আন্তর্জাতিক নারীদিবস-২০১৮
আমাদের ডর কাহারে!
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারীদিবস। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্কের সেলাই কারখানায় বিপদজনক ও অমানবিক কর্মপরিবেশ, স্বল্প মজুরী এবং দৈনিক ১২ ঘন্টা শ্রমের বিরুদ্ধে নারী শ্রমিকরা প্রতিবাদ করে। এরপর বিভিন্ন সময়ে ৮ মার্চে উল্লেখযোগ্য আরো ঘটনার ধারাবাহিকতায় ১৯১০ সালে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলনে জার্মান সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী ক্লারা জেটকিন এর প্রস্তাবে ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারীদিবস’ ঘোষণা করা হয়।
প্রতিবাদী আন্দোলনের এই ধারার সাথে একাত্ম হয়ে প্রতিবছর বাংলাদেশে বিভিন্ন নারীসংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন জোটগত বা এককভাবে দিবসটি পালন করে আসছে। এ বছর আমরা বাংলাদেশের তৈরিপোশাক কারখানার নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায় ও নির্যাতন হ্রাসের লক্ষ্যে গঠিত পাঁচটি সংগঠনের মিলিত উদ্যোগ ‘সজাগ’ এর মাধ্যমে দিবসটি পালন করছি। আমাদের এবারের প্রতিপাদ্য “আমাদের ডর কাহারে!”
সারা বিশ্বেই ঘরে, বাইরে, রাস্তাঘাটে, যানবাহনে, কর্মস্থলে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, কারখানায়, দুর্যোগে-দুর্বিপাকে, এমন কি আনন্দানুষ্ঠানেও সকল বয়সের, সকল শ্রেণি-পেশার নারীই সর্বদা বৈষম্য, নির্যাতন, নিপীড়ন ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে বা নির্যাতনের ঝুঁকির মধ্যে থাকছে। তারপরেও তারা থেমে নেই। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। সকল ভয়-ভীতি, বাধা-বিপত্তি ঠেলে নারী অবিরাম সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে দৃঢ় পায়ে।
আমাদের কর্মজীবী নারীদের একটি বড় অংশ তৈরিপোশাক কারখানার শ্রমিক। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী প্রধান এই খাতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক আছে। এদের মধ্যে শতকরা ৬৫ ভাগ নারী (তথ্যসূত্র: ‘বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানীকারক সমিতি- বিজিএমইএ’ এবং ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ’।)
ঘরে, বাইরে, রাস্তায়, কলে-কারখানায় উত্যক্তকরণ, যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ নারীর জীবনের নৈমিত্তিক ঘটনা। ‘কর্মজীবী নারী’ ও ‘কেয়ার বাংলাদেশ’ এর সদ্য সমাপ্ত এক গবেষণার আওতায় মোট ১৫০ জন তৈরিপোশাক কারখানার নারী শ্রমিকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এদের মধ্যে ৭৪% বলেছেন, বাধ্যতামূলকভাবে তাদের অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হয়। রাতে বাসায় ফেরার জন্য কোনরূপ যাবাহন বা নিরাপত্তার ব্যবস্থা কারখানা কর্তৃপক্ষ করেন না। ৮৪.৭% বলেছেন, কারখানার ভিতরে তাদের মৌখিক নির্যাতনের (কটুকথা, গালিগালাজ) শিকার হতে হয়। ৭১.৩% বলেছেন, তাদের উপর মানসিক নির্যাতন করা হয়। ২০% শারীরিক নির্যাতনের (মারধর) শিকার হওয়ার কথা বলেছেন। যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা বলেছেন ১২.৭%। নারী শ্রমিকের নিরাপত্তার জন্য তো বটেই, দেশের অর্থনীতির স্বার্থেও এর প্রতিকারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী।
আমরা মনে করি, নারীনির্যাতন তথা শ্রমিক নারীর উপর নির্যাতন প্রতিরোধের প্রধান অন্তরায় নারী শ্রমিকের নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেয়া; নারীকে সম-মর্যাদা না দেওয়া; নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি । এই আচরণ ও বিশ্বাস প্রকারন্তরে অপরাধীকেই প্রশ্রয় দেয়। তাই ন্যায়বিচার দাবীর সাথে সাথে মানসিক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে এই অবস্থার বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে এবং নির্যাতনের শিকার নারীর পাশে পুরুষ ও নারী উভয়কে দাঁড়াতে হবে।
আসুন ! সকল কুসংষ্কার, অপচর্চা, অপব্যাখ্যা, পশ্চাৎপদতা ও ভয়-ভীতি থেকে মুক্ত হয়ে, সর্বত্র নারীর অবাধ ও নিরাপদ বিচরণ ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা প্রত্যেকে তৎপর হই। নারীর উপর যেকোন ধরনের নিপীড়ন-নির্যাতন ও সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। এই প্রতিবাদ-প্রতিরোধে আমরা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকে প্রত্যেকের পাশে দাঁড়াই। যৌন নির্যাতনের শিকার নারীকে দোষারোপ না করে তার প্রতি সহমর্মী হই, তাঁর পাশে দাঁড়াই। তাকে ন্যায়বিচার পেতে সহযোগিতা করি। নিজে উদ্যোগ নিই, অন্যের উদ্যোগে সামিল হই।
কর্মসূচি
শুক্রবার, ২৫ ফাল্গুন ১৪২৪/৯ মার্চ ২০১৮,
সকাল ১০টা-বিকেল ৪টা, বিনামূল্যে আইন সহায়তা এবং বিকেল ৪:৩০-৬:৩০মি. নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
স্থান: আশুলিয়া স্কুল এ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গন, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা।