তু। নারীর প্রতি সব ধরনের নির্যাতন, অত্যাচার ও অপরাধকে মানবাধিকার লংঘন হিসেবে স্বীকৃত করার লক্ষ্যে উদ্যাপিত হয় ১৯৯২ সনের আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ১৯৯৩ সনে আমাদের দাবী ছিল বিচার ব্যবস্থার আমূল সংস্কার। ১৯৯৪ সনে নারী দিবস উদযাপনের মূল বিষয় বস্তু ছিল নারীর শরীরের উপর নারীর অধিকার স্থাপন।

বিশ্ব নারী দিবস উদ্যাপন নারী মুক্তি আন্দোলনকে আরো সবল ও সুসংহত করার একটি উপলক্ষ্য। এই উদ্যাপনের মাধ্যমে আমরা আমাদের সংগ্রামের লক্ষ্য ও যুক্তি স্পষ্ট করে তুলতে চাই এবং আমাদের শক্তি সঞ্চারে ব্যাপক জনসাধারণের উপলব্ধি ও সমর্থন পেতে চাই। তাই পূর্বের ন্যায় এ বছরও আপনাদের সহযাত্রী হিসেব আশা করছি। আমাদের এই উৎসবে অংশগ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ রইল।

Pin It on Pinterest

Share This