Select Page
২০০৩-১২-১২
আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার – ২০০৩

আমাদের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস সুদীর্ঘ, বহুবর্ণিল। শোষণ বঞ্চনা-নিপীড়নের অচলায়তনের বিরুদ্ধে বারেবারেই রুখে দাঁড়িয়েছে এই দেশের মানুষ, যার মধ্যে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সর্বোজ্জ্বল মাইলফলক। মুক্ত স্বদেশ, বৈষম্যহীন ন্যায় ভিত্তিক একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এদেশের আপামর জনসাধারণ এই মুক্তিযুদ্ধে নিজেদের যুক্ত করেছিল। একথা বলা অপরিহার্য যে, প্রচার মাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্যই বাংলাদেশের প্রতিটি ঘর হয়ে উঠেছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের দুর্গ। প্রচার মাধ্যমের সকল কর্মীরা সরাসরি অস্ত্রচালনায় অংশগ্রহণ না করলেও, সাধারণ মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করেছিল।

গত ১৫ বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধের এক একটি দিক তুলে ধরে নারীপক্ষ আয়োজন করে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে বিশেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি- আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার। এবারের অনুষ্ঠান মুক্তিযুদ্ধে প্রচার মাধ্যমের ভূমিকাকে ঘিরে। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিকামী মানুষ প্রচার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গান, কবিতা, নাটক, কথিকা, মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত সংবাদ, মতামত প্রচার করেছে। পেশাগত দায়ে নয়, বরং প্রাণের তাগিদেই তাঁরা কাজ করেছে। এসব অনুষ্ঠান মানুষকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছে। সে সময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, আকাশ বাণী, বি.বি.সি, প্রভৃতি প্রচার মাধ্যমের সাংবাদিকদের বিভিন্ন তথ্যবহুল ছবি, সংবাদপত্রের প্রচার, বিভিন্ন প্রচার অভিযান যে সক্রিয় অবদান রেখেছে তা আজও অবিস্মরণীয়। প্রচার মাধ্যমের প্রতিটি বিষয়ই ছিল তথ্যবহুল এবং উদ্দীপনাপূর্ণ।

‘চরমপত্র’, ‘জল্লাদের দরবার’, ‘জানেন ওদের মতলব কি?’ এমন অসংখ্য সময়োপযোগী বাসত্মবধর্মী নাটক ও কথিকা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার করা হত, যা আজও উজ্জ্বল একএকটি দলিল রূপে আমাদের কাছে সংরক্ষিত।

যে গান ছিল আমাদের প্রাণের গান, যে উদ্দীপনা আমাদের খালি হাতে দেশ স্বাধীন করার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে, সেই গানের প্রতিটি বাণী, সুর এখনও আকাশে বাতাসে অণুরনিত হয়। কিন্তু হারিয়ে গেছে সেই প্রেরণা, উদ্যম, সেই সাহস, শক্তি।

সম্বলহীন সাধারণ মানুষ সেদিন রুখে দাঁড়িয়েছিল যে আগ্রাসনের বিরম্নদ্ধে, সেই আগ্রাসন ছিল একটি ভূখন্ডের উপর আর একটি ভূখন্ডের। সেই আগ্রাসন ছিল মুক্তিকামী মানুষের চেতনার বিরম্নদ্ধে। সাধারণ মানুষের উপর ক্ষমতাশীলদের চাপিয়ে দেয়া মুল্যবোধের। সেই আগ্রাসন ছিল মানুষের চাওয়া-পাওয়াকে অস্বীকার করার। আজকে আমরা এর থেকে কি খুব দূরে দাঁড়িয়ে? আমাদের উপর সরাসরি ভৌগোলিক আগ্রাসন নেই সত্যি, কিন্তু মানুষের মূল্যবোধের চাওয়া-পাওয়াকে অস্বীকার করা, রাজনৈতিক দলের ক্ষমতার লড়াইয়ে জনগণকে পুঁজি করা, ভিন্ন মতাবলম্বি মানুষের উপর আক্রমন করা-এগুলো কি আগ্রাসন নয়?

আজকে আমাদের যুদ্ধ এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে। একাত্তরের সেই সংগ্রামি দিনগুলোর মত আজকেও প্রতিটি মানুষের মনে সাহস আর প্রত্যয় ফিরিয়ে দিতে কি কোন কবি লিখবেনা কবিতা? কোন শিল্পী কি গাইবেনা গান? কোন সাংবাদিক কি প্রচার করবেনা সেই সংবাদ?

রাজনৈতিক দলের বাইরে সাধারণ মানুষ যে চিন্তা চেতনার চর্চা করছে তার প্রতিফলন কোথায়? গ্রামে গঞ্জে নাম না জানা যে কৃষক নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছে তার কথা তো হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষে মানুষে সৌহার্দ নির্মাণে সাধারণ নর-নারীর যে প্রচেষ্টা, সেই সংবাদই বা কোথায়?

আশা করব আবার প্রচার মাধ্যম সাধারণ মানুষের মধ্যে আশা আকাঙ্খার বীজ বপন করতে পারবে। সেই বীজ ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার ধৃষ্টতা, ফায়দা লুটার আকাঙ্খা ও ক্ষমতাবানের আগ্রাসনকে গুড়িয়ে দেবে। সেই দিনের মত, যে দিন পাকিস্তানী সৈনিকদের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের বিজয় অর্জিত হয়েছিল।

আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশে দলে দলে হানাহানি, ধনী গরীবের মধ্যে আকাশ ছোঁয়া ব্যবধান, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন প্রতিনিয়ত ঘটনা। আজ মুক্তিযুদ্ধের বত্রিশ বছর পর স্বাধীনতা যুদ্ধে হারানোর স্মৃতি আর বিজয়ের আনন্দ নিয়ে স্মরণ করতে চাই সেই দিনের আত্মপ্রত্যয় এবং প্রেরণাকে।

২৮ অগ্রহায়ণ ১৪১০/১২ ডিসেম্বর ২০০৩
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

নারীপক্ষ
র‌্যাংগস নীলু স্কোয়ার (৫ম তলা), বাড়ী- ৭৫, সড়ক- ৫/এ, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯, বাংলাদেশ
জিপিও বক্স-৭২৩, ঢাকা-১০০০, ফোন : ৮৮০-২-৮১১৯৯১৭, ৮১৫৩৯৬৭, ফ্যাক্স : ৮৮০-২-৮১১৬১৪৮
ই-মেইল : naripokkho@gmail.com, ওয়েব : www.naripokkho.com.bd
আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার – ২০০৩

Pin It on Pinterest

Share This