ঘোষণাপত্র
প্রতি বছরের মত এবারও বিজয় দিবসকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে নিবেদিত হচ্ছে নারীপক্ষ’র শ্রদ্ধাঞ্জলি ‘আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার’। আজ প্রথমেই আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি নারীপক্ষ’র প্রয়াত সদস্য নাসরীন হককে, যাঁর উদ্যোগ ও কর্মস্পৃহায় ১৯৮৮ সালে এই অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছিল। এই সাথে ২০০৭ সালে ভয়াবহ বন্যা ও প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করছি। এই দুর্গত মানুষের পাশে নারীপক্ষ‘র সদস্য, কর্মী ও সকল সহযোগী সংগঠন তাদের সাধ্যমত সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে গেছে।
আমাদের জাতীয় জীবনে ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ একটি গৌরবময় অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হলেও এর নেপথ্যে রয়েছে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নারী-পুরুষের অধিকার আদায়ের দীর্ঘ সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। পলাশী যুদ্ধের পর ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, রংপুরের কৃষক বিদ্রোহ, সাঁওতাল বিদ্রোহ, ওয়াহাবী-ফরাজী আন্দোলন, সিপাহী বিপ্লব, নীল বিদ্রোহ এবং পরবর্তী কৃষক বিদ্রোহসমূহ, তেভাগা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যূত্থান পেরিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ত্যাগ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ ভূখন্ডের মানুষ প্রথমবারের মতো নিজেদের দ্বারা শাসিত হবার সুযোগ পায়।
আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিকামী নারী-পুরুষের স্বপ্ন ছিল সার্বভৌম রাষ্ট্রের পাশাপাশি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা -যা মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন ও মর্যাদা বৃদ্ধি করবে। অর্থাৎ বৈষম্য, শোষণ, অন্যায্যতা ও অধিকারহীনতা থেকে মুক্তি। রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে এই মুক্তির পথ সূচিত হলেও সেই পথে হাঁটেননি আমাদের পরবর্তী শাসক ও নির্দেশকগণ। তাই ঔপনিবেশিক আমলের সকল অনাচার তো রয়েই গেছে, তার সাথে যুক্ত হয়েছে স্বেচ্ছাচার ও অন্যায়ের সাথে আপোষের মনোবৃত্তি। স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন ওঠে, স্বাধীনতা কি কেবল কিছু সুবিধাভুক্ত শাসকশ্রেণীর বৈঠক বা অবৈধভাবে হবে সম্পদের পাহাড় গড়ার জন্য, নাকি জাতীয় সম্পদের সুষম ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের সর্বস্তরের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি?
স্বাধীনতা লাভের ছত্রিশ বছর পরও এ দেশের নারীরা স্বাধীন হয়নি। পরাধীনতার শৃঙ্খলে সে জড়িয়ে আছে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা বেড়াজালে। নারীমুক্তিসহ মানবাধিকারের প্রতি অযত্ন অবহেলা ও সহমর্মিতার অভাব মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব অনুধাবনের পরিবর্তে আমাদের করেছে দেশপ্রেমহীন ও ইতিহাসবিমুখ। আমাদের প্রশ্ন, স্বাধীনতা কি সমাজ, পরিবার ও রাষ্ট্রে পুরুষের আধিপত্য অটুট রাখার জন্য, নাকি নারীর জন্য মুক্ত জীবন, তার স্বাধীন চলা-ফেরার অধিকার, ঘরে-বাইরে তার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা?
লাখো যোদ্ধার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ। এদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন না ঘটানো গেলে আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধান থেকেই যাবে। তাই এবারে ‘আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার’ অনুষ্ঠানে আমরা সমবেত হয়ে ‘‘স্বাধীনতা তখন, এখন’’ নিয়ে ভাবতে চাই, জানতে চাই এবং প্রশ্ন রাখতে চাই।
হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণ করে একটি করে মোমবাতি জ্বালাবার জন্য নারীপক্ষ প্রত্যককে আহবান জানাচ্ছে। মোমের আলো জ্বলে উঠুক স্বজনদের স্মরণে। মুক্তিযুদ্ধ সম্পন্ন হয়েছে, তবে অপূর্ণ রয়ে গেছে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। এই আলোয় দূর হয়ে যাক মুক্তিকামী মানুষের প্রত্যাশিত মুক্তির পথের প্রতিবন্ধকতা ও জটিলতা। মানুষে মানুষে গড়ে উঠুক সৌহার্দ্য, প্রতিষ্ঠিত হোক নারী-পুরুষের সমান অধিকার।
মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণ করে প্রজ্জ্বলিত এ আলো সত্যের আলো। এ আলো হোক মুক্তির দিশারী। এ আলো মুছে দিক ইতিহাস বিমুখতা ও সকল কুপমন্ডুকতা! এ আলোয় প্রসারিত হোক মুক্ত চিন্তার জগত, জেগে উঠুক সবার মাঝে মমত্ববোধ ও দেশপ্রেম।
স্থান : কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
সময়: বিকাল ৫ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা
তারিখ: ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪১৪/৭ ডিসেম্বর ২০০৭
নারীপক্ষ
র্যাংগস নীলু স্কোয়ার (৫ম তলা), বাড়ী- ৭৫, সড়ক- ৫/এ, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯, বাংলাদেশ
জিপিও বক্স-৭২৩, ঢাকা-১০০০, ফোন : ৮৮০-২-৮১১৯৯১৭, ৮১৫৩৯৬৭, ফ্যাক্স : ৮৮০-২-৮১১৬১৪৮
ই-মেইল : naripokkho@gmail.com, ওয়েব : www.naripokkho.com.bd