Select Page
২০০৬-১২-০৮
আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার – ২০০৬

ঘোষণাপত্র

প্রতি বছরের মত এবারও বিজয় দিবসকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে নিবেদিত হচ্ছে নারীপক্ষ’র শ্রদ্ধাঞ্জলি ‘আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার’। আজ আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি নারীপক্ষ’র প্রয়াত সদস্য নাসরীন হককে, যার উদ্যোগ ও কর্মস্পৃহায় ১৯৮৮ সালে এই অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছিল।

গত বছর এই দিনে নেত্রকোণায় সন্ত্রাসী বোমা হামলায় প্রাণহানি হয়েছিল ৪ জন সংস্কৃতি কর্মীর। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে এক ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সেইদিন সেই ভীতিকর পরিবেশের মধ্যেও আমরা সাহস করে জড়ো হয়েছিলাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে। নাসরীন হক-এর নেতৃত্বেই মঞ্চ থেকে শ্লোগান দিয়েছিলাম ”ধর্ম নিয়ে রাজনীতি চলবে না, চলবে না”।

আমাদের জাতীয় জীবনে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ একটি গৌরবময় অধ্যায়। স্বাধীন সার্বভৌম দেশ গড়ার প্রেরণাকে সামনে রেখে ১৯৭২ সালে রচিত হয়েছিল বাংলাদেশের সংবিধান। যে সংবিধান আজ পর্যন্ত ১৪ বার সংশোধন করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলোই গণতন্ত্রের নামে বিভিন্ন সরকার নিজেদের ক্ষমতাকে স্থায়ী করার জন্যই করেছে।

আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা গণতন্ত্রের জন্য মোটেই সহায়ক নয়। কারন গণতন্ত্র হলো- প্রতিটি মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা। কিন্তু এদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী হলেও তাদের নিজেদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই কোথাও, না পরিবারে, না সমাজে, না রাষ্ট্রে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত ভোটাধিকার। সেই ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রেও নারীর স্বাধীনতা সীমিত।

রাষ্ট্রের ক্ষমতা বন্দি হয়ে আছে সংসদ ও সচিবালয় নামের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে। সাধারণ মানুষের হাতে বলতে আছে একটি করে ভোট, কিমত্ম সেই ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার কোন প্রতিফলন ঘটেনি। আইনের শাসন গনতন্ত্রের অপরিহার্য শর্ত হলেও তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সাধারণ মানুষের স্বার্থের অনুকুল আইন ও সুবিচার আদালতের দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ায় পিষ্ঠ। আজ বঞ্চনা ও অধিকারহীনতায় নিমজ্জিত দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠি। আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় নারী-পুরুষ, বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের নেই ন্যায্য-অধিকার।

ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে নির্বাচন প্রক্রিয়া একটি অপরিহার্য অংশ হলেও তা আজ প্রশ্নের সম্মূখীন। নির্বাচনের পূর্ব প্রস্ত্ততি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। এই প্রক্রিয়ায় মানুষের স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের নেই নিশ্চয়তা, ভোটার তালিকা নিয়ে চলছে বিতর্ক। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়া নিয়েও জনগণ ভুগছে নিরাপত্তাহীনতায়। ৩৫ বছরে প্রতিষ্ঠিত হয়নি একটি স্বাধীন শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন। আইন প্রবর্তন সত্ত্বেও নিযুক্ত হয়নি ন্যায়পাল। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের এমনই অপমান।

৬৯ থেকে ৭১, ৭৫, ৯০ থেকে ২০০৬ পর্যমত্ম চলছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য পাল্টাপাল্টি কমর্সূচী দিয়ে জনজীবনকে করেছে বিপর্যসত্ম। রক্ত ঝরছে গণমানুষের।

কথিত গণতান্ত্রিক পথ অবলম্বন করে রাজনৈতিক দলগুলো সরকার গঠন করে ক্ষমতায় গেলেও দলগুলোর মধ্যে নেই প্রকৃত গণতান্ত্রিক চর্চা। জনগণের বিশ্বাস ও আস্থাকে পদদলিত করে পরবর্তীতে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা গ্রহণ করে নানা কূটকৌশল।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চারটি মূলনীতির একটি গণতন্ত্র হলেও স্বাধীনতার পঁয়ত্রিশ বছর পরও এদেশের মানুষ গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বাদ এখনও পায়নি। আমরা চাই গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করুক রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সর্বত্র। এত কিছুর পরও সমাজের সকলের সমন্বয়ে গণতন্ত্রের এই ক্রামিত্মকাল অতিক্রম করে সামনে যাওয়ার স্বপ্ন আমাদের সবার। আমরা দৃঢ় কন্ঠে উচ্চারণ করি- আমার কথা আমি বলবো,আমার ভাষায় বলবো, আমার মতো করে বলবো।

এবারের অনুষ্ঠানে আমরা তাই সোচ্চার কণ্ঠে বলতে চাই গণতন্ত্রের প্রকৃত চর্চায় সাধারণ মানুষের মুক্তি ঘটুক আর বিজয় দিবসের প্রাক্কালে সাধারণ মানুষের কাছে আহবান- যেন নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রত্যেক নাগরিক, ব্যক্তি ও কর্মজীবনে, গণতান্ত্রিক চর্চা সমুন্নত রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ হই।

মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণ করে প্রজ্জ্বলিত এ আলো সত্যের আলো। এ আলো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার শপথকে করুক শক্তিশালী। এ আলো মুছে দিক রাজনীতিতে সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা ও সন্ত্রাসের অশুভ ছায়াকে; গণতন্ত্র নির্মানের প্রক্রিয়াকে আলোকিত করুক।

স্থানঃ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
সময়ঃ বিকাল ৫টা-সন্ধ্যা ৬টা
তারিখঃ শুক্রবার, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪১৩/ ৮ ডিসেম্বর ২০০৬
নারীপক্ষ

নারীপক্ষ
র‌্যাংগস নীলু স্কোয়ার (৫ম তলা), বাড়ী- ৭৫, সড়ক- ৫/এ, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯, বাংলাদেশ
জিপিও বক্স-৭২৩, ঢাকা-১০০০, ফোন : ৮৮০-২-৮১১৯৯১৭, ৮১৫৩৯৬৭, ফ্যাক্স : ৮৮০-২-৮১১৬১৪৮
ই-মেইল : naripokkho@gmail.com, ওয়েব : www.naripokkho.com.bd

Pin It on Pinterest

Share This