Select Page
২০২৪-১০-২২
সহিংসতামুক্ত নারীর জীবন

নারীর প্রতি বৈষম্যের ব্যাপকতা ও গভীরতার কারণে নারী নিজ ঘরে, বাইরে বা কর্মক্ষেত্রসহ সর্বত্র অনিরাপদ। নারী জীবনব্যাপী শারীরিক, মানসিক, যৌন, ইত্যাদি বহুমাত্রিক সহিংসতার শিকার হয়। যুদ্ধ এবং সংঘাতকালে নারীর উপর অধিকতর সহিংসতা হয়। ফলশ্রুতিতে নারীর স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয় এবং সে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ অন্যান্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৫ সালের জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে বিবাহিত নারীদের ৬৪% শারীরিক, ৩৬% যৌন, ৮১% মানসিক এবং ৫৩% অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। দৈনিক প্রথম আলোর (২০২২) সুত্রমতে পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৮ সাল থেকে প্রতিবছরই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা বেড়েছে। এর মধ্যে করোনা সংক্রমণের দুই বছরে ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি ৩৯ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ৩৬ শতাংশ বেশি মামলা হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর সুত্রমতে জানুয়ারি – অক্টোবর ২০২২ পর্যন্ত নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে ৯,৭৬৪টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে ধর্ষণের মামলা প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ ৪,৩৬০টি। সাইবারক্রাইম এওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের জরিপমতে ১৮ থেকে ৪০ বছরের ৫০% নারী সাইবার হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হয়।
নারীপক্ষ জন্মলগ্ন থেকেই এ বিষয়ে প্রতিবাদ, গবেষণা, বিষয়ভিত্তিক প্রচারপত্র, পোষ্টার ও বিভিন্ন কর্মসুচি গ্রহণ করেছে এবং যুক্ত হয়েছে দেশ-বিদেশের বৃহত্তর আন্দোলনে। নারীপক্ষ ১৯৮৫ সালে জনসম্মুখে অবস্থান তুলে ধরে যে, পারিবারিক সহিংসতা নারীর ব্যক্তিগত বিষয় নয় বরং এটি নারীর রাজনৈতিক অধিকারের বিষয়।
১৯৯৫ সালে বেইজিং এ অনুষ্ঠিত ৪র্থ বিশ্বনারী সম্মেলনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ৩০০ নারী সংগঠনের সাথে ধারাবাহিক কর্মশালায় নারীর উপর সহিংসতা ও নারীর মানবাধিকার ছিল উল্লেখ্যযোগ্য বিষয়। এর প্রেক্ষিতেই নারী সংগঠনদের নিয়ে গড়ে উঠে ‘দুর্বার’ নামে একটি নেটওয়ার্ক।
‘দুর্বার’ দেশব্যাপী সহিংসতা মোকাবেলা এবং প্রতিরোধে সরকারি প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতা, ভুক্তভোগী নারী ও তার পরিবারকে সহায়তা করাসহ স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত আন্দোলন গড়ে তোলে। এছাড়াও নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ( সিডও) এর ছায়া ও বিকল্প প্রতিবেদন তৈরিতে নারীপক্ষ মুখ্য ভুমিকা রেখেছে। সহিংসতা প্রতিরোধে নানা কর্মসূচির মধ্যে নারীর মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে কাউন্সেলিং সেবা শুরু করেছিল।

নারীর উপর সহিংসতা সম্পর্কিত আইন ও নীতিমালা- যেমন নারী উন্নয়ন নীতিমালা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩), এসিড অপরাধ দমন আইন ২০০২ ও এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০২, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন ২০১০ ইত্যাদি প্রণয়নে নারীপক্ষ সক্রিয় ভুমিকা রাখে।
যেহেতু নারীর উপর সহিংসতা নারীর জীবন-জীবিকা, নারীর বেঁচে থাকার উপর হুমকি এবং চরম মানবাধিকার লংঘন সেহেতু নারীপক্ষ আগামী পাঁচ (৫) বৎসরের জন্য নিম্নোক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

Pin It on Pinterest

Share This