Select Page
২০১০-১২-০৮
আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার – ২০১০

মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া কাছের মানুষগুলোর মুখ স্মৃতির মণিকোঠায় এখনও সমুজ্জ্বল। হারিয়ে যাওয়া সেইসব স্বজনদের স্মরণে ১৯৮৮ সাল থেকে প্রতি বছরের মত এবারও বিজয় দিবসের প্রাক্কালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে নারীপক্ষ ‘আলোর স্মরণে কাটুক আঁধার’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ”রাষ্ট্র হবে ইহজাগতিক, সমাজ হবে ধর্মনিরপেক্ষ এবং মানুষ হবে অসাম্প্রদায়িক”।

এক রক্তক্ষয়ী গণসংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। এর নেপথ্যে রয়েছে ধর্ম বর্ণ লিঙ্গ গোষ্ঠী সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলের সম অধিকার আদায়ের দীর্ঘ সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ১৯৭২ সালে গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা এই চারটি সত্মম্ভকে ভিত্তি করে রচিত হয়েছিল বাংলাদেশের সংবিধান। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠী এই সংবিধানে নানা সংযোজন ও বিয়োজন করেছে, যার ফলে আমাদের সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা হয়েছে অমত্মর্ধান।

১৯৮৮ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হলে আমরা আমাদের সামান্য শক্তি নিয়েই রাজপথে মিছিল, আদালতে রীট আবেদন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলাম। সেদিন পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল অনেকেই। কেউ সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে, কেউ ব্যক্তিগত সমর্থন দিয়ে। গড়ে উঠেছিল এক বলিষ্ঠ আন্দোলন যার শ্লোগান ছিল ”যার ধর্ম তার কাছে রাষ্ট্রের কী বলার আছে”। রাষ্ট্র ধর্ম আন্দোলনে যে বিষয়টির প্রতি আমরা বেশী গুরুত্ব দিয়েছি, তা হচ্ছে রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করা। ধর্ম ব্যক্তিগত বিশ্বাস। এই বিশ্বাসকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাখতে হবে ।

ইহজাগতিক রাষ্ট্র বলতে বুঝায়, যে রাষ্ট্র তার সকল রীতি, নীতি, আইন ও আচরণে প্রতিটি নাগরিকের প্রতি সমান ব্যবহার করবে এবং যেখানে সকল ধর্মের, সকল মতের, সকল বিশ্বাসের মানুষের সমান অধিকার থাকবে। রাষ্ট্র ধর্মভিত্তিক কোন বিশেষ সুযোগ সুবিধা প্রদান করবে না। মানুষের ব্যক্তিগত ধর্ম থাকতে পারে কিন্তু প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাষ্ট্রের কোন ধর্ম থাকতে পারে না। আমরা বাংলাদেশকে এমনই একটি ইহজাগতিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই।

নানা ধর্মের, মতের ও সম্প্রদায়ের লোক মিলেমিশে সমাজে বাস করে। এই সামাজিক সম্পর্ক হবে ধর্মনিরপেক্ষ যার ফলশ্রুতিতে সমাজে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজ করবে। আর এইসব কিছুর ধারক ও বাহক হিসেবে মানুষ হবে অসাম্প্রদায়িক। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল মন্ত্রও ছিল এটাই।

আসুন মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মরণে আমরা মোমবাতির আলো জ্বালিয়ে নিজেদের আলোকিত করি, দূর করি ধর্মান্ধতার অন্ধকার। আমাদের প্রত্যাশা, ব্যক্তি লালন করবে অসাম্প্রদায়িক মনোভাব, প্রতিষ্ঠিত হবে একটি  ইহজাগতিক রাষ্ট্র ও বিরাজ করবে ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ব্যবস্থা।

 স্থান: কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

সময়: বিকাল ৫ :০০ থেকে সন্ধ্যা ৬:৩০

তারিখ: বুধবার, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪১৭/৮ ডিসেম্বর ২০১০

নারীপক্ষ

Pin It on Pinterest

Share This