নারীকে মানুষ হিসেবে দেখুন, চিনুন, সম্মান করুন!
৯ বৈশাখ ১৪২২/২২ এপ্রিল ২০১৫ বাংলা নববর্ষ অনুষ্ঠানে নারীর উপর যৌন হামলা এবং কর্তব্যরত পুলিশের নিস্ক্রিয়তার প্রতিবাদে নারীপক্ষ দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচীর উদ্যোগ নেয়। সারাদেশে ৩১টি জেলা শহর, ৯টি উপজেলা শহর এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার ৪টি পৃথক স্থানে সকাল ১০টা থেকে ১১.১৫টা পর্যন্ত অবস্থান বিক্ষোভ হয়েছে। যেখানে প্রচার পত্রটি গণবিলি করা হয়। ঢাকার বাইরে দুর্বার নেটওয়ার্ক ও নারীপক্ষ’র অন্যান্য সহযোগী সংগঠন এবং ঢাকায় সাতমসজিদ রোড ধানমন্ডিতে নারীপক্ষ, ধানমন্ডি ২৭ নং চৌরাস্তায় নাগরিক উদ্যোগ, পরিবাগে সংক্ষুব্ধ নারী সমাজ এবং সুপ্রীম কোর্টের সামনে ব্লাস্ট একই বিক্ষোভ আয়োজন করে। দেশব্যাপী এই বিক্ষোভে বিভিন্ন নারী সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী ও স্থানীয় জনগণসহ প্রায় ১০ হাজার জন অংশগ্রহণ করেন। প্রতিটি অংশগ্রহণকারী সংগঠন বিক্ষোভ শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারকলিপি প্রেরণ করেছে।
প্রচারপত্র
নারীকে মানুষ হিসেবে দেখুন, চিনুন, সম্মান করুন!
নারী প্রতিনিয়ত যৌন আক্রমণের শিকার হচ্ছে ঘরে, বাইরে, রাস্তাঘাটে, যানবাহনে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, যুদ্ধক্ষেত্রে; ঘটনা-দুর্ঘটনায়, দুর্যোগ-দুর্বিপাকে, এমন কি আনন্দানুষ্ঠানেও। সর্বত্রই নারী আক্রমণের ঝুঁকিতে।
১ বৈশাখ ১৪২২/১৪ এপ্রিল ২০১৫, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষ কেন্দ্র এলাকায় কয়েকজন নারীকে দলবদ্ধভাবে কিছু পুরুষ যৌন আক্রমণ করে। এসময় দায়িত্বরত পুলিশ ঘটনাস্থলের অতি কাছে থাকা সত্ত্বেও নিষ্ক্রিয় থাকে। একইভাবে ঐদিন বাগেরহাটে একটি বৈশাখী মেলায় একজন তরুণীর ওপর যৌন আক্রমণ হয়। অভিযোগ উঠেছে, সেখানেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় থেকেছে। ঐদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছাত্রীর ওপর ঐ বিশ্ববিদ্যালয়েরই কয়েকজন ছাত্র যৌন আক্রমণ করেছে। ঐ দিনই বৈশাখী অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে রাজধানীর চাঁনখারপুল এলাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘উত্তরণ’ ও ‘অনির্বাণ’ বাস- এ একই ঘটনা ঘটেছে।
অকাট্য তথ্য-প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও পুলিশপ্রশাসন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার নির্লজ্জ চেষ্টা করছে; কেউ কেউ পুরোপুরি অস্বীকার করছে। এই ধরনের অপতৎপরতা আক্রমণকারীদের পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে ও এই ধরনের ঘটনা বার বার ঘটানোর দুঃসাহস যোগায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চরম ব্যর্থতা, পুলিশের সীমাহীন দায়িত্বহীনতা এবং ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার নির্লজ্জ প্রচেষ্টায় আমরা ক্ষুব্ধ। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে নারীর প্রতি সংঘটিত প্রতিটি যৌন আক্রমণের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অনতিবিলম্বে দোষীদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনার দাবি করছি। দায়িত্বে অবহেলার জন্য দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে সে বিষয়ক প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করার জন্য দৃঢ় দাবি জানাচ্ছি।
নারীর প্রতি যৌন আক্রমণ কিছু সংখ্যক অপরাধীর বিষয় নয়; এই সহিংসতার মূলে রয়েছে নারীকে মানুষ হিসাবে গণ্য না করার মানসিকতা, দৃষ্টিভঙ্গী ও সংস্কৃতি। প্রাচীনকাল থেকে সমাজের চিন্তা-চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গী নারীকে সর্বদা অধসত্মন ও অধীনস্ত ভাবে এবং তার সাথে যেকোন ধরনের আচরণ করে বিনা বিচারে পার পাওয়া যায় বলে ঘটনা ঘটেই চলেছে। এই প্রাচীন এবং প্রচলিত সমাজ চিন্তার আজও কোন পরিবর্তন হয়নি। আজ পর্যন্ত কোন ক্ষমতাসীন ব্যক্তিবর্গ এর বিহিত করেনি বলে পুলিশ তার কর্তব্য এড়িয়ে যাচ্ছে। সে কারণে নারীর প্রতি অহরহ অসম্মানজনক আচরণ, যৌন আক্রমণ, নির্যাতন ও নিপীড়ন হয়। অপরদিকে নির্যাতনের শিকার নারীকেই দোষারোপ করে, তার পোশাক-পরিচ্ছদ ও চলাফেরা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এর অবসান হওয়া জরম্নরী; তাই যে চিন্তা-চেতনা, দৃষ্টিভঙ্গী ও সংস্কৃতি নারীর প্রতি এ ধরনের আচরণ করার প্রবণতা তৈরি করে এবং তা যথাযথ বলে যুক্তি উপস্থাপন করে তা পরিবর্তনের জন্য আমাদের প্রত্যেককে প্রতিনিয়ত এই মানসিকতা, এই আচরণ, এই সংস্কৃতিকে প্রতিহত করতে হবে। এ ধরনের আচরণ যেখান থেকেই আসুক, এর বিরুদ্ধে আমাদের সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তুলে কঠিন ভাষায় জবাব দিতে হবে।
নারীকে মানুষ ভাবুন, মানুষ হিসেবে চিনুন এবং তার প্রতি সম্মানজনক আচরণ করুন। নারীর প্রতি যৌন আক্রমণের বিরুদ্ধে জোড়ালো আওয়াজ তুলুন। যৌন আক্রমণের শিকার নারীকে দোষারোপ না করে তার প্রতি সহমর্মী হোন, পাশে দাঁড়ান।
কর্মসূচি
দিনক্ষণ: বুধবার, ৯ বৈশাখ ১৪২২/২২ এপ্রিল ২০১৫, সকাল ১০:০০ থেকে ১১:০০ টা
স্থান
: সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, র্যাং গস নীলু স্কয়ার এর সামনে। (আনাম র্যাংগস এর বিপরীতে)
আপনিও এই কর্মসূচিতে যোগদান করে নারীর প্রতি যৌন আক্রমণের বিরুদ্ধে আপনার অঙ্গীকার ব্যক্ত করুন।
স্মারক লিপি